ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

জীবননগরের দৌলৎগঞ্জ-মাঝদিয়া স্থলবন্দরে আমদানি-রফতানির অপেক্ষায় ব্যবসায়ীরা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৭:৫০:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭
  • / ১০২৯ বার পড়া হয়েছে

উদ্বোধনের ৪ বছর পরেও শুরু হয়নি বন্দরের কার্যক্রম : দ্রুত চালুর দাবিতে নানা কর্মসুচিতে সর্বস্তরের মানুষ

জাহিদ বাবু/মিঠুন মাহমুদ: চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার দৌলৎগঞ্জ-মাঝদিয়া স্থলরবন্দরটি উদ্বোধনের ৪ বছর পার হলেও এখনও পর্যন্ত কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় হতাশ ব্যবসায়ীরা। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে ২০১৩ সালের ২৪ আগস্ট নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান দৌলতগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এ স্থলবন্দরের কার্যক্রম চালু করা হয়নি। অথচ দেশের অন্যান্য স্থলবন্দরের তুলনায় পণ্য আমদানি ও রপ্তানিতে এটি সুবিধাজনক। এদিকে, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার দৌলতগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দর চালু না হওয়ায় মানববন্ধন করেছে জীবননগর উপজেলা শহরের সর্বস্তরের মানুষ। গত সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে উপজেলা শহরের বাসস্ট্যান্ডের গোল চত্বরে এই মানববন্ধন হয়। মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, স্থলবন্দরের সকল অবকাঠামোগত উন্নয়ন ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বন্দর চালুর আশায় শতশত ব্যবসায়ী বাংলাদেশি অংশে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে অনিশ্চিতার প্রহর গুনছেন। অচিরেই দৌলতগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দরটি দ্রুত চালুর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় লোকজন।
জীবননগরের দৌলৎগঞ্জ-মাঝদিয়া স্থলবন্দরটি ১৯৫৪ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত শুল্ক স্টেশন হিসেবে চালু ছিল। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কারণে শুল্ক স্টেশনটি বন্ধ হয়ে যায়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে শুল্ক স্টেশনটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশে পুনরায় চালু হয়। ১৯৯৪ সালের ৩ই নভেম্বর এসআর ও ১৩৬-আইন/৯৪/১৫৬৮ শুল্ক নম্বর প্রজ্ঞাপন মোতাবেক সকল প্রকার পণ্য আমদানী-রপ্তানীর আদেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ১৯৯৫ সালে শুল্ক স্টেশনটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। ২০০৯ সালের ১১জুন এক প্রঙ্গাপন নং ২৬২/২০০৮/শুল্ক এর মাধ্যমে সকল প্রকার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে ১৯টি পণ্য আমদানীর অনুমতি প্রদান করেন। উল্লেখ্য, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত ২০০৯ সালের শুল্ক এসআর ও বুকলেট মোতাবেক এ বন্দরের অবস্থান দেশের মধ্যে ২৭তম বাংলাদেম সরকার ২০১৩ সালের ৩১ জুলাই দৌলৎগঞ্জ-মাঝদিয়া শুল্ক স্টেশনটিকে পুর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর ঘোষনা করে গেজেট প্রকাশ করে। বন্দরের যোগাযোগ ও সুবিধাসমূহ: প্রস্তাবিত দৌলৎগঞ্জ-মাঝদিয়া স্থলবন্দর এলাকায় বর্তমান শুল্ক স্টেশন এলাকায় সড়ক ও অবকাঠামো বিদ্যমান রয়েছে। জীবননগর উপজেলা থেকে ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলা দিয়ে চলে যাওয়া জাতীয় সড়কের দুরত্ব মাত্র ৩৩কি.মি.। যে কারণে এখান থেকে দেশের যে কোন স্থানে দ্রুততম সময়ে যাতায়াত সম্ভব। দৌলৎগঞ্জ-মাঝদিয়া স্থলবন্দর জীবননগর উপজেলা সদর থেকে মাত্র ০৭ কি.মি. দুরে অবস্থিত। এখান থেকে ঢাকার দুরত্ব মাত্র ২৪০ কি.