বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শেষ
- আপলোড তারিখঃ ১৩-০১-২০২০ ইং
আখেরি মোনাজাতে মুসলিম উম্মার শান্তি-ঐক্য কামনা
সমীকরণ প্রতিবেদন:
আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে রোববার শেষ হলো তাবলিগ জামাত আয়োজিত ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। আখেরি মোনাজাতের সময় ‘আমিন, আলস্নাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে তুরাগ তীর মুখতির হয়ে ওঠে। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় লাখ লাখ মুসল্লি আকুতি জানান। মোনাজাত পরিচালনা করেন বাংলাদেশের তাবলিগের প্রধান মারকাজ কাকরাইলের মুরুব্বি হাফেজ মাওলানা জোবায়ের আহমেদ। বেলা ১১টা ৮ মিনিটে আখেরি মোনাজাত শুরু হয়। যে যেখানে দাঁড়িয়ে বা বসেছিলেন সেখান থেকে হাত তোলেন আল্লাহর দরবারে। অনেকে কান্নায় বুক ভাসান। ৩৮ মিনিট ব্যাপী মোনাজাতে মাওলানা জোবায়ের আহমেদ প্রথম ১৮ মিনিট মূলত পবিত্র কোরআনে বর্ণিত দোয়ার আয়াতগুলো উচ্চারণ করেন। শেষ ২০ মিনিট দোয়া করেন বাংলা ভাষায়। মুঠোফোন ও স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের সুবাদে দেশ-বিদেশের আরও লাখ লাখ মানুষ একসঙ্গে হাত তোলেন আলস্নাহর দরবারে। আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে উত্তরা, টঙ্গী, গাজীপুরসহ চারপাশের এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, মার্কেট, বিপণিবিতান, অফিসসহ সবকিছু ছিল বন্ধ।
সকালে বাদ ফজর ইজতেমা ময়দানে মুসলিস্নদের উদ্দেশে হেদায়েতি বয়ান পেশ করেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক। আখেরি মোনাজাতের আগে বিশেষ বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইবরাহিম দেওলা। আর আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এবারের ইজতেমার প্রথম পর্বের সমাপ্তি ঘটে। দিল্লির মাওলানা সা’দ অনুসারীদের নিয়ে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ১৭ জানুয়ারি, শেষ হবে ১৯ জানুয়ারি।
গতকাল রোববার সকালে ইজতেমা ময়দানের চার দিক থেকে লাখ লাখ মুসল্লি হেঁটেই টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমাস্থলে ও আশপাশে পৌঁছেন। সকাল ৯টার আগেই ইজতেমা মাঠের আশপাশ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে মুসল্লিরা মাঠের আশপাশের রাস্তা, অলি-গলি, বিভিন্ন ভবনের ছাদে অবস্থান নেন। ইজতেমাস্থলে পৌঁছাতে না পেরে কয়েক লাখ মানুষ কামারপাড়া সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নেন। রোববার ভোর থেকেই ফজরের নামাজ ও আখেরি মোনাজাতের জন্য পুরানো খবরের কাগজ, পাটি, সিমেন্টের বস্তা ও পলিথিন বিছিয়ে বসে পড়েন। এছাড়া পার্শ্ববর্তী বাসাবাড়ি-কলকারখানা-অফিস-দোকানের ছাদে, যানবাহনের ছাদে ও তুরাগ নদীতে নৌকায় মুসল্লিরা অবস্থান নেন। যে দিকেই চোখ যায় সে দিকেই দেখা যায় শুধু টুপি-পাঞ্জাবি পরা মানুষ। সবাই অপেক্ষায় আছেন কখন শুরু হবে সেই কাক্সিক্ষত আখেরি মোনাজাত। ইজতেমাস্থলের চারপাশের ৩-৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কোথাও তিলধারণের ঠাঁই ছিল না।
মোনাজাতে যা বলা হয়:
