৭ নভেম্বর ঘিরে উত্তেজনা : রাজনীতিতে ফের সংঘাত সহিংসতার আশঙ্কা!

- আপডেট সময় : ০১:১৯:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ নভেম্বর ২০১৬ ৩৫৬ বার পড়া হয়েছে
সমীকরণ ডেস্ক: প্রধান দুই দলের কাউন্সিল উত্তর দেশের রাজনীতিতে কোনো সুখবর নেই, নেই রাজনৈতিক সংকট নিরসনের কোনো উদ্যোগও। কী রাজনৈতিক, কী কূটনৈতিক মহল সবাই যেন হাল ছেড়ে দিয়েছেন। রাজনীতিতে এমন অবস্থা বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে। সবার প্রত্যাশা ছিল, প্রধান দুই দলের কাউন্সিলের পর নতুন নেতৃত্বে দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তন আসবে। কিন্তু জনগণের সে আশা গুড়েবালি। ফের বাগ্যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছেন প্রধান দুই দলের নেতারা। এতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন। সুশীল সমাজ প্রতিদিনই আপস-সমঝোতার কথা বলছেন। মাঝেমধ্যে সরব হচ্ছেন বুদ্ধিজীবীরা। সবাই বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে রাজনৈতিক সংকট নিরসন সম্ভব নয়। অথচ সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকরা একই কথা বলছেন। আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ীই হবে। এর থেকে এক চুল সরকার নড়বে এমন আভাস মিলছে না। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন, কোনোভাবেই বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে দেয়া হবে না। নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ীই হবে। তারা জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে কঠোর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। বহুদলীয় গণতন্ত্রে দল ও মতের ভিন্নতা থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু সেই সুযোগে আগুন নিয়ে রাজনীতি করে সেরকম কোনো অপশক্তি যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে। অন্যদিকে, বিএনপির নেতারা কোনো অবস্থাতেই আওয়ামী লীগের অধীনে আগামী নির্বাচনে যেতে নারাজ। তারা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অনড়।
এ ব্যাপারে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, সরকার বেপরোয়া দস্যু মনোবৃত্তি নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে আছে বলেই গণতন্ত্রের বিকাশের সব প্রতিষ্ঠানকে লাশকাটা ঘরে প্রেরণ করেছে। আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর গণতন্ত্রবিনাশী কু-মতলবটাই পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠছে। কারণ, আওয়ামী লীগ বরাবরই জনগণকে সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে টার্গেট করে। আর এ কারণেই ভোটারবিহীন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোনোভাবেই বিএনপিকে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে দেয়া হবে না। কোন দলকে ক্ষমতায় বসানো হবে সেই অধিকার তো জনগণের, প্রধানমন্ত্রীর হুঙ্কারে তার সশস্ত্র ক্যাডার বা তার সাজানো প্রশাসনের নয়।
অন্যদিকে, ৭ নভেম্বরকে কেন্দ্র ফের রাজনীতিতে ফের সংঘাত ও সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সোমবার বিকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের বর্ধিতসভায় দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতিতে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেছেন, সিপাহি বিপ্লবের নামে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দোসররা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামলে কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। তারা সিপাহি বিপ্লবের নামে বিএনপি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আড়াল করতে চায়।
এর আগে গত ২০ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে আগামী ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ১০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। এরমধ্যে প্রধান কর্মসূচি হিসেবে ৭ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার ঘোষণা দেয়া হয়। পরবর্তী এই কর্মসূচি সফল করতে প্রস্তুতি নিতেও শুরু করে দলটি। এর অংশ হিসেবে জনসভা করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদনও করে তারা। এখন পর্যন্ত কোনো অনুমতি না পেলেও শেষ সময়ে অনুমতি পাবে এমন আশায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে। আর অনুমতি না পেলেও কর্মসূচি পালনের কথাও দলের অনেক নেতাকর্মী ভাবছে।
কিন্তু আওয়ামী লীগ সূত্রগুলো বলছে, মুক্তিযুদ্ধের সৈনিক হত্যার এই দিনে অন্য নামের কোনো কর্মসূচি করতে এবার তারা দেবে না। যেকোনোভাবে বিরোধীদের কর্মসূচি প্রতিহত করারও প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। এর আগে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান গণমাধ্যমকে বলেছেন, বিপ্লব ও সংহতি দিবস বলে জাতীয় জীবনে কোনো দিবস নেই। ছলচাতুরী করে মেজর জিয়া তৎকালীন সেনাসদস্যদের বিভ্রান্ত করে ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন। জাতীয় জীবনে এরকম কাল দিন খুব কমই এসেছে। এমন একটি দিবস পালনের নামে জাতির সঙ্গে প্রতারণা করতে দেয়া হবে না। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যা বলেছেন, তাই ঠিক। বিএনপিকে উল্টাপাল্টা কিছুই করতে দেয়া হবে না। রাজপথে নেমে আবারও মানুষকে পুড়িয়ে মারতে দেয়া হবে না।
আওয়ামী লীগ নেতার বক্তব্যের জবাবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, কর্মসূচি প্রতিহত করার হুমকির পরও ওইদিন সমাবেশ করার বিষয়ে অনড় বিএনপি। গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার ও স্বাধীনতা সুরক্ষার একটি মহান দিন ৭ নভেম্বর। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যতই প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়া হোক না কেন, দিবসটি তারা পালন করবেনই।
এ ব্যাপারে বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, চুপচাপ বসে থাকলে কী হয়, তা বিএনপি বুঝতে পারছে। সরকার ৫ জানুয়ারির মতো আবারও একটি সাজানো বা পাতানো নির্বাচন করে ফেলতে পারে বলে আলোচনা আছে। মানি লন্ডারিং মামলায় তারেক রহমানকে সাত বছরের সাজা দেয়ার পর দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হতে পারে। এ অবস্থায় মাঠে নামা ছাড়া বিকল্প নেই। সঙ্গত কারণে সব বাধা উপেক্ষা করে ৭ নভেম্বরকে ঘিরে আবারও মাঠে নামার পরিকল্পনা করা হয়েছে।