মি. এবং যাতায়াতে সময় লাগে মাত্র ৫ ঘন্টা। অপরদিকে, জিরো পয়েন্ট থেকে ভারতীয় অংশের টুঙ্গি হয়ে কৃষনগর ভায়া নবদ্বীপ ৩৪ নং জাতীয় মহাসড়ক খোন থেকে ভারতের সকল স্থানে যাতায়াত করা যায়। ঐ স্থান থেকে সোনা মসজিদ স্থলবন্দরের দুরত্ব ৪শ কি.মি. বেনাপোল স্থলবন্দরের দুরত্ব ১শ৭২ কি. মি. সেখানে উদ্বোধনকৃত দৌলৎগঞ্জ স্থলবন্দর থেকে মাঝদিয়া-কলকাতা রেলস্টেশন মাত্র সাড়ে ৪কি.মি. দুরে অবস্থিত। বর্তমান টু-ওয়ে সড়কের খুব সহজেই ফোর-ওয়ে সড়কে রুপান্তর করা সম্ভব। এখানে সড়ক যোগাযোগের পাশাপাশি রেল যোগাযোগের সুবিধাও রয়েছে। সর্বদিক দিয়ে বিচেনা করলে পচনশীল খাদ্যদ্রব্যসহ আমদানকৃত সকল প্রকার পণ্য অত্যন্ত দ্রততম সময়ের মধ্যে জীবননগর থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। ফলে এই বন্দর দিয়ে মালামাল আমদানী এবং রপ্তানী খরচ সাশ্রয় হবে ঠিক তেমনি দেশের বিভিন্ন অঞ্জলে কম দামে পণ্য সরবরাহ করা যাবে। তা ছাড়াও এ বন্দর পরিদর্শনকালে নিটল-টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআই’র সভাপতি আ. মাতলুব আহম্মেদ বলেন, এ বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি করলে প্রতি গাড়িতে তার ১২লিটার তেল সাশ্রয় হবে। ফলে তিনি ব্যাপকভাবে লাভবান হবেন। তিনি অবিলম্বে এ স্থলবন্দরটি চালু করার জন্য সরকারের সু-দৃষ্ঠি কামনা করেন। এছাড়াও এ বন্দরটি চালু হলে এটি সরকারের অন্যতম রাজস্ব আয়ের উৎস হবে। যা সর্বোচ্চ রাজস্ব অয়ের বন্দর হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। বন্দরের অবকাঠামো সুবিধা: দৌলৎগঞ্জ-মাঝদিয়া পুর্বে শুল্ক স্টেশন ছিল তাই বাংলাদেশ-ভারত উভয় অংশে প্রশস্তÍ-সড়ক বিদ্যমান। বিজিবি চেকপোস্টের জন্য একটি গোলঘর, ইমিগ্রেশনের জন্য একটি অফিস কক্ষ, তিনটি পাঁকা টয়লেট, তিনটি টিউবওয়েল, কোয়ারেন্টাইন অফিসারের জন্য একটি দুই রুম বিশিষ্ঠ অফিস কক্ষ, কাস্টমসের জন্য একটি অফিস কক্ষ, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি টিনসেট ও তিন একর জমির উপর ট্রান্সশিপমেন্ট করার উপযোগী করে কাটা তারের বেড়া দ্বারা বাউন্ডারি, একটি যাত্রী ছাউনী ও একটি কনফারেন্স রুম বিদ্যমান রয়েছে। উল্লেখ্য, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শাজাহান খান ২০০৯ সালে দৌলৎগঞ্জ-মাঝদিয়া স্থলবন্দর এলাকা পরিদর্শন করে ৩ কোটি ২২ লক্ষ টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করেন। যা অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে বিদ্যমান বিদ্যুৎ সুবিধা রয়েছে। স্থল বন্দরের জন্য উদ্বোধনকৃত স্থানের দক্ষিণে মেদিনীপুর বিওপি ৭শ মিটার এবং উত্তরে নতুনপাড়া বিওপি ১ কি. মি. দুরে অবস্থিত। যে অবকাঠোমো সুবিধা এখন বিদ্যমান আছে তাতে করে সদাশয় সরকারের অনুমতি পেলে অবিলম্বে স্থল বন্দরের কার্যক্রম চালু করা সম্ভব। জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত তথ্যাদি: দৌলৎগঞ্জ-মাঝদিয়া স্থলবন্দর চালু করার জন্য কোন জমি অধিগ্রহণ করতে হবে না। উদ্বোধনকৃত বন্দরে চলাচলের জন্য ব্যবহৃত সড়কটি প্রশস্ত করণের প্রয়োজন হলে সড়কের দুই পার্শ্বে যথেষ্ঠ জমি রয়েছে। উদ্বোধনকৃত স্থলবন্দর এলাকার জমির শ্রেনী কৃষি, উচু ও বন্যামুক্ত হওয়ায় ভূমি অধিগ্রহন ও ভূমি উন্নয়ন সহজলভ্য এবং সহজসাধ্য হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ইতোপূর্বে অত্র এলাকাকে কাস্টম এলাকা ঘোষনা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। আরো উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ উদ্বোধনকৃত বন্দর এলাকায় ৩৩.