মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫
সর্বশেষ স্থানীয় সংবাদ জাতীয় রাজনীতি আর্ন্তজাতিক সারাদেশ অর্থনীতি খেলা বিনোদন ফ্যাক্টচেক আজকের পত্রিকা প্রযুক্তি চাকরি

নাট্যজন আনোয়ার হোসেনের শব্দেই ঘোর কাটে...

  • আপলোড তারিখঃ ২৬-০২-২০২০ ইং
নাট্যজন আনোয়ার হোসেনের শব্দেই ঘোর কাটে...
অনির্বাণের তিন যুগপূর্তি উৎসবে অরিন্দমের ‘নীল সিন্দুরীয়া’ মঞ্চায়ন হুসাইন মালিক: ‘গাহি সাম্যের গান/যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান/যেখানে মিশেছে হিন্দু বৌদ্ধ মুসলিম ক্রিশ্চান শীর্ষক’ অনির্বাণ-এর তিন যুগপূর্তি উৎসবের পঞ্চম দিনে অর্থাৎ গতকাল মঙ্গলবার বিকেল থেকেই আব্দুল ওদুদ শাহ কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মিল্টন কুমার সাহা ও ইসরাইল হোসেন খান টিটোর প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় দর্শনা অংকুর আদর্শ বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের কবিতা আবৃতি, দেশাত্ববোধক গান, একক অভিনয় ও নৃত্যের তালে তালে মেতে ওঠেন উপস্থিত দর্শকেরা। এরপর সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গার সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর পরিবেশিত গণসংগীতে কিছুক্ষণের জন্য হলেও দর্শকদের গা শিহরে ওঠে। এতো গেল বিকেল আর সন্ধ্যার গল্প। কিন্তু রাতে আরও বড় চমক নিয়ে অপেক্ষা করছিল চুয়াডাঙ্গার সাংস্কৃতিক সংগঠন অরিন্দম, সেটা অডিটরিয়ামে না ঢুকলে বুঝতেই পারতাম না। ঘণ্টার আওয়াজে অডিটরিয়ামে ঢুকেই স্বপন ভাবি (প্রধান সম্পাদকের স্ত্রী রেবেকা সুলতানা ভিভা), শারমিন মালিক রত্না (আমার স্ত্রী), নিজস্ব প্রতিবেদক মেহেরাব্বিন সানভী, রুদ্র রাসেল দর্শনা অফিস প্রধান আওয়াল হোসেন ও ওয়াসিম রয়েলের পাশেই সারিবদ্ধ চেয়ারের একটিতে বসে গেলাম। স্বেচ্ছাসেবক ভাইদের নিষেধ সত্ত্বেও বাদাম আর মাশরুমের চপ চিবুতে চিবুতে নাটক ‘নীল সিন্দুরীয়া’ দেখতে লাগলাম। বাংলার সফল কৃষক বিদ্রোহের মধ্যে নীল বিদ্রোহ সামাজিক গুরুত্বে, ব্যাপকতায়, দৃঢ়তায় ও পরিণতিতে ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ। এই নীল বিদ্রোহই সর্বপ্রথম দেশের গণমানুষের রাজনৈতিক আন্দোলনে সংঘবদ্ধ হতে শিখিয়েছিল। এই নীল বিদ্রোহে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণিসহ শিক্ষক, সাংবাদিক, ভূস্বামী, রায়ত-সবাই ইংরেজ নীলকরদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলেন। এই বিদ্রোহ বাঙালি জাতীয়তাবাদের বীজ বপন করেছিল এবং নীল বিদ্রোহকে কেন্দ্র করেই ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রথম বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এ সংগ্রাম হতে চুয়াডাঙ্গার কৃষকেরাও পিছিয়ে ছিল না। রক্তক্ষয়ী এ সংগ্রাম তৎকালীন ইংরেজ সরকারের টনক নড়িয়ে দেয়। এ সংগ্রাম যেমন ছিল সাফল্য প্রোজ্জ্বল, তেমনি-এর প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। সে সকল অত্যাচার, নির্যাতন, প্রতিবাদ, প্রতিরোধের কিছু বাস্তব ঘটনা প্রবাহ এই নাটকের উপজীব্য বা অবতারণা মাত্র। নাটকটিতে চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের লোকজ উপাদান (সংগীত, নৃত্য, কৃত্য, আচার)-এর সংযুক্তি ঘটানো হয়েছে, উপস্থাপনা রীতিতে কৃত্য এবং লৌকিক আচারের সাথে বর্তমান আধুনিক থিয়েটারের সমন্বয় ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সে সময়ের কৃষকদের বঞ্চনা আর শোষণের সাথে বর্তমানের কৃষকদের