হরিণাকুন্ডু টিনের পরিবর্তে ৬৩টি পাঁকা ঘর!
- আপলোড তারিখঃ ০৭-০২-২০১৯ ইং
ঝিনাইদহ প্রতিবেদক: ঝিনাইদহে চলছে নির্বাহী কর্মকর্তাদের সততা লড়ায়ের প্রতিযোগীতা। আশ্রয়ন প্রকল্পের টিনের পরিবর্তে বরাদ্দকৃত সম্পূর্ণ অর্থ দিয়ে করে দেওয়া হচ্ছে পাঁকা ঘর। হরিণাকু-ু উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের হাত দিয়ে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছে জেলার ৫ উপজেলায়। প্রকল্পের অর্থ দিয়ে পাঁকা ঘর করে দিচ্ছেন হতদরিদ্রদের। এ মাসেই হস্তান্তর করা হবে হরিণাকু-ু উপঝেলার বরাদ্দকৃত ৬৩টি পাঁকা ঘর।
জানা যায়, ‘জমি আছে ঘর নেই’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশে হতদরিদ্রদের টিন সেডের ঘর নির্মাণ কাজ চলছে। এই প্রকল্পে ঝিনাইদহের হরিণাকু-ু উপজেলায় বরাদ্দ আসে ৬৩টি ঘরের জন্য ৬৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি ঘরের জন্য আসে এক লাখ টাকা।
হরিণাকু-ু উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সরকারিভাবে প্রতিটি ঘরের মাপ দেওয়া হয়েছে সাড়ে ১৬ ফুট লম্বা আর সাড়ে ১০ ফুট আড়। এছাড়া বারান্দা রয়েছে ৫ ফুট। সঙ্গে আছে একটি বাথরুম। ইট দিয়ে পোতা পর্যন্ত করে তার উপর টিনের বেড়া দেওয়ার কথা ছিল। উপরের চালও হবে টিনের। এভাবে ঘরগুলো ওই এক লাখ টাকা ব্যয় করেই নির্মাণ শেষ করতে হবে। হরিণাকু-ু উপজেলার ৬৩টি ঘর করার জন্য সরকারিভাবে নির্দেশ দেয় এবং বাজেট আসে ৬৩ লাখ টাকা। এই নির্দেশ পেয়ে উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তাদের নিয়ে দ্বিধায় পড়েন নির্বাহী কর্মকতা। কিভাবে ঘরগুলো বাস্তবায়ন করা যায়। তারা ভাবতে থাকে ঠিকাদার বা অন্য কারো মাধ্যমে ঘরগুলো তৈরী করলে সব অর্থ ব্যয় করেও ভালো ঘর করা যাবে না আবার এই নি¤œ ঘর নিয়ে জনসাধানের মনে নানা প্রশ্ন উঠে আসবে। এ সময় নকশা অনুযায়ী টিনের ঘর তৈরী করতে তারা স্থানিয় একটি বাজেট করেন। সেখানে দেখতে পাই সচ্ছতার সঙ্গে কাজ করার পরও টিনের ঘর তৈরীতে তাদের ব্যয় হবে ৭৫ থেকে ৮৫ হাজার টাকা। বরাদ্দ এক লাখ টাকার মধ্যে ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা সাশ্রয় হবে। তখন তারা ইটের পাঁকা ঘর তৈরী করতে কত খরচ হবে তার একটা পৃথক বাজেট করেন। সেখানে দেখা যায় স্থান ভেদে এক লাখের দুই তিন হাজার টাকা বেশী খরচ হবে। শহর থেকে গ্রামের দুরত্বের কারনে খরচ কম বেশী হবে। এই বাজেট করার পর তাৎক্ষনিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তারা ঘরগুলো পাঁকা করবে। হতদরিদ্র টিনের পরিবর্তে পাবে পাঁকা ঘর। যা তাদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করবে। কিন্তু মূল নকশার বাইরে এই কাজ। তারপরও পাঁকা ঘর নির্মাণে জোর দেয় এবং উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের পরামর্শ নেন। তারপর শুরু হয়ে যায় তাদের কর্মযজ্ঞ।
কাবাশাহাটিয়া ইউনিয়নের মান্দারতলা গ্রামের মৃত বিশারত আলীর ছেলে আনজের আলী জানান, আমি দিনমজুর। হাজার চেষ্টা করেও পাঁকা ঘরে ঘুমানোর স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব ছিল না। মাত্র ২ শতক জমির উপর বেড়ার ঘরে ছেলে মেয়েকে নিয়ে বসবাস করতাম। এই শীতে বেড়ার ভিতর বাতাশ প্রবেশ করায় ঠিকমতো ঘুমানো যেত ন। আমরা এখন পাঁকা ঘরে ঘুমানোর স্বপ্ন দেখি। মৃত ফজলুর রহমানের স্ত্রী আয়েশা বেগম জানান, মাত্র ৩ শতক জমির উপর চাটউ বেড়ার ঘর ছিল। অটো ব্রিকস্ এর ইট দিয়ে পাঁকা ঘর করে দিচ্ছে সরকার। সেই ঘরে তারা ঘুমাচ্ছেন। যা তাদের কাছে ছিল শুধুই কল্পনা।
হরিণাকু-ু উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, টিন দিয়ে তৈরী ঘরের জন্য যে বাজেট তারা পেয়েছিলেন সেই বাজেটেই সেমি পাঁকা ঘর নির্মাণ করেছেন। আর এটা সম্ভব হয়েছে বরাদ্দ পাওয়া টাকার সঠিক ব্যবহারের কারনে। বাড়তি কোনো বরাদ্দ ছাড়াই অটোব্রিকস্ এর ইট দিয়ে ঘর নির্মাণ হচ্ছে। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে শুরু হয়ে এই কাজ চলতি মাসেই শেষ করতে হবে। উপজেলার পৌরসভাসহ তিনটি ইউনিয়নের ৬৩টি ঘর তৈরী করা হয়েছে। এখন ঘরগুলো ধুয়ে-মুছে ঠিক করা হচ্ছে, এই সপ্তাহের মধ্যেই রং করার কাজও শেষ হবে। যা পেয়ে খুশি হতদরিদ্র পরিবারগুলো।
কমেন্ট বক্স