ছবির ক্যাপশন:
বাংলাদেশ সরকার শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়নে নানা উদ্যোগ নিলেও তার ছোঁয়া যেন এখনো পৌঁছায়নি ঠাকুরপুর-পীরপুরকুল্লা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অদম্য প্রচেষ্টায় অবকাঠামোগত সংকট, শ্রেণিকক্ষের স্বল্পতা ও মৌলিক সুবিধার অভাবে বহুদিন ধরে টিকে আছে বিদ্যালয়টি। দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ুলগাছি ইউনিয়নের অন্তর্গত এই বিদ্যালয়টি ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার সময় তিন কক্ষবিশিষ্ট একটি ছোট ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ ২৮ বছর, কিন্তু আজও বিদ্যালয়ে আর কোনো নতুন ভবন নির্মাণ হয়নি।
বর্তমানে একই ভবনের তিনটি শ্রেণিকক্ষেই ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান চলে। প্রতিদিন গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীদের বসে ক্লাস করতে হয়। ফলে শিক্ষার্থীদের মানুষিক মনোবলকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে। এছাড়াও বিদ্যালয়ের চারপাশে পর্যাপ্ত জায়গা থাকা সত্ত্বেও আধুনিক ভবন নির্মাণের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে জানালেন স্থানীয়রা। এছাড়াও বিদ্যালয়টিতে গড়ে ওঠেনি শহিদ মিনার। ফলে শিক্ষার্থীরা ফুল দিয়ে শহিদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাতে পারে না। শুধুমাত্র জাতীয় পতাকা তুলে দায়িত্ব পালন করেন। একটি স্কুলে শহিদ মিনার থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এটি শিক্ষার্থীদের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, দেশপ্রেম এবং শহিদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এটি একটি স্মারক হিসেবে কাজ করে যা নতুন প্রজন্মকে ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট বুঝতে এবং জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে সাহায্য করে। বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের জন্য নেই আলাদা কমনরুম, এমনকি জরুরি প্রয়োজনে নেই বিশ্রামের ব্যবস্থা। তবুও প্রতিদিন সকালেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আশায় বুক বেঁধে আসে স্কুলে।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল হামিদ বলেন, ‘বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। কিন্তু শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা না বাড়ায় ক্লাস নিতে আমরা মারাত্মক সমস্যায় পড়ছি। কখনো কখনো এক ঘরে দুই শ্রেণির পাঠদান চালাতে হয়। এতে শিক্ষার মান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’ আরেক শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখনো কোনো আধুনিক ভবন হয়নি। মেয়েদের জন্য আলাদা কমনরুম না থাকায় তারা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে। নতুন ভবন নির্মাণ এখন সময়ের দাবি।’ এছাড়াও তিনি স্কুলে একটি শহিদ মিনার তৈরির দাবি জানিয়েছেন।
নবম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া বলে, ‘আমাদের কোনো কমনরুম নেই। মেয়েদের জন্য আলাদা জায়গা দরকার। প্রয়োজনে বাইরে যেতে হয়, এতে অস্বস্তি লাগে।’ দশম শ্রেণির ছাত্র রবিউল বলেন, ‘বৃষ্টির সময় আমাদের বিদ্যালয়ের আসার রাস্তাটি পানিতে ডুবে যায়। মুষল ধারে বৃষ্টি হলে আমরা বিদ্যালয়ে আসতে পারি না। অনেক কষ্টে বৃষ্টিতে ভিজে আমরা ক্লাস করি। আমাদের একটাই আশা একদিন নতুন ভবনে পড়তে পারবো। আমাদের সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান হবে।’
এ বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আ. হাকিম বলেন, ‘আমরা বিদ্যালয়ের মেয়েদের কমনরুম ও নতুন বিল্ডিং নির্মাণের বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে জানিয়েছি। এছাড়া কুড়ুলগাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন সাহেবকেও বিষয়টি অবহিত করেছি। তিনি বিদ্যালয়ের উন্নয়নে একটি বরাদ্দ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’
