পাঁচজনকে পেটাল পুলিশ, এএসআই আনিস প্রত্যাহার
- আপলোড তারিখঃ ১৯-১২-২০১৯ ইং
চুয়াডাঙ্গার দোস্তে গরু চুরির পর হাতেনাতে চোর আটক, গরুর মালিকসহ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দোস্ত গ্রামে গরু চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে গরুর মালিকসহ পাঁচজনকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে হিজলগাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশের বিরুদ্ধে। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে দোস্ত গ্রামের বসতিপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় হিজলগাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আনিসকে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম।
গ্রামবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল সাড়ে দশটার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের দোস্ত গ্রামের বসুতিপাড়ার মৃত সোবহান বিশ্বাসের ছেলে হাসিবুলের বাড়ির পেছনের খোয়াড়ে বেঁধে রাখা একটি লাল রঙের গরু চুরি হয়ে যায়। চুরির কিছুক্ষণ পর গ্রামবাসীরা দোস্ত বটতলা বাজার থেকে চোরসহ গরুটি আটক করেন। এরপর গরুর সঙ্গে থাকা গরুচোর দামুড়হুদা উপজেলার হাউলি ইউনিয়নের বড়দুধপাতিলা গ্রামের আওলাদ হেসেনের নাতিছেলে ডনকে আটক করে হাসিবুলের বাড়িতে নিয়ে আসেন গ্রামবাসী। চোর ডন এ সময় জানান, চুরির ঘটনায় তাঁর সঙ্গে জড়িত গরুর মালিকের ভাতিজা বেগমপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর হালিমা খাতুনের ছেলে ইমন। পরে গরুর মালিক নিজের ভাতিজা চুরির সঙ্গে জড়িত থাকায় বিষয়টি পারিবারিকভাবে সমাধান করতে চান। এ সময় পুলিশ চোর ধরতে হাসিবুলের বাড়িতে এলে হাসিবুল পুলিশকে জানান, ‘আমাদের নিজেদের ছেলে ভুল করেছে। বিষয়টি আমরা পারিবারিকভাবে সমাধান করব।’ এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে হাসিবুলের পরিবারের বাগবিত-া সৃষ্টি হয়। চোরকে নিজেদের হেফাজতে নিতে বাধা দেওয়ায় গরু মালিক হাসিবুলের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে বেধড়ক মারধর শুরু করে পুলিশ। এ সময় হাসিবুলকে পুলিশের মারধরের হাত থেকে পরিবারের সদস্যরা ঠেকাতে গেলে পুলিশ তাঁদেরও লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকে। এতে চোর রক্ষা পেলেও গরুর মালিক হাসিবুলসহ পাঁচজন আহত হন। এর মধ্যে গরুর মালিক হাসিবুল, তাঁর স্ত্রী কমেলা খাতুন ও ছেলে সাজুর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁদের চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ বিষয়ে হাসিবুল বলেন, ‘গরুচোর আমার ভাতিজা ইমন, তাই বিষয়টি পারিবারিকভাবে সমাধান করতে চেয়েছিলাম। এ সময় হিজলগাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আনিসসহ চার পুলিশ কনস্টেবল সাদা পোশাকে আমাদের বাড়িতে এসে গরুচোর ডনকে জোরপূর্বক নিয়ে যেতে চাইলে আমাদের সঙ্গে বাগবিত-ার সৃষ্টি হয়। এতে পুলিশ ক্ষিপ্ত হয়ে ঘরের মধ্যে উঠে আমাকে লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকে। আমার স্ত্রী কমেলা খাতুন ঠেকাতে গেলে তাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে আহত করা হয়। পরে আমার দুই ছেলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার সাজু ও সোহেলকে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করে তাঁরা। এ সময় পুলিশ এলাকার জাহিদ হোসেনের ছেলে সোহানকেও পিটিয়ে জখম করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরে পুলিশ আমাকে ও আমার ছোট ছেলে সাজুকে তুলে নিয়ে যায় হিজলগাড়ি পুলিশ ক্যাম্পে। সেখানেও দ্বিতীয় দফায় আমাদের তাঁরা বেধড়ক মারধর করেন। হার্টের সমস্যা থাকায় একপর্যায়ে আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে পুলিশ আমার পরিবারের লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে আমাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।’
এ বিষয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন, হাসিবুলকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি রাখা হয়েছে। তবে তাঁর অবস্থা আশঙ্কামুক্ত।
এ ঘটনায় এলাকাবাসীরা পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এভাবে পুলিশ কাউকে মারতে পারে না, তাও আবার সাদা পোশাকে।
হাসিবুলের বড় ছেলে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার সোহেল বলেন, ‘সকালে দোস্তের বাজারে আমাদের গরু দেখে আমার এক চাচাতো ভাই আমাকে খবর দিলে আমরা গরু উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসি। চুরির ঘটনায় আমাদের এক আত্মীয় জড়িত থাকায় আমরা নিজেরাই বিষয়টি মীমাংসা করছিলাম। হঠাৎ সাদা পোশাকে চার পুলিশ সদস্য এসে কোনো পরিচয় ছাড়ায় কাউকে কিছু না বলে চোরকে নিয়ে যেতে যান। এ সময় আমাদের সঙ্গে তাঁদের একটু তর্ক-বিতর্ক হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এএসআই আনিসসহ চার কনস্টেবল আমাকে ও আমার বাবা, ছোট ভাই সাজু এবং সোহানকে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করে। আমার মাকেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় পুলিশ। এ ছাড়া আমার বাবা ও ছোট ভাইকে ক্যাম্পে তুলি নিয়ে নির্যাতনসহ গুলি করার হুমকি দেয়।’
হিজলগাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আনিস বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গেলে আমাকে কিল-ঘুষি মেরে আহত করে তারা।’ তবে মারধরের বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন তিনি।
দোস্ত গ্রামের ৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার আবু সালেহ প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশের সঙ্গে সামান্য ধাক্কাধাক্কি হয়েছে বলে শুনেছেন তিনি। এ ঘটনায় ৪-৫ জন আহতও হয়েছেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ঘটনাটি শুনেছি, গরুচোর হলো গরুর মালিকের ভাতিজা। এ ঘটনায় চোর ধরার সময় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। এতে এক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। এ সময় পুলিশ সদস্যদের কন্ট্রোলে না রাখতে পারায় এএসআই আনিসকে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।’ এ বিষয়ে আগামীকাল (আজ) সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
কমেন্ট বক্স