ঝিনাইদহে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের যুক্তিসংগত দাবি জোরদার হচ্ছে

- আপডেট সময় : ০৮:৩০:০০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ অগাস্ট ২০১৬ ২৯৯ বার পড়া হয়েছে
কাজল চৌধূরী, ঝিনাইদহ: মেডিকেল কলেজ স্থাপনের সব কিছুই বিদ্যমান ঝিনাইদহে। সরকারের সদিচ্ছা ও একটি মাত্র ঘোষনাই বদলে দিতে পারে ঝিনাইদহের স্বাস্থ্যসেবার চিত্র। মেডিকেল কলেজের সহায়ক নার্সিং ইন্সটিটিউট, ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি ও মেডিকেল এ্যাসিস্টেন্ট ট্রেনিং সেন্টার,শিশু হাসপাতাল, চক্ষু হাসপাতাল,ডায়াবেটিক হাসপাতাল চলমান রয়েছে । নেই কেবল মেডিকেল কলেজ।মেডিকেল কলেজ স্থাপীত হলে ঝিনাইদহ চিকিৎসা নগরী হিসেবে গড়ে উঠবে।এটি এখন ঝিনাইদহবাসীর যুক্তিসংগত প্রানের দাবি। মঙ্গলবার ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ঝিনাইদহ জেলা সমন্বয় কমিটির সভায় (্এলজিএসপি) জনপ্রতিনিধিরা ঝিনাইদহে মেডিকেল কলেজ ও রেললাইন স্থাপনের দাবীতে সোচ্চার হন। বিষয়টি তারা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টিতে আনার দাবী জানান। দুপুরে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মাহবুব আলম তালুকদারের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবু ইউসুফ মো: রেজাউর রহমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুর রউফ মন্ডল, ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সভাপতি আলাউদ্দীন আজাদ, ঝিনাইদহ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এড আব্দুল আলিম, কালীগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠান্ডু, কোটাচাঁদপুর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নাজমা খাতুন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাহ মোহাম্মদ আকরামুল হক, কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মানোয়ার হোসেন মোল্লা, ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান, শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিদারুল আলম, হরিণাকুন্ডুর কাপাশহাটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান জোয়ারদার। সমন্বয় সভায় জনপ্রতিনিধিরা ঝিনাইদহে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও রেললাইন স্থাপনের যুক্তি তুলে ধরেন। তারা বলেন, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালটি ইতিমধ্যে আড়াইশ বেডে উন্নীত করা হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নে প্রায় ৪০ কোটি টাকার টেন্ডারের ওয়ার্ক অর্ডার সম্পন্ন হয়েছে। পাশ্ববর্তী অন্যান্য জেলার তুলনায় ঝিনাইদহ জেলা শতভাগ সুবিধা জনক স্থানে থাকার পরও এখানে মেডিকেল কলেজ স্থপন না করা দুঃখজনক। মেডিকেলে ছাত্র ছাত্রীদের অনুশীলন ও পড়ালেখার জন্য বহু আগেই সহায়ক অনেকগুলি প্রতিষ্ঠিত গড়ে উঠেছে। মেডিকেল কলেজ স্থপীত হলে জেলার ১৯লাখ মানুষসহ পাশ্ববর্তী এলাকার আরো কয়েকলাখ মানুষ উপকৃত হবেন। জেলার সাথে উপজেলা ও ইউনিয়নগুলির উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকায় জনগন জেলা সদর হাসপাতালে চলে আসেন। কিন্তু অপ্রতুল চিকিৎসা ব্যাবস্থা তাদের প্রয়োজনীয় সব চাহিদা পুরন করতে পারেনা।ফলে হৃদ রোগসহ জরুরী প্রয়োজনে রেগীদের উন্নত সেবার জন্যে ফরিদপুর বা ঢাকা রেফার্ড করা হয়। এতে অর্থ ও জীবনের ঝুকি বেড়ে যায়। ইতিমধ্যে কমিউনিটি সাপোটের কারনে হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম উন্নত হবার ফলে দিনে দিনে চাহিদা আরো বাড়ছে। ঝিনাইদহের সাংসদ, ঝিনাইদহ পৌরসভার মেয়র, স্থানীয় শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, এনজিও কর্মি ও চিকিৎসকগণসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ আর্থিক ডোনেশনসহ বিভিন্নভাবে স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের জন্যে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। যা-দেশে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের এই কমিউনিটি সাপোর্টে সেবা ব্যাবস্থাপনা সরকারের উচ্চ মহলের দৃষ্টি কাড়ার কারনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয় ঝিনাইদহ পৌরসভা মেয়র কে সভাপতি করে একটি কমিউনিটি সাপোট গ্র“প কমিটি গঠন করেছে।