সমীকরণ ডেস্ক: অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতার ভেতর দিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচন শেষ করতে পারায় শাসকদল আওয়ামী লীগ এখন ফুরফুরে মেজাজে আছে। নির্বাচন কমিশনের দৃঢ় ভূমিকা, স্বচ্ছ কায়দায় ভোটগ্রহণ সর্বোপরি সংঘাতমুক্ত নির্বাচনের মাধ্যমে জয় পেয়ে উচ্ছ্বসিত তারা। একই সঙ্গে এই জয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনের মিশন পূরণে অনুপ্রাণিত হয়ে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে তারা। তাদের বক্তব্য বর্তমান সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু ও অবাধ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর স্বপক্ষে যুক্তি তুলে ধরে খোলামেলা বক্তব্যও দেয়া শুরু করেছেন শাসক দলের শীর্ষ নেতারা। সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার আওয়ামী লীগের বিজয়ের চেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পারাকেই সরকারের বড় অর্জন বলে মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। তাদের ভাষ্য, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ নির্বাচনের উৎকৃষ্ট মডেল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। যে নির্বাচন নিয়ে বিএনপিসহ কোনো রাজনৈতিক দলই কারচুপি বা অনিয়মের অভিযোগ তুলতে পারেনি। এতেই বোঝা যায়, দলীয় সরকারের অধীনেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনও এই কায়দায় হবে। এ ব্যাপারে দলের সভাপতিম-লীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন ফেয়ার (সুষ্ঠু) হয়- তা প্রমাণ হয়ে গেছে। কারণ, নির্বাচনে কারচুপির কথা কেউ বলতে পারে নাই। তাই বিএনপির উচিত, আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকা। মাঠের খেলা ২০১৯ সালেই হবে। আর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছে, নারায়ণগঞ্জে অবাধ ও নিরপেক্ষতার মাধ্যমে একটি সুন্দর নির্বাচন হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনও এরকম হবে। বিএনপি ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে ভুল করেছে। আশা করা যায়, সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে তারা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। যেখানে তাদের অন্য কোনো দাবি দাওয়া থাকবে না। দলের একাধিক সূত্র জানায়, দলীয় প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিপুল ভোটের ব্যবধানের জয় নয়, বরং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ উপায়ে ভোটগ্রহণকেই আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার রসদ হিসেবে ব্যবহার করতে চায় আওয়ামী লীগ। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনকে মডেল হিসেবে তুলে ধরে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার সব বাধা ডিঙাবে তারা। সূত্রটি মনে করে, শীঘ্রই অনুষ্ঠেয় জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না। আবার আওয়ামী লীগ সরকারের গত তিন বছরে অধিকাংশ স্থানীয় নির্বাচনই সম্পন্ন হয়েছে। তাই সহসাই এমন কোনো স্থানীয় নির্বাচন নেই- যার মাধ্যমে ফের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার পরীক্ষা আওয়ামী লীগকে দিতে হবে। তাই নাসিকই হচ্ছে আগামী জাতীয় নির্বাচনের মডেল। এটাকে কাজে লাগিয়েই আগামী জাতীয় নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়ার লক্ষ্য সাংগঠনিক কাজ শুরু করবে দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। তথ্য মতে, দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়- দেশীয় রাজনীতির বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে এমন তথ্যই সবসময় প্রমাণিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, নিজেদের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের কোনো নির্বাচনে এ পর্যন্ত দলীয় সরকার হারার নজিরও পাওয়া যায়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন, পৌরসভা এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও এমন দৃষ্টান্ত উপস্থাপিত হয়েছে। যেসব নির্বাচনের অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রভাব খাটিয়ে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এতে নির্বাচনের প্রতি জনগণের আগ্রহ যেমন কমে গেছে, তেমনি ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নির্দলীয় তত্ত্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবিই বারবার জোরদার হয়েছে। তবে স্থানীয় পর্যায়ের হলেও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন এ ক্ষেত্রে উজ্জ্বল উদাহরণ হবে বলে মনে করছেন সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। প্রশংসা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও। জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ মনে করেন, নাসিক নির্বাচন বার্তা দেয়- আগামী একাদশতম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে। সব রাজনৈতিক দল এতে অংশ নেবে। ভোটাররাও অবাধে আস্থার সঙ্গে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। তিনি বলেন, এই নির্বাচন প্রমাণ করে- ইতিবাচক অর্থেই বাংলাদেশ সব সম্ভবের দেশ। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের দিন পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দেখা যায়- ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ, অবাধ ও নির্বিঘ্নে ভোট প্রদান একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। নির্বাচনে ভোটারদের টার্ন-আউট ছিল চোখে পড়ার মতো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও চমৎকার ভূমিকা পালন করেছে।' ড. কলিমুল্লাহ বলেন, নির্বাচন কমিশন শেষ সময়ে তাদের ইমেজ পলিশ করার জন্য হয়তো তারা এটা করেছে। তারপরও সব মিলিয়ে একটি ভালো নির্বাচন পাওয়া গেছে। আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান বলেন, নাসিক নির্বাচন মধ্যে একটি সম্ভাবনা জাগাল। এই নির্বাচন প্রমাণ করেছে সরকার, রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন কমিশন- এই তিনটি স্টেকহোল্ডার কমিটেড থাকে তাহলে আগামীতে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন সম্ভব। এ ক্ষেত্রে নাসিক নির্বাচন মডেল হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।