৪৮ একর জমি অধিগ্রহনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে যা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুমোদন লাভ করেছে। ভারতীয় অংশের প্রস্তুতি: দৌলৎগঞ্জ-মাঝদিয়া স্থলবন্দরটি দ্রত চালু করতে ভারত কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহন করেছে। যেমন জিরো পয়েন্টে ভারতীয় অংশে ১শ ৭৪ মিটার কাচা রাস্তাটি সাড়ে ৩১ ফুট চওড়া এবং ৫০ টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন করে প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। কাস্টমস অফিসের জন্য টুঙ্গি বিএসএফ ক্যাম্পের দখলে থাকা ১৬ কক্ষ বিশিষ্ট পুরাতন কাস্টমস ভবনটি ছেড়ে দিয়েছে এবং টুঙ্গি বিএসএফ ক্যাম্প থেকে মাঝদিয়া বাজার পর্যন্ত সাড়ে ৪ কি. মি. রাস্তা প্রশস্তকরণের প্রকল্প চলমান। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক উদ্বোধন: ২০১৩ সালের ২৪শে আগস্ট আগস্ট গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এ স্থলবন্দরটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন ঘোষনা করেন। যা উদ্বোধনের ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও এ স্থলবন্দরটি আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম এখন চালু করা হয়নি। আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহ: জীবননগরে রয়েছে সরকারী-বেসরকারী ৬টি তফসিলি ব্যাংক। যার মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা সহজেই লেনদেন করতে পারবে। জীবননগরবাসীর প্রত্যাশা: প্রস্তাবিত দৌলৎগঞ্জ-মাঝদিয়া স্থলবন্দরের বিদ্যমান অবকাঠোমো, সুবিধাজনক অবস্থান ও যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে বেনাপোল, সোনা মসজিদ ও হিলি স্থলবন্দরের ন্যায় সব ধরনের পণ্য আমদানী-রপ্তানী করা সম্ভব হবে। যা সামগ্রীকভাবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গতি সঞ্চার করবে। জীবননগর উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন ও প্রানের দাবীর প্রতি সদাশয় সরকার সদয় বিবেচনা করবেন এটাই এলাকাবাসীর প্রত্যাশা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

জীবননগরের দৌলৎগঞ্জ-মাঝদিয়া স্থলবন্দরে আমদানি-রফতানির অপেক্ষায় ব্যবসায়ীরা

আপলোড টাইম : ০৭:৫০:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

উদ্বোধনের ৪ বছর পরেও শুরু হয়নি বন্দরের কার্যক্রম : দ্রুত চালুর দাবিতে নানা কর্মসুচিতে সর্বস্তরের মানুষ

জাহিদ বাবু/মিঠুন মাহমুদ: চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার দৌলৎগঞ্জ-মাঝদিয়া স্থলরবন্দরটি উদ্বোধনের ৪ বছর পার হলেও এখনও পর্যন্ত কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় হতাশ ব্যবসায়ীরা। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে ২০১৩ সালের ২৪ আগস্ট নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান দৌলতগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এ স্থলবন্দরের কার্যক্রম চালু করা হয়নি। অথচ দেশের অন্যান্য স্থলবন্দরের তুলনায় পণ্য আমদানি ও রপ্তানিতে এটি সুবিধাজনক। এদিকে, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার দৌলতগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দর চালু না হওয়ায় মানববন্ধন করেছে জীবননগর উপজেলা শহরের সর্বস্তরের মানুষ। গত সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে উপজেলা শহরের বাসস্ট্যান্ডের গোল চত্বরে এই মানববন্ধন হয়। মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, স্থলবন্দরের সকল অবকাঠামোগত উন্নয়ন ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বন্দর চালুর আশায় শতশত ব্যবসায়ী বাংলাদেশি অংশে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে অনিশ্চিতার প্রহর গুনছেন। অচিরেই দৌলতগঞ্জ-মাজদিয়া স্থলবন্দরটি দ্রুত চালুর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় লোকজন।
