ছাত্রী পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা
- আপলোড তারিখঃ ০৮-০৪-২০১৯ ইং
অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে
ফেনীর সোনাগাজীতে আলিম পরীক্ষার্থী এক ছাত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। এই ঘটনার আগেই ওই ছাত্রী মাদরাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন। ওই মামলা তুলে নিতে তার ওপর নানাভাবে চাপ প্রয়োগের একপর্যায়ে এমন পৈশাচিক ঘটনা ঘটে বলে দগ্ধ ছাত্রীর ভাইয়ের অভিযোগ। তবে সোনাগাজী থানার ওসির বরাতে জানা যায়, ঘটনাটি হত্যাচেষ্টা নাকি আত্মহত্যার চেষ্টা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এদিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন তিনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রী নির্যাতন বাংলাদেশে এখন যেন সাধারণ ঘটনা। বিশেষ করে শিক্ষকদের অনেকে অন্যায় সুযোগ নিয়ে ছাত্রীদের ওপর চড়াও হচ্ছেন। পরে ওই ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য হুমকি-ধমকি দিয়ে যান। সোনাগাজীর এ ঘটনায় দেখা গেছে, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী একটি মহল ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নিতে মেয়েটির পরিবারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসছিল। তা মেনে না নেয়ায় তাকে মর্মান্তিক পরিণতি বরণ করতে হলো কি না তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। জানা যায়, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলার পর মেয়েটির পরিবার তার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় ছিল। তাই মেয়েটির ভাই প্রতি পরীক্ষার দিন তাকে সাথে নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে সিটে বসিয়ে দিয়ে আসতেন। গত শনিবার তার ভাইকে পরীক্ষার কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি। সকাল সাড়ে ৯টায় বোনকে নিয়ে মাদরাসায় ঢুকতে গেলে কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে বাধা দেন। ঢুকতে না পেরে কিছুক্ষণ পর এক শিক্ষকের কাছে ফোন করে বোনের খোঁজ নেন তিনি। ওই শিক্ষক এর কিছুক্ষণ পরে ফোন করে জানান, তার গায়ে আগুন দেয়া হয়েছে। দৌড়ে মাদরাসার দিকে গিয়ে ভাই দেখতে পান, তার বোনকে ধরাধরি করে নিয়ে আসছেন কিছু লোক। অ্যাম্বুলেন্সে ওঠার পর মেয়েটি তার গায়ে আগুন দেয়ার ঘটনা বর্ণনা করেন। তিনি জানান, প্রশাসনিক ভবনের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় এক মেয়ে এসে বলেন, ছাদের ওপর তার এক বান্ধবীকে মারধর করা হচ্ছে। ওপরে গিয়ে দেখতে পান সেখানে মুখোশ পরা চারটি মেয়ে অবস্থান করছেন। একটি মেয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার জন্য তাকে শাসান। অভিযোগ মিথ্যা বলে সাক্ষ্য দিতে হুমকি দেন। জবাবে মেয়েটি এমনটি করবেন না বলে জানান। তিনি আরো জানান, সত্য কথা সব সময় বলে যাবেন। এ সময় তিনজন তাকে জাপটে ধরে রাখেন। অন্যজন তার গায়ে কেরোসিন দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। স্থানীয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ডাক্তাররা জানান, তার শরীরের ৭৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। এর মধ্যে ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ পোড়া গভীর। একটি অস্ত্রোপচার করা হয়েছে তার দেহে। অভিযোগ রয়েছে, ২৭ মার্চ মাদরাসার অধ্যক্ষ নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনায় তার মায়ের দায়ের করা মামলায় অধ্যক্ষ এখন কারাগারে। ঘটনার পর অধ্যক্ষের ‘সমর্থক’ কিছু লোক তার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন। অন্য দিকে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অধ্যক্ষের শাস্তি দাবিতে মানববন্ধন করেছে। একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠার পরও সমাজে তার সমর্থনে একটি গোষ্ঠী অবস্থান নিয়েছে। খবরে জানা যায়, ক্ষমতাসীনদের স্থানীয় একটি অংশ ওই শিক্ষকের ওপর থেকে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিতে চাপ দেয়। ঘৃণ্য অপরাধের সমর্থন সমাজের ভেতর থেকে এভাবে যদি আসে তবে তা খুবই উদ্বেগজনক। এ অবস্থায় অন্যায়ের প্রতিকার কিভাবে পাওয়া যাবে? আমরা মনে করি, অবিলম্বে ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত দরকার। অপরাধীর পাশাপাশি যারা এমন অপরাধ ধামাচাপা দিতে ভূমিকা রাখছেন, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
কমেন্ট বক্স