চুয়াডাঙ্গায় কৃষক সমাবেশে যুক্তরাষ্ট্রের পরিদর্শক সারাহ-ব্রানটলি এসএম শাফায়েত: কৃষিতে আধুনিকতা, আধুনিক কৃষকের সর্বাধিক দেখা মেলে চুয়াডাঙ্গা সদরের কৃষকের মাঠগুলোকে। মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে এখন এ কথা জানেন বর্হিবিশে^র মানুষেরাও। তাই এবার সরাসরি মাঠে এসে প্রযুক্তির ব্যবহার, বহুমুখী চাষাবাদ, কীটনাশক ছাড়া ফসল উৎপাদনসহ নানা পদ্ধতি দেখলেন যুক্তরাষ্ট্রের করনেল বিশ^বিদ্যালয়ের এলায়েন্স ফর সায়েন্স’র পরিচালক ড. সারাহ ইভানজা ও বিল এন্ড মালিন্দা গেটস ফাউন্ডেশনের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মি. ব্রানটলি ব্রাউনিং। পরে এ বিষয়ে তারা স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন এবং পরামর্শ দিয়েছেন। গতকাল বুধবার সকালে চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন এলাকার কৃষি প্রকল্পসহ গাঁড়াবাড়িয়ায় স্থাপিত দেশের একমাত্র কৃষি পাঠাগার ও কৃষক সংগঠনের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন তারা। পরিদর্শন পরবর্তী সংগঠনের সামনের মাঠে ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে ‘ভবিষ্যৎ কৃষি ভাবনা ও আধুনিক কৃষি সম্প্রসারণ উদ্যোগ হিসেবে কৃষি বায়োস্কোপ, কৃষি পাঠাগার ও কৃষক সংগঠনের কার্যক্রম বিষয়ক’ কৃষক সমাবেশে অংশ নেন অতিথিরা। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াশীমুল বারীর সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ড. সারাহ ইভানজা। তিনি বলেন, ‘নতুন যে আবিষ্কারই হোক; সেটা কৃষিতে বা অন্য কোথাও। তার ভালো খারাপ দুটি দিকই থাকতে পারে। এক্ষেত্রে শতভাগ ভালোর নিশ্চয়তা আশা করা যায় না। সেদিক দিয়ে বাংলাদেশের কৃষকেরা নতুন নতুন উদ্ভাবন নিয়ে যেভাবে কাজ করছেন তা সারা বিশে^ মডেল হয়ে দাড়িয়েছে।’ বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মি. ব্রানটলি ব্রাউনিং বলেন, ‘প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতন হলে তা ব্যবহারে যে কোন কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়। সেদিক দিয়ে আপনারা অনেক এগিয়ে গেছেন। আর আপনাদের এ কাজে বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করে তালহা জুবায়েরের ‘কৃষি বায়োস্কোপ’। যার মাধ্যমে আমরা বিশ্বের যে কোন প্রান্তে বসে চুয়াডাঙ্গার প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষির সমস্যা, সমাধান আর সম্ভাবনার কথা জানতে পারি। আপনারাও বেশ উদ্যোমী হয়ে উঠেছেন। সর্বক্ষেত্রে আপনাদের নতুন নতুন উদ্ভাবন আর উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানায়।’ অনেকে বলছেন তারা বিদেশী হলেও আমাদেরই বন্ধু। কারণ তারা উন্নত দেশে থেকেও কৃষি ও কৃষক নিয়ে ভাবেন। প্রসঙ্গত প্রশংসা করলেন সারাহ-ব্রানটলিও- বললেন, ‘আপনাদের এখানে কৃষি কাজে ব্যবহার্য উন্নয়নমুখী যে সমস্ত প্রযুক্তি আমরা দেখলাম তা এক কথায় অসাধারণ। আপনারা নিজেরা প্রযুক্তি ব্যবহারের সাথে সাথে সবার মাঝে যেভাবে ছড়িয়ে দিচ্ছেন সেটা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।’ তারা আরও জানালেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের কাছে খুবই প্রিয় ও বহুল উৎপাদিত বেগুন চাষে প্রচুর পরিমাণে কীটনাশক ব্যবহার করেন কৃষকেরা। এতে অন্য ফসল, মাটি, পানি ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। কিন্তু দেশের কৃষি খাতে জিনপ্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্ভাবিত প্রথম ফসল বিটি বেগুন চাষে কীটনাশকের ব্যবহার অনেক কমে আসবে। উৎপাদন খরচও কমে যাবে অনেকাংশে।’ তাদের মতে এই বেগুন চাষে কীটনাশকের ব্যবহার ৭০ শতাংশ কম হবে। সমাবেশের শুরুতে ‘কৃষি বায়োস্কোপ’র নানা দিক নিয়ে কথা বলেন সদর উপজেলা কৃষি অফিসার তালহা জুবায়ের মাসরুর নিউটন। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যৎ কৃষি ভাবনা, কৃষি সম্প্রসারণ কার্যক্রমকে আরো আধুনিক ও গতিশীল করতে, কৃষি অফিসারদের লাগসই এবং টেকসই উদ্ভাবন কর্মসূচিগুলো কৃষক পর্যায়ে কেমন প্রভাব ফেলছে, কীভাবে এগুলোকে আরো বিস্তৃত করা যায় এসব বিষয় নিয়েই আমাদের কৃষক সমাবেশের আয়োজন।’ উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী আরিফ হোসেন, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার আফরিন বিনতে আজিজ, গাঁড়াবাড়িয়া সমন্বিত কৃষক উন্নয়ন সংঘের সভাপতি আব্দুল কাদের, কৃষক আব্দুল লতিফ।