বিএনপির তৃণমূলে নেতৃত্ব দেবেন ’৯০-র ছাত্রনেতারা

- আপডেট সময় : ১২:০৭:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ অক্টোবর ২০১৬ ৩৫০ বার পড়া হয়েছে
সমীকরণ ডেস্ক: কেন্দ্রের পাশাপাশি তৃণমূলেও এবার তরুণদের নেতৃত্বে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। বিশেষ করে নব্বইয়ের তুখোড় ছাত্রনেতাদের উপজেলা, জেলা ও মহানগরের শীর্ষ পদে বসানোর তোড়জোড় চলছে। এ লক্ষ্যে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, বিভিন্ন কলেজের সাবেক ভিপি, জিএসদের তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। সুযোগসন্ধানী ও সুবিধাবাদীদের কারণে দীর্ঘদিন ধরে কোণঠাসা ছিলেন এসব তরুণ নেতা। বিভিন্ন জেলায় দীর্ঘদিন একই সিন্ডিকেট দায়িত্বে থাকায় চেষ্টা করেও তারা নেতৃত্বে আসতে পারেননি। ফলে অভিমান করে অনেকেই রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে যান। কেউ কেউ শুরু করেছেন ব্যবসা। সিন্ডিকেট ভেঙে এবার সাবেক ছাত্রনেতাদের তৃণমূলের নেতৃত্বে আনার সিদ্ধান্তে তারাও উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তৃণমূল পুনর্গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সমন্বয়ক ও কেন্দ্রের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, এই মুহূর্তে তৃণমূলের দিকেই আমাদের নজর। কীভাবে জেলা, মহানগর ও উপজেলার সাংগঠনিক ভিত মজবুত করা যায় তা নিয়ে নানা পরিকল্পনা রয়েছে। তৃণমূলের মতের ভিত্তিতে যোগ্য, ত্যাগী বিশেষ করে তরুণদের শীর্ষ নেতৃত্বে আনার চিন্তাভাবনা চলছে। তিনি বলেন, বিএনপির প্রাণ হচ্ছে তৃণমূল। আর ছাত্রদলের সাবেক নেতারা হচ্ছেন দলের নির্ভেজাল নেতৃত্ব। তাদের তৃণমূলের দায়িত্বে আনা হলে নিঃসন্দেহে দলের সাংগঠনিক শক্তি আরও বৃদ্ধি পাবে। নেতাকর্মীরাও চাঙ্গা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নব্বইয়ের পর ছাত্রদলের সাবেক তুখোড় নেতাদের বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়। ’৯১-এর জাতীয় নির্বাচনে ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের মনোনয়ন দেয়া হয়। পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে এ সংখ্যা বাড়তে থাকে। দলের মনোনয়নের পাশাপাশি নেতৃত্বেও অগ্রাধিকার দেয়া হয় সাবেক ছাত্রনেতাদের। বিগত কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে তরুণদের প্রাধান্য দেয়া হয়। এখন দলের মূল নেতৃত্বে বলতে গেলে ছাত্রদলের সাবেক নেতারাই। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব করা হয়েছে রাকসুর সাবেক ভিপি ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে। যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদকীয় এমনকি সদস্যপদেও প্রাধান্য তাদের। কিন্তু তৃণমূলে তরুণ নেতৃত্ব আনার চিন্তা সেভাবে কারও মাথায় আসেনি। সে কারণে কেন্দ্রে ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের অবস্থান মজবুত হলেও তৃণমূলে তাদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। ফলে অনেক জেলাতেই সাংগঠনিকভাবে দল শক্তিশালী হতে পারেনি। বিগত কয়েকদফা সরকারবিরোধী আন্দোলনে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সুবিধাবাদীরা বেশিরভাগ জেলার নেতৃত্বে থাকায় আন্দোলন তেমন বেগবান হয়নি। দলের চেয়ে নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন তারা।
তাই ভবিষ্যৎ আন্দোলন এবং জাতীয় নির্বাচনের কথা চিন্তা করে এবার তৃণমূল পুনর্গঠনে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যোগ্য, ত্যাগী বিশেষ করে ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের তৃণমূলের দায়িত্বে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়। এতে তৃণমূলে গতি আসবে বলে মনে করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। এরই মধ্যে হাইকমান্ডের এমন উদ্যোগের বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। পুনর্গঠনকে কেন্দ্র করে সাংগঠনিক সম্পাদকরা বিভিন্ন জেলা সফরে যাচ্ছেন। তৈরি করছেন সাংগঠনিক রিপোর্ট। স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তারা সাবেক ছাত্রনেতারা কে কোথায় আছেন তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন।
তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন সিন্ডিকেটের কবলে বন্দি ছিল জেলা বা মহানগরের রাজনীতি। যুগের পর যুগ একই নেতৃত্ব দেখা গেছে। দলের সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালী নেতার কথামতোই হতো সবকিছু। অনেক বাধা পেরিয়েও সাবেক ছাত্রনেতারা দেশের বিভিন্ন জেলা, মহানগর ও পৌর বিএনপির নেতৃত্বে আসেন এবং যোগ্যতার সঙ্গেই দায়িত্ব পালন করছেন। সিলেট জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান চৌধুরী জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ছিলেন। হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক সেলিম বর্তমানে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। চাঁদপুর পৌর বিএনপির সভাপতি হারুন অর রশিদ একসময় জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ভোলা জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এনামুল হক জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। শফিকুল হক মিলন ছিলেন রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি, বর্তমানে তিনি মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। এবার সিন্ডিকেট ভেঙে এ সংখ্যা আরও কয়েকগুণ বাড়বে বলে মনে করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। জানতে চাইলে ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা খান সফরী বলেন, তৃণমূলকে সুশৃংখল এবং শক্তিশালী করতেই ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের দায়িত্বে আনার সিদ্ধান্ত নেয় হাইকমান্ড। তিনি নিজেও জেলার নেতৃত্বে আসেন। কিন্তু সুযোগসন্ধানী এবং সুবিধাবাদীরা তা সহজে মেনে নিতে পারছেন না। তরুণরা যাতে নেতৃত্বে আসতে না পারেন সেজন্য সুযোগসন্ধানীরা নানা কৌশল নিচ্ছে। তিনি বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে জেলার আহ্বায়ক কমিটি করা হলেও এখনও জেলার সব ইউনিটের কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের নেতৃত্বে একটা টিম জেলা সফর করে। সেখানে স্থানীয় নেতাকর্মীরা বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সামনের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হতে চান এমনটা জানিয়ে সফরী বলেন, বিগত সময়ে জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। সামনে কমিটিতে স্থানীয় নেতাকর্মীরা শীর্ষ দুই পদের একটাতে দেখতে চান। আমার প্রত্যাশাও তাই। ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল বর্তমানে রাজশাহী জেলা যুবদলের আহ্বায়ক। এই সাবেক নেতা আগামীতে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছেন। জানতে চাইলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, ছাত্র রাজনীতি থেকেই তিনি রাজশাহী জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। ভবিষ্যতে জেলা বিএনপির নেতৃত্ব টার্গেট করেই তিনি রাজনীতি করছেন। বিগত আন্দোলন সংগ্রামেও রাজপথে ছিলাম। আশা করি সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে দলের হাইকমান্ড ভবিষ্যতে তাকে জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বে আনবেন। তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রত্যাশাও তাই