পণ্যেমূল্য কমান
- আপলোড তারিখঃ ২১-০৫-২০১৮ ইং
যথারীতি কথা রাখেননি ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে পবিত্র রমজানে নিত্যপণ্যের দাম না বাড়ানো অন্তত সহনশীল রাখার যে অঙ্গীকার তারা করেছিলেন, তার থেকে সরে গেছেন বহুদূর। রোজা শুরু হতে না হতেই পাইকারি ও খুচরা বাজারে প্রায় প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে হু হু করে। ফলে ধনী ও সচ্ছলদের কিছু না হলেও দরিদ্র , নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অথচ বাজারে প্রায় প্রতিটি পণ্যের সরবরাহ প্রচুর। চট্টগ্রাম বন্দরেও মজুদ পড়ে আছে প্রচুর পণ্যদ্রব্য। আন্তর্জাতিক বাজারেও প্রায় প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম বর্তমানে কম। সে অবস্থায় ৫৫ টাকায় প্রতি কেজি আমদানিকৃত ছোলার দাম ৭৫ টাকা, ২৭ টাকার পেঁয়াজ ৪৫ টাকা, ৪০ টাকার চিনি ৬২ টাকায় বিক্রি হওয়ার আদৌ কোন কারণ নেই। এর ওপর আছে মাছ-মাংস, ডিম-দুধসহ শাকসবজি, তরিতরকারির দাম। পাইকারি বাজারে কেনা ৩৫ টাকার বেগুন খুচরা বাজারে ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হবে তা আমাদের বোধগম্য নয়। এর ওপর রয়েছে ভেজাল, ওজনে কম ও কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির পাঁয়তারা। টিসিবিসহ সরকারী কয়েকটি সংস্থা পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কাজ করলেও বাজারে এর তেমন প্রভাব নেই। বাজারে প্রায় প্রতিটি ভোগ্যপণ্যের দামে উত্তাপ ও উল্লম্ফন লক্ষ্য করে সহজেই প্রতীয়মান হয় যে রমজান চলছে। রোজাদারদের প্রায় জিম্মি করে নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছেন সব আমদানিকারক, প্রস্তুতকারকসহ পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। একই চিত্র লক্ষ্য করা যায় প্রতিবছরই রমজান, ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ-উল-আযহার শুরু থেকেই। দাম বাড়ানোর জন্য সংস্কারের নামে চিনির কারখানা বন্ধ করে দেয়ারও খবর আছে। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে ভোগ্যপণ্যের দাম কমতির দিকে। সে অবস্থায় দেশে প্রায় প্রতিটি ভোগ্যপণ্যে দাম বাড়ানোর বিষয়টি ব্যবসায়ীদের কারসাজি ছাড়া কিছু নয়। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, গম, ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, গুঁড়াদুধ, ছোলা, লবণ ইত্যাদির দাম কমলেও দেশে বাড়ছে এসব নিত্যপণ্যের দাম। এর একটি আপাত কারণ হতে পারে রমজান। এ নিয়ে নানা কারসাজি ব্যবসায়ীরা করে থাকে প্রতিবছরই। দাম বাড়ার জন্য ব্যবসায়ীরা একেক সময় একেক অজুহাত দিচ্ছেন। কখনও বলছেন, আকস্মিক মৌসুমী ঝড়-বজ্র ও বৃষ্টিপাত, কখনও বলছেন চাহিদা বেশি, যোগান কম ইত্যাদি। প্রভাব পড়েছে শাকসবজির বাজারেও। তবে সর্বাধিক উল্লম্ফন পরিলক্ষিত হচ্ছে মুরগি, গরু ও খাসির মাংসের দামে। সিন্ডিকেট তথা মুুষ্টিমেয় ব্যবসায়ী চক্রের বাজারে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ও মুনাফা লুটে নেয়ার কথা প্রায়ই উচ্চারিত হয়। ভোক্তা ও ক্রেতা স্বার্থ একরকম উপেক্ষিত ও অনালোচিত থাকছে। ব্যবসাবাণিজ্যে লাভ-ক্ষতি-মুনাফা ইত্যাদি থাকবেই। তবে এ সবই হতে হবে নীতি-নেতিকতা, সততা ও নিয়মকানুনের আওতায়, যে ক্ষেত্রে আমাদের ঘাটতি রয়েছে বহুলাংশে। সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এক্ষেত্রে কঠোর মনোভাব নিয়ে অগ্রসর হতে হবে বাজার মনিটরিং ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে।
কমেন্ট বক্স