বয়স এখন ৬৫ পড়েন ক্লাস ফাইভ অদম্য বাসনা নিয়ে প্রতিদিনই বিদ্যালয়ে ছুটছেন মেহেরপুরের বাসিরন নেছা

- আপডেট সময় : ১০:০৭:১৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ নভেম্বর ২০১৬ ৭০৮ বার পড়া হয়েছে
বিক্রম সাদিক/মাসুদ রানা মেহেরপুর থেকে: বয়স ৬৫ বছর। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে দেহ। তবুও লেখাপড়ার অদম্য বাসনা নিয়ে প্রতিদিনই বিদ্যালয়ে ছুটছেন মেহেরপুরের বাসিরন নেছা। বাড়ি থেকে ১ কিঃ মিঃ দূরে মেঠো পথপাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হয় তাকে। তারপরও ক্লান্তিবোধ নেই তার। ছোট ছেলে মেয়েদের সাথে খেলাধুলার পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছেন জ্ঞান চর্চা। আগামী ২০ নভেম্বর পিএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন তিনি। বয়স যে লেখাপড়ার জন্য কোন বাধা নয়, তারই প্রমান করেছেন মেহেরপুর গাংনী উপজেলার হোগলবাড়িয়া গ্রামের ৬৫ বছরের বাসিরন নেছা। বয়স বাধ সাধাতে পারেনি তাকে। ২০ বছর বয়স থেকেই লেখাপড়ার প্রতি ঝোক তার। কিন্তু সংসারের কাজ ফেলে সময় করে উঠতে পারেননি তিনি। সে সময় নাতি-নাতিœদের বিদ্যালয়ে পৌঁছে দিতেন। নাতিদের সাথে মাঝে মধ্যে পড়ালেখা শিখতেন। নাতি এসএসসি পাশ করলে সময় আসে তার। যোগাযোগ করেন হোগলবাড়িয়া সরকরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে। শিক্ষকরাও অনুপ্রানিত করেন তাকে। তাদের পরামর্শে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হন তিনি। এবার তিনি পিএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন। সকাল হলেই বই হাতে করে প্রতিদিন তিনি ছুটে যান বাড়ি থেকে ৭০০গজ দূরে ১২ বছরের মেয়ে জুলেখার বাড়িতে। সহপাঠির কাছেই পড়েন তিনি। সেখানে কয়েক ঘন্টা পড়ালেখা করে ফিরে আসেন বাড়িতে। বাড়ির কাজকর্ম শেষ করে সহপাঠির সাথে রওনা দেন বিদ্যালয়ে। সেখানে ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরে আসেন।
বাসিরন নেছা জানান, ছোট বেলায় থেকে ইচ্ছা ছিল পড়ালেখার। কিন্তু অভাব অনটন, আর ছোট বেলায় বিয়ে হবার কারণে সংসারের হাল ধরতে হয় তাকে। ফলে পড়া লেখার সূযোগ হয়নি। তখন থেকেই মনে করেছিলেন সূযোগ পেলেই লেখাপড়া করবেন। শিক্ষকদের অনূমতি পেয়ে ভর্তি হন গ্রামের প্রইমারি স্কুলে। পিএসসি পাশ করতে পারলে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার ইচ্ছা তার। অনেকেই ঠাট্টা বিদ্রুপ করলেও কর্ণপাত করেননি তাতে। বরং অনেকের উৎসাহে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
বাসিরন নেছার ছেলে আকবর আলী ও মহির উদ্দিন জানান, অল্প বয়সে বিয়ে হবার কারণে স্কুলে যেতে পারেননি। লেখাপড়ার প্রবল ইচ্ছা ছিল তার। এ বয়সে এসে বিদ্যালয়ে গেলে অনেকেই নানা কথা বলে। নিষেধ করেও লাভ হয়নি। এখন আর তাকে কেউ বাধা দেয় না। পরীক্ষার ফিসসহ সকল প্রকার সহযোগিতা করেন তারা। এখন মাকে নিয়ে গর্ববোধ করেন পরিবারের সদস্যরা।
প্রতিবেশি কোরবান আলী জানান, এ বয়সে লেখা পড়া করা একটা কঠিন ব্যাপার। বাসিরন নেছা লেখা পড়ার গুরুত্ব অনুধাবন করে এ বয়সেও স্কুলে যাচ্ছে এমন দেখে প্রতিটি বাবা মা তাদের সন্তানের লেখা পড়ার প্রতি যতœশীল হচ্ছে। তার লেখাপড়া এখন আমাদের সন্তানদের শিক্ষিত করার অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে। কোন সমস্যা হলেই যে কোন শিক্ষিত মানুষের সাথে বুঝিয়ে নেন তিনি।
সহপাঠিরা জানান, দাদি বাসিরন স্কুলে আসায় তারা নতুন করে অনুপ্রেরণা পেয়েছে। তিনি সবার আগে আসেন আবার সবার পরে বাড়ি যান। যারা স্কুলে অনিয়মিত তাদের বাড়িতে গিয়েও স্কুলে নিয়ে আসেন। অবসরে মেতে উঠেন গল্প ও খেলা ধুলায়।
হোগলবাড়িয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দীন আহমেদ জানান, বাসিরন নেছার লেখাপড়া নিয়ে তার পরিবারের সদস্যরাও উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। পাড়া প্রতিবেশীরাও তাকে উৎসাহ দিয়ে থাকে। আমার বিশ্বাস সে সমাপনি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করবে। তার হাতের লেখাও খুব সুন্দর।