হাফেজ মাওলানা জোবায়ের আহমেদ মোনাজাতে বলেন, ‘হে আল্লাহ তুমি তো ক্ষমাশীল, তোমার কাছেই তো আমরা ক্ষমা চাইব। দ্বীনের ওপর আমাদের চলা সহজ করে দাও। হে আল্লাহ, তুমি আমাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যাও। আমরা যেন তোমার সন্তুষ্টি মাফিক চলতে পারি সে তওফিক দাও। দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে আমাদের হেফাজত করো। নবীওয়ালা জিন্দেগি আমাদের নসিব করো। ইজতেমাকে কবুল করো। ইজতেমার আয়োজনে যারা শ্রম দিয়েছেন তাদের কবুল করো। যারা তোমার কাছে হাত তুলেছেন সবাইকে তুমি কবুল করো। ইজতেমার বক্তা ও শ্রোতা সবাইকে তুমি কবুল করো। দাওয়াতে তাবলিগকে বিশ্বব্যাপী প্রসারিত করো। হে আল্লাহ আমাদের ঈমানকে মজবুত করে দাও, আমাদের সবার মাঝে মানবতা বৃদ্ধি করে দাও, হে আল্লাহ আমাদের আখলাক হেফাজত করার তৌফিক দান করো, হে আল্লাহ শয়তানের ধোঁকা থেকে আমাদের হেফাজত করো, হে আল্লাহ আমাদের নবীর সাফায়াত নসীব করো।’
মুসলিস্নদের বাঁধভাঙা জোয়ার:
বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীরা তো ছিলেনই, শুধু আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ছুটে আসতে থাকেন শনিবার থেকেই। বাস, ট্রাক, মিনিবাস, কার, মাইক্রোবাস, ট্রেন, লঞ্চ ও স্টিমারে করে এসে টঙ্গীতে পৌঁছে অবস্থান নিতে শুরু করেন। রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন ভিড় এড়াতে শীত, কুয়াশা ও নানা ঝক্কিঝামেলা উপেক্ষা করে রাতেই টঙ্গীমুখো হন। রাজধানী ঢাকার সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সর্বত্রই ছিল পূর্ণ ছুটির আমেজ। এর আগে গতকাল রোববার ভোর থেকে টঙ্গীমুখী সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় দীর্ঘ পথ হেঁটে টঙ্গী পৌঁছতে হয়েছে লাখ লাখ মানুষকে। কয়েক লাখ মানুষ রাতেই ইজতেমার মাঠ কিংবা আশপাশের বাসাবাড়ি, ভবন, ভবনের ছাদ কিংবা করিডোর, সড়কের পাশে ফুটপাতে এমনকি গাছতলায় অবস্থান নিয়েছেন। সকাল ৮টার মধ্যে গোটা এলাকা জনতার মহাসমুদ্রে পরিণত হয়।
২০২১ সালের বিশ্ব ইজতেমার তারিখ ঘোষণা:
২০২১ সালের বিশ্ব ইজতেমার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার ইজতেমা আয়োজক কমিটির শুরার বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এ তারিখ ঘোষণা করা হয়। ইজতেমার প্রথম পর্বে মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীদের ইজতেমার আখেরি মোনাজাত শেষে মাইকে এ সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করা হয়। ইজতেমার শীর্ষ মুরুব্বি প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চত করে জানান, ২০২১ সালে দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। এর প্রথম ধাপ হবে ৮, ৯ ও ১০ জানুয়ারি এবং দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হবে ১৫, ১৬ ও ১৭ জানুয়ারি। আর জোড় ইজতেমা হবে ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
মোনাজাতে অতিরিক্ত মাইকের ব্যবস্থা:
বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত প্রচারের জন্য গণযোগাযোগ অধিদপ্তর ও গাজীপুর জেলা তথ্য অফিস বিশেষ ব্যবস্থা নেয়। এর মধ্যে গণযোগাযোগ অধিদপ্তর ইজতেমা ময়দান থেকে আবদুল্লাহপুর ও বিমানবন্দর রোড পর্যন্ত এবং গাজীপুর জেলা তথ্য অফিস ইজতেমা ময়দান থেকে চেরাগআলী, টঙ্গী রেলস্টেশন, স্টেশন রোড থেকে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু ও আশপাশের অলিগলিতে পর্যাপ্ত মাইক সংযোগ দেওয়া হয়।
ভিআইপিদের মোনাজাতে অংশগ্রহণ:
বিশ্ব ইজতেমার পুলিশ কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মো. মনজুর রহমান জানান, বিশ্ব ইজতেমায় আগত লাখ লাখ মুসল্লির সঙ্গে ইজতেমা ময়দানে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা উত্তরের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, গাজীপুর মহানগরের পুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন, গাজীপুরের ডিসি এসএম তরিকুল ইসলাম প্রমুখ।
কমেন্ট বক্স