ছবির ক্যাপশন:
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ সোনালী ব্যাংক শাখা থেকে নাবালক সৎ ভাই-বোনের সম্পত্তি বন্ধক রেখে প্রায় এক কোটি টাকার ঋণ উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে সৎ বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে। আবার দুদকের গণশুনানিতে অভিযোগ দেয়ায় ওই ভুক্তভোগী পরিবারকেই মারধর করা হয়েছে। দেয়া হচ্ছে প্রাণনাশের হুমকি। ভুক্তভোগী মোছা. হালিমা আক্তার মিতু (২০) ও সাকিব হাসান মাসুম (১৯) আপন ভাই-বোন। তাদের পিতা মৃত আবু জাফর আলী এবং মা বিথি আক্তার স্বপ্না, যিনি আবু জাফরের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। মৃত জাফরের প্রথম পক্ষের সন্তান রাকিব এই দুই নাবালক সৎ ভাই-বোনের জন্মসনদ জাল করে তাদের নাম ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ।
অভিযোগে বলা হয়েছে, মৃত আবু জাফরের প্রথম পক্ষের সন্তান মো. সিকদার হাসান রাকিব (৩১) পিতার রেখে যাওয়া তিনটি জমি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে ৯৮ লাখ টাকার ঋণ নেন। ঋণ নেয়ার সময় পিতার দ্বিতীয় পক্ষের নাবালক দুই সন্তানকে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে জামিনদার করা হয়। ঋণ নথিতে মিতুর জন্ম সাল দেখানো হয়েছে ২০০১ এবং মাসুমের ২০০২ সাল। অথচ তাদের মা বিথি আক্তারের বিয়ে হয়েছিল ২০০৫ সালে। ফলে জন্মসনদের তথ্য স্পষ্টতই জাল। ঋণ নেওয়া হয় ২০২২ সালে, যখন মিতু ও মাসুম দুজনেই নাবালক ছিলেন।
বিথি আক্তার স্বপ্না জানান, ‘রাকিব কিছু কাগজে সই নিতে এসেছিল। বলেছিল- এটা নাকি ডিপিএসের কাগজ, ছেলে-মেয়েদের নামে কিছু টাকা জমা হবে। পরে জানতে পারি এগুলো ঋণের কাগজ। আমাদের না জানিয়ে প্রতারণা করে এ ঋণ নেওয়া হয়েছে।’ বিথি আক্তার আরও বলেন, ‘আমরা পারিবারিকভাবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। পরে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করি। থানায় সমাধান না পেলে আদালতে মামলা করি। মামলাটি এখনো বিচারাধীন। এরপর থেকে অভিযুক্ত রাকিবের ফুফাতো ভাই চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শংরচন্দ্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিবুল আলম সুজন বারবার আমাদের মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। চেয়ারম্যান সুজন একাধিকবার ফোনে ও সরাসরি ডেকে আমাদের ভয় দেখিয়েছেন, মামলা তুলতে বলেছেন। রাজি না হওয়ায় এখন আমাদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’
আইনের আশ্রয় নিতে না পেরে বিথি আক্তার ও তার দুই সন্তান দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দাখিল করেন। গত ২৭ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সাহিত্য মঞ্চে দুদক আয়োজিত গণশুনানিতে তারা এ অভিযোগ তোলেন। ভুক্তভোগী পরিবার গণশুনানিতে জানান, কীভাবে তাদের নাবালক সন্তানদের নামে ভুয়া জন্মসনদ তৈরি করে তাদের জামিনদার বানানো হয়েছে এবং স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এ ঘটনায় প্রভাব খাটাচ্ছেন। গণশুনানিতে দুদক কর্মকর্তারা লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করে তদন্তের আশ্বাস দেন।
কিন্তু গণশুনানির পরদিনই অভিযোগ অনুযায়ী চেয়ারম্যান সুজনের অনুসারী একদল লোক অভিযুক্ত রাকিবের নেতৃত্বে ভুক্তভোগী পরিবারের বাড়িতে গিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় বাড়ির জিনিসপত্র ভাঙচুর করা হয় এবং পরিবারের সদস্যদের বেধড়ক মারধর করা হয়। হামলায় আহত হন মিতু, তার ভাই মাসুম, মা বিথি আক্তার স্বপ্না ও মিতুর স্বামী। তাদেরকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগে উল্লেখ আছে।
পরে ভুক্তভোগীরা চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় আবারও একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। বিথি আক্তার স্বপ্না বলেন, ‘দুদকের গণশুনানিতে বিষয়টি তোলার পরদিনই আমাদের বাড়িতে হামলা হয়। ওরা বলে, মামলা তুলে না নিলে আমাদের মারবে। আমরা এখন চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি।’
এ বিষয়ে জানতে শংকরচন্দ্র ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিবুল আলম সুজন ও অভিযুক্ত সিকদার রাকিব হাসান মানিকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খালেদুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
