মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫
সর্বশেষ স্থানীয় সংবাদ জাতীয় রাজনীতি আর্ন্তজাতিক সারাদেশ অর্থনীতি খেলা বিনোদন ফ্যাক্টচেক আজকের পত্রিকা প্রযুক্তি চাকরি

না ফেরার দেশে সৈয়দ আশরাফ : শোকে মুহ্যমান গোটা দেশ

  • আপলোড তারিখঃ ০৪-০১-২০১৯ ইং
না ফেরার দেশে সৈয়দ আশরাফ : শোকে মুহ্যমান গোটা দেশ
রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মহলের শোক : কাল দেশে আনা হবে মরদেহ বিশেষ প্রতিবেদক: মহাবিজয় নিয়ে সর্বত্র আনন্দ, উচ্ছ্বাস। উৎসবমুখর পরিবেশে এমপিদের শপথগ্রহণের পর দেশবাসী উন্মুখ, কারা হচ্ছেন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী। এই উৎসবের মাঝেই পতন ঘটল এক নক্ষত্রের। আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আর নেই। সকলকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে মাত্র ৬৭ বছর বয়সেই চলে গেলেন না ফেরার দেশে। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টায় থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন তিনি (ইন্নালিল্লাহে...........রাজেউন)। গণমানুষের নেতা সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মরদেহ দেশে আনা হবে। মরদেহ দেশে আনার পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন জাতীয় এ নেতা। ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে সৈয়দ আশরাফ থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অসুস্থতার কারণে তিনি গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর সংসদ থেকে ছুটি নেন। দেশে না থেকেও সৈয়দ আশরাফ কিশোরগঞ্জ-১ (কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুর উপজেলা) আসনে সদ্য অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে জয়ী হন। বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নিয়েছেন। তবে শপথ নেয়ার জন্য সময় চেয়ে তাঁর চিঠিটি বৃহস্পতিবারই জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে জমা দেয়া হয়। তবে তাঁর আর শপথ নেয়া হলো না। চলে গেলেন না ফেরার দেশে। রাজনীতিকদের কাছে সৈয়দ আশরাফ দুর্দিনের সঙ্গী হিসেবে পরিচিত। তিনি ছিলেন রাজনীতির শিক্ষক। দুই মেয়াদে দলের সাধারণ সম্পাদক থাকাবস্থায় দলের নেতাদের বলতেন, পার্টিতে নেতা একজন, তিনি শেখ হাসিনা, আমরা সবাই তার কর্মী। আশরাফের ছোট ভাই, দুই বোন ও মেয়ে মরদেহের সঙ্গে আছেন। গত বছরের অক্টোবরে তার স্ত্রী শিলা ইসলাম মারা যান। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এক শোক বার্তায় বলেন, সৈয়দ আশরাফের মৃত্যু বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক অপূরণীয় ক্ষতি। গণতন্ত্র, রাজনীতি ও সমাজ উন্নয়নে তাঁর অবদান মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সঙ্গী সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মতো রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে দেশ ও জাতি আজ শোকে মুহ্যমান। বাংলাদেশের প্রথম সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় চার নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের অত্যন্ত সুযোগ্য পুত্র সৈয়দ আশরাফ ছিলেন পুরোদস্তর সৎ ব্যক্তিত্ব, দক্ষ সংগঠক ও গণমানুষের নেতা। প্রধানমন্ত্রী ১/১১-এর দুঃসময়ে তাঁর বলিষ্ঠ ভূমিকার কথা গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, পানিসম্পদ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, দলের নেতা মাহবুবুল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা শোক প্রকাশ করেছেন। নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং আশরাফের জন্য ভোট চেয়েছিলেন কিশোরগঞ্জবাসীর কাছে। তিনি জেলার নেতাদের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সে বলেছিলেন, ‘যেহেতু এখানে সৈয়দ আশরাফ সাহেব অসুস্থ, সবাই মিলে তার জন্য কাজ করে যাবেন, যেন তিনি নির্বাচনে জয়ী হন। সুস্থ হয়ে তিনি যেন আমাদের মাঝে ফিরে আসেন এই দোয়া করছি।’ বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে আশরাফ ২০০৭ সালে জরুরী অবস্থার মধ্যে শেখ হাসিনা গ্রেফতার হওয়ার পর দলের হাল ধরেন। দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে তিনি সক্ষম হয়েছিলেন। ওই বিশ্বস্ততার পুরস্কার হিসেবে পরে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন তিনি। ২০১৭ সালে স্ত্রী শিলা আহমেদের মৃত্যুর পর থেকে নিজেও অসুস্থ ছিলেন আশরাফ। একমাত্র মেয়ের সঙ্গে লন্ডনেই বেশি সময় কাটাতেন। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারিতে ময়মনসিংহ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমএ ডিগ্রী লাভ করেন। পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী। পারিবারিক ঐতিহ্যের সূত্র ধরে তিনি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে পিতা সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ জাতীয় চার নেতার নির্মম হত্যাকান্ডের পর তিনি যুক্তরাজ্য চলে যান। প্রবাস জীবনে তিনি যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে বরাবরই শেখ হাসিনার পাশে ছিলেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি ১৯৯৬ সালে দেশে ফিরে আসেন এবং কিশোরগঞ্জ সদর আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় তিনি নির্বাচিত হন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালের ১৬ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি এলাকায় বিভিন্ন সমাজসেবামূলক ও উন্নয়ন কর্মকান্ড জড়িত ছিলেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সংসদ থেকেও ৯০ দিনের জন্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছুটি নিয়েছিলেন। ব্যাংককের হাসপাতালে থেকেই করা ওই আবেদনে আশরাফ বলেছিলেন, তিনি ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন ইউনিটে’ ভর্তি রয়েছেন। তাঁর চিকিৎসায় আরও অনেকদিন সময় লাগবে। তাঁর চার মাসের মধ্যে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন এই রাজনীতিক। এবার নিয়ে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।


কমেন্ট বক্স
notebook

দেশের কোনো নাগরিকেরই এখন দুটি এনআইডি কার্ড নেই: ডিজি