মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫
সর্বশেষ স্থানীয় সংবাদ জাতীয় রাজনীতি আর্ন্তজাতিক সারাদেশ অর্থনীতি খেলা বিনোদন ফ্যাক্টচেক আজকের পত্রিকা প্রযুক্তি চাকরি

পুনর্গঠন নিয়ে বিএনপিতে অসন্তোষ

  • আপলোড তারিখঃ ২৮-০৩-২০১৯ ইং
পুনর্গঠন নিয়ে বিএনপিতে অসন্তোষ
সমীকরণ প্রতিবেদন: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজয়ের পর ঘুরে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে শুরুতেই দল পুনর্গঠনের দিকে নজর দিয়েছে দলটি। কিন্ত পুনর্গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে দলের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। কাউন্সিলের মাধ্যমে অঙ্গ সংগঠনগুলো পুনর্গঠনে জোর দেয়া হয়েছে। প্রস্তুতি কমিটিতেই ১০০ থেকে ১৫০ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। পুরনোদেরই কমিটিতে রাখা হচ্ছে। এসব কমিটি গঠনে অধিকাংশ সিনিয়র নেতার মত নেয়া হয়নি। ফলে তারা অসন্তুষ্ট। এসব কারণে দল আরও গতিহীন হয়ে পড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা শঙ্কা প্রকাশ করেন। দলের হাইকমান্ড জুনের মধ্যে সবগুলো অঙ্গ-সংগঠনের কমিটি পুনর্গঠনের টার্গেট নিয়েছে। ইতিমধ্যে ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, নীলফামাারী ও লালমনিরহাট জেলা ছাড়াও অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মধ্যে মৎস্যজীবী, কৃষক দল, অ্যাব ও ড্যাবের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে দলের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে নানা প্রশ্ন। যে প্রক্রিয়ায় পুনর্গঠন করা হচ্ছে তাতে দলে গতিশীলতা ও নতুন নেতৃত্ব তৈরি হবে বলে মনে করছেন না অধিকাংশ নেতাকর্মী। কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি না করে পুরনো ধারায় পুনর্গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকেই হতাশ ও ক্ষুব্ধ। ৩ মাসের মধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা আদৌও আলোর মুখ দেখবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাদের ধারনা, সেই পুরনো অযোগ্যদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখার উদ্দেশ্যেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সিনিয়র নেতাদের পাশ কাটিয়ে দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে যেসব কমিটি ঘোষণা হয়েছে সে বিষয়ে বেশিরভাগ সিনিয়র নেতাদের মতামত নেয়া হয়নি। অনেকে পত্রিকা পড়ে কমিটি ঘোষণার খবর জানতে পারেন। সিনিয়র নেতাদের অজ্ঞাতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ায় তাদের অনেকে চরম ক্ষুব্ধ। তবে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, দল পুনর্গঠন নিয়ে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা হয়েছিল। তবে যেসব কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে এ ব্যাপারে আমি অবগত নই। আমার মতামতও নেয়া হয়নি। অন্যরা এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, অতীতে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর অনেক ক্ষেত্রেই তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন। দলের হাইকমান্ড বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সরাসরি বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন। আশা করি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তারা নতুন কমিটি উপহার দিতে পারবেন। যদি না পারেন তবে আমরা বসে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব। জানা গেছে, নতুন কমিটি দেয়ার আগে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা ৩ মাসের মধ্যে কাউন্সিল করে নতুন কমিটি ঘোষণা দেবেন। আহ্বায়ক কমিটিতে শীর্ষ পদে যারা থাকবেন, তারা পরের কমিটির শীর্ষ পদে থাকতে পারবেন না। বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে কমিটি দিতে ব্যর্থ হলে আহ্বায়ক কমিটির কার্যকারিতা বাতিল বলে গণ্য হবে। কিন্তু কেন্দ্রের এমন সিদ্ধান্তে তৃণমূলসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। দলটির বেশিরভাগ নেতাকর্মী মনে করেন, অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দলের এ সিদ্ধান্তে আশাবাদী হওয়ার মতো কিছু নেই। আগে প্রতিটি ইউনিটে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর ৩ মাসের মধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু একটি নির্দেশনাও বাস্তবায়ন হয়নি। উল্টো বছরের পর বছর ওই আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলেছে দল। বর্তমানেও বেশ কয়েকটি জেলায় এক অবস্থা বিরাজ করছে। ঢাকা মহানগর কমিটির সাবেক সভাপতি সাদেক হোসেন খোকাকে সরিয়ে মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক ও হাবিব উন নবী খান সোহেলকে সদস্য সচিব করে ২০১৪ সালের ১৮ জুলাই হাইভোল্টেজ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ১ মাসের মধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ৩ বছরেও ঢাকাতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। অবশেষে ঢাকাকে দুই ভাগ করে ২০১৭ সালের জুলাইয়ে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি সাইফুল আলম নীরবকে সভাপতি, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুকে সাধারণ সম্পাদক করে যুবদলের পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ কমিটিকে ১ মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশনা দেয়া হলেও অদ্যাবধি তা হয়নি। ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর শফিউল বারী বাবুকে সভাপতি, আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ও ইয়াসিন আলীকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি ঘোষণা করা হয়। মেয়াদ শেষ হলেও এ কমিটি আর পূর্ণাঙ্গ করতে পারেননি দায়িত্বশীল নেতারা। জানা গেছে, বিএনপিপন্থী পেশাজীবী সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়। ৩ ফেব্রুয়ারি ১৬১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি ঘোষণার পর প্রায় ২ মাস অতিবাহিত হলেও এখনও সম্মেলনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত নয় সংগঠনটি। সূত্র জানায়, বেঁধে দেয়া সময়সীমার মধ্যে কমিটি করতে ব্যর্থ হলে ড্যাবের পক্ষ থেকে আরও সময় চেয়ে আবেদন করা হতে পারে। প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে নির্দিষ্ট সময়ে সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি এমন অজুহাতে তারা সময়ের আবেদন করতে পারেন। ড্যাবকে সময় দেয়া হলে অন্য সংগঠনগুলোও একই অজুহাতে সময় বাড়ানোর আবেদন করতে পারে। তাই সবাই ড্যাবের দিকে তাকিয়ে আছে। ঘোষিত কমিটির সদস্য সংখ্যা নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে। আহ্বায়ক কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি করবে বলে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যা মূলত সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির মতোই। কিন্তু কমিটির সংখ্যা দেখে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের মতে, সাধারণ সম্মেলন প্রস্তুতি বা আহ্বায়ক কমিটির সংখ্যা খুব সীমিত পরিসরে হয়ে থাকে। কিন্তু ঘোষিত কমিটিগুলোতে কয়েকশ’ নেতাকর্মীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ১৫৩ সদস্যবিশিষ্ট কৃষক দলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে একজন আহ্বায়ক ও একজন সদস্য সচিব, ১২ জন যুগ্ম আহ্বায়কসহ ১৩৯ জন সদস্যসহ ১৫৩ সদস্য আছেন। জানতে চাইলে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক বলেন, অভিজ্ঞদের দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে তাদের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে কমিটি করতে না পারলে যেই লাউ সেই কদুই হবে। এতে দলে গতি আসবে না।


কমেন্ট বক্স
notebook

চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গায় যৌথ সভায় জেলা বিএনপির সম্পাদক শরীফুজ্জামান