রাতে কম্বল নিয়ে শীতার্তদের দুয়ারে ডিসি
- আপলোড তারিখঃ ১৯-১২-২০১৯ ইং
চুয়াডাঙ্গার বাতাসে হঠাৎ শীতের তীব্রতা : জবুথবু প্রাণীকূল
বিশেষ প্রতিবেদক:
মাঘের শীতে বাঘ পালায় প্রবাদটি বনের রাজার অসহায়ত্বের কথাই জানান দেয়। পৌষের শুরু থেকে জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। শীতে জবুথবু এখন মানুষ, প্রকৃতি ও প্রাণীকূল। চুয়াডাঙ্গায় গত মঙ্গলবার দিনের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর বুধবার রাত পর্যন্ত তা আরও নেমে রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আদ্রতা ৯০ শতাংশ। ফলে এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমেছে প্রায় ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাই কোনো বর্ণনা ছাড়াই বলা যায়, চুয়াডাঙ্গায় হঠাৎ জেঁকে বসেছে শীত। এক লাফে তাপমাত্রা কমে আসায় পৌষের শুরুতেই তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে চুয়াডাঙ্গায়। অথচ পুরো নভেম্বর এবং ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ কেটেছে শীতবিহীন। শেষ রাতের শীতল পরশ আর ভোরের কুয়াশা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে এ অঞ্চলের মানুষদের। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমতে শুরু করলেও সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামেনি। গতকাল বুধবার সকাল থেকে সূর্যের মুখ দেখা গেলেও ঠা-া বাতাসের দাপটে কাবু হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। ঠা-ায় জড়োসড়ো হয়ে পড়েছেন পথের ধারে থাকা ছিন্নমূল মানুষগুলো। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষেরা শীতে কাতর হয়ে পড়েছেন এখনই। আর শীত নিবারণের জন্য কম দামে শীতবস্ত্র কিনতে তাঁরা যাচ্ছেন ফুটপাতের দোকানগুলোতে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, বর্তমানে মৃদু শৈতপ্রবাহ চলছে। আদ্রতা ও হাওয়ার গতিবেগ বেড়েছে। আকাশ মেঘমুক্ত থাকায় কুয়াশা কম। তাই শীতের তীব্রতা বেশি। তবে আগামী সপ্তাহে আকাশ কিছুটা মেঘাচ্ছন্ন হবে, তার সঙ্গে বাড়বে কুয়াশা। তখন শীতের তীব্রতা কিছুটা কমলেও খুব অল্প সময়ের মধ্যে আবারও তীব্র শীত জেঁকে বসবে।
তবে পৌষের শুরুতেই শীত মোকাবিলার কার্যক্রম শুরু করেছে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন। বুধবার দিবাগত রাতে কম্বল নিয়ে শীতার্ত মানুষের মধ্যে যান জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভা-ার থেকে আসা কম্বল দুস্থ ও হতদরিদ্র্য মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেন তিনি। এর আগে রেলওয়ে স্টেশনে ছিন্নমূল মানুষের গায়ে কম্বল জড়িয়ে উষ্ণতা ছড়ান তিনি। মধ্যরাতে কম্বল নিয়ে জেলা প্রশাসকের এমন আগমন বিস্মিত করে রেলস্টেশনে থাকা অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষগুলোকে। এরপর স্টেশন-সংলগ্ন ঘরগুলোর দিকে এগিয়ে যান জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসকের ডাকে অনেকটা খালি গায়ে বের হলেন জমির উদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী। ঘর থেকে বের হয়ে এসে দেখেন, হাসিমুখে কম্বল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন স্বয়ং জেলা প্রশাসক। কৃতজ্ঞতায় চোখ ভারি হয়ে এলো তাঁদের। দুটি কম্বল পেয়ে তাঁরা আনন্দে আত্মহারা। হ্যাঁ, এ শীতে অস্বচ্ছল, হতদরিদ্র, ছিন্নমূল, পথশিশুদের জন্য এই একটি-দুটি কম্বলই তাঁদের একমাত্র সুখের সম্বল। মধ্যরাতের প্রহরে নিজ হাতে রেলস্টেশন, তৎসংলগ্ন এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে দেড় শতাধিক কম্বল বিতরণ করেন জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শীতার্তদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণের সময় নিজের ভেতর ভিন্নরকম ভালো লাগা কাজ করেছে। সবচেয়ে বড় কথা, আমি আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছি। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভা-ার থেকে আসা কম্বল বিতরণ করলাম। এ কার্যক্রম চলমান থাকবে। আশা করি এবার শীতে অসহায়, দুস্থ, হতদরিদ্র্য, ছিন্নমূল, ভাসমান মানুষদের খুব সমস্যা হবে না। প্রয়োজন হলে ভবিষ্যতে আরও কম্বল বিতরণ করা হবে।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ ইয়াহ্ ইয়া খান, নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) সিব্বির আহমেদ, সহকারী কমিশনার আমজাদ হোসেন প্রমুখ।
কমেন্ট বক্স