শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫
সর্বশেষ স্থানীয় সংবাদ জাতীয় রাজনীতি আর্ন্তজাতিক সারাদেশ অর্থনীতি খেলা বিনোদন ফ্যাক্টচেক আজকের পত্রিকা প্রযুক্তি চাকরি

তিন পুরুষের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় কাইসান

  • আপলোড তারিখঃ ১৭-১০-২০১৯ ইং
তিন পুরুষের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় কাইসান
এসএম শাফায়েত: ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার পর প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন মোজাম্মেল হক। তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলায় প্রথম এমবিবিএস ডাক্তার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর তাঁর বড় ছেলে ডা. আমির খসরুও ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে পড়াশোনা করেন। নিউরো মেডিসিন (এমডি) বিশেষজ্ঞ হিসেবে এখন আমেরিকায় চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত আছেন তিনি। এবার তিন পুরুষের স্বপ্ন ও সাফল্যের ধারাবাহিকতায় নাম লেখালেন ডা. মোজাম্মেল হকের নাতি কাইসান খসরু। এ বছর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধাতালিকায় ৮৮তম স্থান অধিকার করেছেন কাইসান। তাঁর টেস্ট স্কোর ৮০.০৫। তিনি চুয়াডাঙ্গার ফুলকুঁড়ি শিশু বিদ্যালয় থেকে পিএসসি, ভি জে সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। কাইসান খসরু চুয়াডাঙ্গা ইমার্জেন্সি রোডের খসরুবাগের বাসিন্দা নাসির খসরু (ডিউক) ও শিক্ষিকা নাসিমা মরিয়মের একমাত্র পুত্র। ভর্তি পরীক্ষায় গৌরবোজ্জ্বল সাফল্যের গল্প লিখতে গিয়ে কথা হয় কাইসান ও তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে। প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক: মা নাসিমা মরিয়ম পৌর শহরের ইমার্জেন্সি সড়কের ফুলকুঁড়ি শিশু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা। মায়ের হাত ধরেই এ বিদ্যালয়ে পথচলা শুরু হয় কাইসানের। ২০১০ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিএসসি) পরীক্ষায় গোল্ডেন ‘এ’ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি। এরপর জীবনের প্রথম ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে ভি জে সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে শুরু হয় মাধ্যমিক স্তরের পড়াশোনা। ২০১৪ সালে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা দিলে গোল্ডেন ‘এ’ গ্রেডে ফল আসে তাঁর। তবে তাতে আশানুরূপ ফল না পেলেও বৃত্তি পরীক্ষায় জেলার মধ্যে চতুর্থ স্থান অর্জন করে নেন তিনি। এরপর ২০১৭ সালে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় ‘এ’ প্লাস এবং চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে গোল্ডেন ‘এ’ প্লাস পেয়ে ২০১৯ সালে উচ্চমাধ্যমিকের গ-ি পাড়ি দেন তিনি। মেডিকেল ভর্তি প্রস্তুতি: উচ্চমাধ্যমিক বা এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হতেই শুরু করতে হয় মেডিকেল ভর্তি প্রস্তুতি। লক্ষ্য ছিল অটুট। যেখানে তাঁর অন্য সহপাঠী বন্ধু-বান্ধবরা বলেছিলেন, ‘মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা দিতে গেলে পরে ভালো কোথাও ভর্তির সুযোগ থাকবে না।’ তবু দৃঢ় মনোবল ও আত্মবিশ্বাসের ওপর ভরসা করেই কাইসানের এগিয়ে চলা। শুধুমাত্র মেডিকেলে ভর্তির জন্যই ঢাকায় যান তিনি। এরপর ভর্তি পরীক্ষার পূর্ববর্তী চারমাস তাঁকে ঢাকায় থাকতে হয়েছে। দিন-রাত নিয়মিত রুটিন করে ভর্তি-সহায়ক কোচিং, পাঠ্যবইসহ প্রয়োজনীয় সব পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গেই কেটেছে তাঁর ১২০টি দিন। এর মধ্যে প্রতিটি বই একাধিকবার পড়ে শেষ করেছেন কাইসান। পড়া শেষ হলে আবারও প্রথম থেকে শুরু করতেন বলে জানান তিনি। এতে প্রতিবারই নতুন কিছু জানা যায় ও বইয়ের প্রতিটি বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আয়ত্তে আসে। এরপর ১১ অক্টোবর সারা দেশে একযোগে