অবস্থা ও পরিস্থিতি মিলিয়ে দেখবারও চেষ্টা করা হয়েছে। নির্দিষ্ট কোনো আঙ্গিকে অনুসরণ করা হয়নি বরং প্রযোজনার প্রয়োজনে বৈচিত্রপূর্ণ আঙ্গিকের সমন্বয় ঘটেছে এখানে। কথায় বলে এক নিশ্বাসে পড়ে ফেললাম, নাটক যেহেতু এক নিশ্বাসে পড়া যায় না দেখতে হয়, তাই আমি বলব অরিন্দম-এর সদস্যরা নাটকটি এমনভাবে মঞ্চায়ন করলেন, তাই নড়ন-চড়ন বাদে এক বসাতেই দেখে ফেললাম। নববধূ সত্যবতির জন্য খারাপ লাগছিল বটে, তবে অনির্বাণ থিয়েটারের প্রাণপুরুষ নাট্যজন আনোয়ার হোসেন নাটক শেষে মঞ্চে উঠে মাউথ স্পিকার নিয়ে অনুষ্ঠানের অতিথি দৈনিক সময়ের সমীকরণ-এর প্রধান সম্পাদক নাজমুল হক স্বপন, জীবননগর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আবু মো. আব্দুল লতিফ অমল ও দর্শনা সরকারি কলেজের প্রভাষক আজিজুর রহমানকে যখন দর্শকদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন, তখন মাইকের শব্দে নীল বিদ্রোহ থেকে বেরিয়ে আসি, এককথায় নাট্যজন আনোয়ার হোসেনের শব্দেই ঘোর কাটে। আমার মনে হয়, উপস্থিত দর্শকদেরও আমার মতো একই অবস্থা ছিল। তাঁরাও সদর উদ্দীন আর রইচ খা-কে মনের পর্দায় বার বার মেলাবার চেষ্টা করছিলেন। এ সময় এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নাজমুল হক স্বপন বলেন, নাটক শুধুমাত্র বিনোদন নয়, সমাজ বদলের হাতিয়ারও। তাঁর মন্তব্যের সাথে মঞ্চে থাকা অন্য অতিথিরাও সহমত পোষণ করেন। আর আমি ভাবতে থাকি অন্য কিছু। কারণ বর্তমানে আইন করে সমাজ বদলানো যাচ্ছে না, সেখানে নাটক দিয়ে সমাজ বদল? হতে পারে! জ্ঞানীরা যেটা বলেন, অবশ্যই সেটার তাৎপর্য্যবহ হবে। যাহোক ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি বেশ রাত হয়েছে। তাই আর কালক্ষেপণ না করে বেরিয়ে পড়লাম। গেটেই এসেই দেখি ড্রাইভার অপেক্ষমান, বললাম চলো আজ যায়। সময় হলে আবার অর্নিবাণের অন্য এপিসোডে হাজির হব। শামীম সাগরের নির্দেশনায় নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে ছিলেন বিষহরি (শান্ত), ছায়া (সুমিতা), সদর উদ্দিন (রইচ খা)-আব্দুস সালাম, শেরিফ (আদিল), ম্যাকনেয়ার (মাসুদ), নগেন (বজলু), হারন (সেলিম), হরিরায় (মানিক), মথুরনাথ (ইয়াকুব), দিকপতি/নিমাই (বাপ্পী), রলাই (রনি), অরভিল/নেপাল বিশ্বাস (হারুন), নফর (আলী হোসেন), সত্যবতি/বধূ/নেপালের বউ (তমালিকা), কালু মণ্ডল (অর্জন) ও নাপতেনি (অনুভা পাত্র)। নেপথ্যে নির্মাণে আলী আমেদ মুকুল, নবনির্মাণ- শামীম সাগর, কোরিওগ্রাফি- আব্দুস সালাম সৈকত ও হিরন-উর রশিদ শান্ত, আলোক প্রক্ষেপন-হাসান আলী, সংগীত- হিরন-উর রশিদ শান্ত ও আদির হোসেন, আবহ- তানভীর ইসলাম, মঞ্চ ব্যবস্থাপনা- মোমিন, বিপ্লব, প্রীতম, অমিত, সমন্বয়কারী- সেলিমুল হাবীব সেলিম ও প্রযোজনা অধিকর্তা বজলুর রহমান জোয়ার্দ্দার। মুহম্মদ ইউসুফ হোসেনের গল্প অবলম্বনে নাটকটির নাট্যরূপ দিয়েছেন মোহাম্মদ আলাউদ্দীন। নাটক শেষে অনির্বাণ থিয়েটারের সভাপতি ফজলুল হক, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ও থিয়েটার কর্মী সাজ্জাদ হোসেন অরিন্দম সাংস্কৃতিক সংগঠনের হাতে উৎসব স্মারক ও উৎসব পোস্টার তুলে দিয়ে উৎসবের পঞ্চম দিনটি শেষ করেন। উল্লেখ্য, এবারের উৎসব জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে উৎসর্গ করা হয়েছে। একুশে মেলা ও নাট্য উৎসবের পৃষ্ঠপোষকতা করছে হিসাব লিমিটেড।


কমেন্ট বক্স
notebook

চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গায় যৌথ সভায় জেলা বিএনপির সম্পাদক শরীফুজ্জামান