জীবননগরের দৌলৎগঞ্জ-মাঝদিয়া স্থলবন্দরটি ১৯৫৪ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত শুল্ক স্টেশন হিসেবে চালু ছিল। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কারণে শুল্ক স্টেশনটি বন্ধ হয়ে যায়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে শুল্ক স্টেশনটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশে পুনরায় চালু হয়। ১৯৯৪ সালের ৩ই নভেম্বর এসআর ও ১৩৬-আইন/৯৪/১৫৬৮ শুল্ক নম্বর প্রজ্ঞাপন মোতাবেক সকল প্রকার পণ্য আমদানী-রপ্তানীর আদেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ১৯৯৫ সালে শুল্ক স্টেশনটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। ২০০৯ সালের ১১জুন এক প্রঙ্গাপন নং ২৬২/২০০৮/শুল্ক এর মাধ্যমে সকল প্রকার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে ১৯টি পণ্য আমদানীর অনুমতি প্রদান করেন। উল্লেখ্য, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত ২০০৯ সালের শুল্ক এসআর ও বুকলেট মোতাবেক এ বন্দরের অবস্থান দেশের মধ্যে ২৭তম বাংলাদেম সরকার ২০১৩ সালের ৩১ জুলাই দৌলৎগঞ্জ-মাঝদিয়া শুল্ক স্টেশনটিকে পুর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর ঘোষনা করে গেজেট প্রকাশ করে। বন্দরের যোগাযোগ ও সুবিধাসমূহ: প্রস্তাবিত দৌলৎগঞ্জ-মাঝদিয়া স্থলবন্দর এলাকায় বর্তমান শুল্ক স্টেশন এলাকায় সড়ক ও অবকাঠামো বিদ্যমান রয়েছে। জীবননগর উপজেলা থেকে ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলা দিয়ে চলে যাওয়া জাতীয় সড়কের দুরত্ব মাত্র ৩৩কি.মি.। যে কারণে এখান থেকে দেশের যে কোন স্থানে দ্রুততম সময়ে যাতায়াত সম্ভব। দৌলৎগঞ্জ-মাঝদিয়া স্থলবন্দর জীবননগর উপজেলা সদর থেকে মাত্র ০৭ কি.মি. দুরে অবস্থিত। এখান থেকে ঢাকার দুরত্ব মাত্র ২৪০ কি.মি. এবং যাতায়াতে সময় লাগে মাত্র ৫ ঘন্টা। অপরদিকে, জিরো পয়েন্ট থেকে ভারতীয় অংশের টুঙ্গি হয়ে কৃষনগর ভায়া নবদ্বীপ ৩৪ নং জাতীয় মহাসড়ক খোন থেকে ভারতের সকল স্থানে যাতায়াত করা যায়। ঐ স্থান থেকে সোনা মসজিদ স্থলবন্দরের দুরত্ব ৪শ কি.মি. বেনাপোল স্থলবন্দরের দুরত্ব ১শ৭২ কি. মি. সেখানে উদ্বোধনকৃত দৌলৎগঞ্জ স্থলবন্দর থেকে মাঝদিয়া-কলকাতা রেলস্টেশন মাত্র সাড়ে ৪কি.মি. দুরে অবস্থিত। বর্তমান টু-ওয়ে সড়কের খুব সহজেই ফোর-ওয়ে সড়কে রুপান্তর করা সম্ভব। এখানে সড়ক যোগাযোগের পাশাপাশি রেল যোগাযোগের সুবিধাও রয়েছে। সর্বদিক দিয়ে বিচেনা করলে পচনশীল খাদ্যদ্রব্যসহ আমদানকৃত সকল প্রকার পণ্য অত্যন্ত দ্রততম সময়ের মধ্যে জীবননগর থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। ফলে এই বন্দর দিয়ে মালামাল আমদানী এবং রপ্তানী খরচ সাশ্রয় হবে ঠিক তেমনি দেশের বিভিন্ন অঞ্জলে কম দামে পণ্য সরবরাহ করা যাবে। তা ছাড়াও এ বন্দর পরিদর্শনকালে নিটল-টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআই’র সভাপতি আ. মাতলুব আহম্মেদ বলেন, এ বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি করলে প্রতি গাড়িতে তার ১২লিটার তেল সাশ্রয় হবে। ফলে তিনি ব্যাপকভাবে লাভবান হবেন। তিনি অবিলম্বে এ স্থলবন্দরটি চালু করার জন্য সরকারের সু-দৃষ্ঠি কামনা করেন। এছাড়াও এ বন্দরটি চালু হলে এটি সরকারের অন্যতম রাজস্ব আয়ের উৎস হবে। যা সর্বোচ্চ রাজস্ব অয়ের বন্দর হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। বন্দরের অবকাঠামো সুবিধা: দৌলৎগঞ্জ-মাঝদিয়া পুর্বে শুল্ক স্টেশন ছিল তাই বাংলাদেশ-ভারত উভয় অংশে প্রশস্তÍ-সড়ক বিদ্যমান। বিজিবি চেকপোস্টের জন্য একটি গোলঘর, ইমিগ্রেশনের জন্য একটি অফিস কক্ষ, তিনটি পাঁকা টয়লেট, তিনটি টিউবওয়েল, কোয়ারেন্টাইন অফিসারের জন্য একটি দুই রুম বিশিষ্ঠ অফিস কক্ষ, কাস্টমসের