অনুষ্ঠিত হওয়া এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেলের ১০ হাজার ৪০৪টি আসনের বিপরীতে ৬৯ হাজার ৪০৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে তিনিও ছিলেন একজন। কেমন হলো পরীক্ষা: এ প্রশ্নের জবাবে কাইসান জানান, ‘অনেকেই বলেন, মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন কঠিন হয়। কিন্তু আমি বলব, যারা পাঠ্যবই ঠিকমত পড়েন না, এলোমেলোভাবে পড়েন, তাঁদের জন্য একটু কঠিন। তবে পরীক্ষা-সংশ্লিষ্ট পাঠ্যবইয়ের প্রতিটি বিষয় মনযোগ দিয়ে পড়ার কারণে পরীক্ষা দিতে গিয়ে আমাকে বেগ পেতে হয়নি। ৬০ মিনিট সময়ে ১০০টি প্রশ্নের মধ্যে ৯৪টির উত্তর দিতে পেরেছি। প্রাপ্ত টেস্ট স্কোর ৮০.০৫।’ কাইসানের অনুপ্রেরণা ও অনুভূতি: ‘মেডিকেলে ভর্তির অনুপ্রেরণার উৎস্য দাদা ডা. মোজাম্মেল হক ও বড় চাচা ডা. আমির খসরু। তাঁদের এগিয়ে চলার পথটাকেই বেছে নিয়েছি। এ ছাড়া আমার মায়ের নিজেরই ইচ্ছে ছিল ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু তিনি তা না পারলেও আমি চেষ্টা করেছি তাঁর দেখা স্বপ্ন পূরণ করতে। এরপর জীবনের প্রতিটি ধাপে বাবা-মায়ের সহযোগিতা আমার চলার পথকে আরও মসৃণ করেছে। স্কুল ও কলেজ জীবনে ভি জে সরকারি উচ্চবিদ্যালয় এবং চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের স্যাররা, সালাম স্যার ও শাহিন স্যার আমার মেধাবিকাশে সর্বোচ্চ সহায়ক ভূমিকা রেখেছেন। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রেও সালাম স্যারের অবদান রয়েছে। সবমিলিয়ে সবার দোয়া ও সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় আমি আমার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছি। এখন আমি ভালো ডাক্তার হওয়ার আগে ভালো মানুষ হতে চাই। সে জন্য সবার দোয়া চাই। একদিন চিকিৎসক হয়ে মানবতার সেবায় নিজেকে সম্পৃক্ত করব।’ সতীর্থদের উদ্দেশে কাইসানের কিছু কথা: ‘আমি আজ পর্যন্ত স্মার্টফোন ব্যবহার করিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আমার কোনো অ্যাকাউন্ট নেই। বলা চলে ইন্টারনেটের সঙ্গে কোন সংযোগ নেই আমার। যে কারণে আমি শুধু পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পেরেছি। তাই বলব, প্রথমে লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। কে কী বলল-না বলল, তা না শুনে নিজের লক্ষ্য অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে। পরীক্ষার আগের চার মাস শুধু বই ছাড়া আর অন্য কিছুর পেছনে সময় নষ্ট করা যাবে না। বিশেষ করে ইন্টারনেট বা ভার্চুয়াল জগতের বাইরে থাকতে হবে।’ কাইসানের মেডিকেলে ভর্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন মা নাসিমা মরিয়ম। তিনি বলেন, ‘আমার স্বপ্ন ছিল, আমার তিন সন্তানের মধ্যে কেউ না কেউ যেন ঢাকা মেডিকেলে পড়াশোনার সুযোগ পায়। বাবা নাসির খসরু বলেন, ‘তিন পুরুষের স্বপ্ন ও সাফল্যের পথে হাঁটছে আমার ছেলে কাইসান। ওর দাদা ডা. মোজাম্মেল হক ছিলেন ঢাকা মেডিকেলের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী। এরপর বড় চাচা ডা. আমির খসরু ঢাকা মেডিকেল থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে নিউরো মেডিসিন (এমডি) বিশেষজ্ঞ হিসেবে নাগরিকত্বসহ সপরিবারে আমেরিকাতে বসবাস করছেন এবং সেখানেও চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন তিনি। আমার বড় মেয়ে ডা. নাজিয়া পারভীন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে এমবিবিএস শেষ করে বর্তমানে পড়াশোনার পাশাপাশি খুলনায় শ্বশুরবাড়িতে আছে। ছোট মেয়ে হুরাইরা নাসির কুয়েট থেকে বিএসসি ইন সিএসই শেষ করে স্বামীর সঙ্গে স্কলারশিপে আমেরিকাতে অবস্থান করছে। বলা যায়, পারিবারিক এই ধারাবাহিকতার ওপর জোর দিয়েই এবার আমার ছেলে কাইসান ঢাকা মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।’


কমেন্ট বক্স
notebook

বিচারপতির বাসভবন, সুপ্রিমকোর্ট এলাকায় সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা