সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছেই; মৃত্যুর বিভীষিকা থামাতে হবে
- আপলোড তারিখঃ ২০-০৬-২০১৮ ইং
প্রতিদিনই দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে কেউ না কেউ। দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলো একেকটি মৃত্যুফাঁদে পরিণত হওয়ার সংবাদও প্রকাশিত হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। সন্দেহ নেই আধুনিক যুগ আমাদের গতি দিয়েছে। ইঞ্জিন আবিষ্কারের পর থেকে ভূ-উপরিতল, নদী-সাগর অথবা আকাশ সবখানেই গতিময় চলাফেরা আজ। দেশের আনাচে-কানাচে নির্মিত নতুন নতুন রাস্তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মোটরযান। সেই সঙ্গে বাড়ছে জনসংখ্যা। প্রয়োজনের তাগিদেই আমরা নিত্যদিন যাতায়াত করছি এখানে-ওখানে। আর মিডিয়ার কল্যাণে আমরা মুহূর্তেই জানতে পারছি দুর্ঘটনার খবর। অন্তরআত্মা কেঁপে উঠছে নিহতের সংখ্যা দেখে এবং এর কয়েকগুণ বেশি আহতের সংবাদে। মৃতের স্বজনরা দৌড়ে যাচ্ছেন ঘটনাস্থলে, তাদের মাতম আর আর্তনাদে কেঁপে উঠছে আকাশ-বাতাস। আমরা বিবেকবানরা আঁতকে উঠছি অকাল মৃত্যু-পঙ্গুত্ববরণের বহুমাত্রিক চিত্রে; হরহামেশাই দেখছি দুর্ঘটনার দানবীয় ধ্বংসচিত্র। বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ঈদের ছুটিতে চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহসহ অন্তত ২৫টি জেলা-উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরে গেছে ৫৩ জন এবং আহত হয়েছেন শতাধিক। সড়কে প্রতিনিয়ত এরকম প্রাণহানি মর্মান্তিক ও অনাকাক্ষিত।
সড়ক দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। নিরাপদ সড়কের দাবিতে সামাজিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া সংগঠন 'নিরাপদ সড়ক চাই'র (নিসচা) তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময়ে প্রতি বছরই গড়ে ২ হাজারের ওপরে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। এসব দুর্ঘটনায় বছরে গড়ে ৫ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হচ্ছেন। সংখ্যা যাই হোক, সড়কে মৃত্যুর মিছিল যে থামানো যাচ্ছে না, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (এআরআই) গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৩ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনের বেপরোয়া গতি; কিন্তু গতি নিয়ন্ত্রণ, মহাসড়কে ছোট যানবাহন বন্ধ ও বেপরোয়া যানবাহন চলাচল বন্ধে সাফল্য নেই। এখনো দেশের সড়ক-মহাসড়কে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে ১০ লাখ নছিমন-করিমন-ইজিবাইক। অবাধে আমদানি হচ্ছে অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক। দেশব্যাপী অন্তত ৫ লাখ ফিটনেসবিহীন বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, হিউম্যান হলার অবাধে চলছে। নিবন্ধনবিহীন কয়েক লাখ অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে সড়ক-মহাসড়কে। এসব যানবাহন সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান উৎস। দুর্ঘটনায় দায়ীদের শাস্তির নজিরও তেমন নেই। যার ফলে চালকরা ইচ্ছামতো গাড়ি চালান। হাইরিস্ক নিয়ে ওভারটেক করেন। এছাড়া চালকদের প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে, যা সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। দুর্ঘটনার জন্য যা-ই দায়ী হোক না কেন, দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কঠোর হওয়াই বাঞ্ছনীয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে ঝুঁকিপূর্ণ-অনিরাপদ সড়ক আছে বলেই মানুষ দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে নতুবা পঙ্গুত্ববরণ করছে। সড়ক সংস্কারের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার পরও ভাঙা সড়কের গর্ত বালু দ্বারা ভর্তি করা হয়। বৃষ্টির ফলে সেসব বালু সরে গিয়ে সড়ক তার পুরনো অবস্থায় ফিরে যায়। আমরা মনে করি, পরিবারকে ঝুঁকিহীন রাখা যেমন অভিভাবকের দায়িত্ব, তেমনি দেশের মানুষকে সড়ক দুর্ঘটনার বিভীষিকা থেকে রক্ষার দায়িত্বও সরকার অস্বীকার করতে পারে না। দুর্ঘটনা কেন ঘটছে? সড়কের বেহাল দশা নাকি গাড়ি চালকদের নিয়ন্ত্রণহীনভাবে গাড়ি চালনা এ জন্য বেশি দায়ী? এটা নির্ণয় সাপেক্ষেই সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া। দেশের ট্রাফিকব্যবস্থা অনেকটাই দুর্বল, এ বাস্তবতা অস্বীকারের সুযোগ নেই। আবার জাতিসংঘ ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়কে 'সড়ক নিরাপত্তা দশক' হিসেবে ঘোষণা করে এটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাতে (এসডিজি) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিশ্বের বহু দেশে সড়ক নিরাপত্তায় দৃশ্যমান অগ্রগতি হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। এ পরিস্থিতি অত্যন্ত পরিতাপের।
আমরা সড়ক নিরাপত্তায় সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দেখতে চাই। প্রত্যাশা থাকবে, সংশ্লিষ্টরা এমন পরিকল্পনা গ্রহণ করবে, যাতে সড়কে মৃত্যুর বিভীষিকা আর দেখতে না হয়।
কমেন্ট বক্স