জন্য একটি অফিস কক্ষ, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি টিনসেট ও তিন একর জমির উপর ট্রান্সশিপমেন্ট করার উপযোগী করে কাটা তারের বেড়া দ্বারা বাউন্ডারি, একটি যাত্রী ছাউনী ও একটি কনফারেন্স রুম বিদ্যমান রয়েছে। উল্লেখ্য, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শাজাহান খান ২০০৯ সালে দৌলৎগঞ্জ-মাঝদিয়া স্থলবন্দর এলাকা পরিদর্শন করে ৩ কোটি ২২ লক্ষ টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করেন। যা অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে বিদ্যমান বিদ্যুৎ সুবিধা রয়েছে। স্থল বন্দরের জন্য উদ্বোধনকৃত স্থানের দক্ষিণে মেদিনীপুর বিওপি ৭শ মিটার এবং উত্তরে নতুনপাড়া বিওপি ১ কি. মি. দুরে অবস্থিত। যে অবকাঠোমো সুবিধা এখন বিদ্যমান আছে তাতে করে সদাশয় সরকারের অনুমতি পেলে অবিলম্বে স্থল বন্দরের কার্যক্রম চালু করা সম্ভব। জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত তথ্যাদি: দৌলৎগঞ্জ-মাঝদিয়া স্থলবন্দর চালু করার জন্য কোন জমি অধিগ্রহণ করতে হবে না। উদ্বোধনকৃত বন্দরে চলাচলের জন্য ব্যবহৃত সড়কটি প্রশস্ত করণের প্রয়োজন হলে সড়কের দুই পার্শ্বে যথেষ্ঠ জমি রয়েছে। উদ্বোধনকৃত স্থলবন্দর এলাকার জমির শ্রেনী কৃষি, উচু ও বন্যামুক্ত হওয়ায় ভূমি অধিগ্রহন ও ভূমি উন্নয়ন সহজলভ্য এবং সহজসাধ্য হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ইতোপূর্বে অত্র এলাকাকে কাস্টম এলাকা ঘোষনা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। আরো উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ উদ্বোধনকৃত বন্দর এলাকায় ৩৩.৪৮ একর জমি অধিগ্রহনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে যা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুমোদন লাভ করেছে। ভারতীয় অংশের প্রস্তুতি: দৌলৎগঞ্জ-মাঝদিয়া স্থলবন্দরটি দ্রত চালু করতে ভারত কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহন করেছে। যেমন জিরো পয়েন্টে ভারতীয় অংশে ১শ ৭৪ মিটার কাচা রাস্তাটি সাড়ে ৩১ ফুট চওড়া এবং ৫০ টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন করে প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। কাস্টমস অফিসের জন্য টুঙ্গি বিএসএফ ক্যাম্পের দখলে থাকা ১৬ কক্ষ বিশিষ্ট পুরাতন কাস্টমস ভবনটি ছেড়ে দিয়েছে এবং টুঙ্গি বিএসএফ ক্যাম্প থেকে মাঝদিয়া বাজার পর্যন্ত সাড়ে ৪ কি. মি. রাস্তা প্রশস্তকরণের প্রকল্প চলমান। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক উদ্বোধন: ২০১৩ সালের ২৪শে আগস্ট আগস্ট গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এ স্থলবন্দরটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন ঘোষনা করেন। যা উদ্বোধনের ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও এ স্থলবন্দরটি আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম এখন চালু করা হয়নি। আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহ: জীবননগরে রয়েছে সরকারী-বেসরকারী ৬টি তফসিলি ব্যাংক। যার মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা সহজেই লেনদেন করতে পারবে। জীবননগরবাসীর প্রত্যাশা: প্রস্তাবিত দৌলৎগঞ্জ-মাঝদিয়া স্থলবন্দরের বিদ্যমান অবকাঠোমো, সুবিধাজনক অবস্থান ও যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে বেনাপোল, সোনা মসজিদ ও হিলি স্থলবন্দরের ন্যায় সব ধরনের পণ্য আমদানী-রপ্তানী করা সম্ভব হবে। যা সামগ্রীকভাবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গতি সঞ্চার করবে। জীবননগর উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন ও প্রানের দাবীর প্রতি সদাশয় সরকার সদয় বিবেচনা করবেন এটাই এলাকাবাসীর প্রত্যাশা।