এই কমিটি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নে কাজ করে চলেছে। ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সভাপতি আলাউদ্দীন আজাদ বলেন, ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রীসহ সরকারের তিনজন মাননীয় মন্ত্রী সদর হাসপাতাল পরিদর্শন করে গভীর সন্তোষ প্রকাশ করেছেন । পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রী ঝিনাইদহে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের আশ্বাস দেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সংসদে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের উন্নত কর্মকান্ড তুলে ধরে প্রশংসা মুলক বক্তব্য দিয়েছেন। সরকারের বেশ কয়েকজন উর্ধতন কর্মকর্তা হাসপাতাল পরিদর্শন করে এটি বাংলাদেশের মডেল হাসপাতাল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এখন ঝিনাইদহবাসীর প্রণের দাবীতে পরিণত হয়েছে ঝিনাইদহে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের বিষয়টি। ইতিমধ্যে বিশ্বস্বাস্থ্যা সংস্থ্যা, জাইকা,ওয়াল্ড ব্যাংক,ইউনিসেফ, এইসিডিডিআর-বি সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থ্য এই কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট হয়েছে।হাসপাতাল স্থাপনার জন্যে প্রয়োজনীয় জমিও রয়েছে সদর হাসপাতালটিতে। কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠান্ডু বলেন, বহু আগে থেকেই ঝিনাইদহে মেডিকেল কলেজ স্থপানের বিষয়টি উচ্চারিত হয়ে আসছে। মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের জ্ঞান চর্চার জন্য সবই ঝিনাইদহে বিদ্যমান। এখন ঘোষনা আর লোকবল দিলেই ঝিনাইদহে মেডিকেল কলেজ চালু হতে পারে। সদরের উপজেলা চেয়ারম্যান এড আব্দুল আলীম ও কোটাচাঁদপুর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নাজমা খাতুন ঝিনাইদহে রেললাইন স্থাপন ও মেডিকেল কলেজ স্থপনের পক্ষে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরে অবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবী জানান। এদিকে ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডাঃ আব্দুস সালাম জানান, ভৌগলিক কারণে ঝিনাইদহ একটি গুরুত্বপুর্ণ জেলা। দক্ষিনাঞ্চলের প্রবেশ দ্বার হিসেবে ঝিনাইদহ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে যে ভাবে রোগীর চাপ বাড়ছে, তাতে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থাপন ছাড়া এই চাপ সামলানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, প্রতিদিন আউট ডোরে এক হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা দেওয়া হয়। এছাড়া প্রতিদিন শিশু, গর্ভবতি মহিলা, মারামারি, সড়ক দুর্ঘটনাসহ তিন‘শ রোগী ভর্তি থাকছে। চিকিৎসক ও বেড না থাকায় এতো মানুষ একসঙ্গে চিকিৎসা প্রদান সম্ভব হচ্ছে না। মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা হলে দক্ষিনাঞ্চলের মানুষ সহজে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পেত। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের প্রসুতি বিভাগর প্রধান ডাঃ ইমদাদুল হক জানান, মেডিকেল কলেজ স্থাপন করার সহায়ক সব কিছুই এখন ঝিনাইদহে রয়েছে। তবে সরকারের বিবেচনায় ঝিনাইদহকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয় উদ্দ্যোগে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালকে দেশের মধ্যে একমাত্র জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলির মধ্যে মডেল জেলা হাসপাতাল তেরী করার পাইলোটিং কার্যক্রম চলছে। তবে প্রশাসনের একটি সুত্র জানায়, ঝিনাইদহের জনপ্রতিনিধিরা সরকারের উপর মহলে যোগাযোগ করলেই কেবল ঝিনাইদহে মেডিকেল কলেজ বাস্তবে রূপ নিতে পারে। ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মোঃ সাইদুল করিম মিন্টু বলেন, উন্নত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণ মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর ভিশন, মেডিকেল কলেজ এখন ঝিনাইদহবাসীর যুক্তিসংগত প্রানের দাবি। আমি বিশ্বাস করি মাননীয় প্রধান মন্ত্রী এ দাবি বিবেচনা করবেন।