শততম জয়ে সিরিজ টাইগারদের

- আপডেট সময় : ১০:০৩:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ অক্টোবর ২০১৬ ৪০২ বার পড়া হয়েছে
সমীকরণ ডেস্ক: ব্যাটিংয়ের শেষটা আগের দুই ম্যাচের মতো আক্ষেপ হয়েই রইল। ফিল্ডিংয়ে ছোটখাটো ভুল থাকল, ক্যাচও পড়ল। তবে জয়ের আনন্দে মাতোয়ারা বাংলাদেশের ওসব মনে রাখার সময় কোথায়? সেই জয়টা আবার ওয়ানডেতে টাইগারদের শততম, হোক না তা আফগানিস্তানের মতো ছোট দলের বিপক্ষে পাওয়া। এই দলটির কাছেই তো গত ম্যাচে হার দেখে শততম জয়ের অপেক্ষা বেড়েছিল, টাইগাররা সিরিজ জয়ের আশাটাকে ঠেলে দিয়েছিল শঙ্কায়। শনিবারের ম্যাচে অবশ্য শঙ্কার ছিটেফোঁটাও থাকল না বাংলাদেশের ‘অনেক জয়ের’ আকাশে। প্রায় দেড় বছর পর ওয়ানডেতে তামিম ইকবালের সেঞ্চুরি, তিন নাম্বার ব্যাটিং পজিশন নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের দুশ্চিন্তাকে হিমঘরে পাঠিয়ে সাব্বির রহমানের আলোয় ফেরা, সৌম্য-মুশফিকদের আরো একবার ব্যর্থতার দিনেও বাংলাদেশের পুঁজিটা হয়েছে চ্যালেঞ্জিং, ৮ উইকেটে ২৭৯ রান। এরপর বোলিংয়ের শুরুতেই যখন জ্বলে উঠলেন দলপতি মাশরাফি বিন মর্তুজা, প্রায় সাড়ে ৮ বছর পর দলে ফেরা বাঁহাতি স্পিনার মোশাররফ রুবেল প্রত্যাবর্তনকে রাঙালেন ক্যারিয়ারসেরা (৩/২৪) বোলিংয়ে, ব্যাটিংয়ে বড় পুঁজি গড়ার পর বাংলাদেশের জয় পাওয়া নিয়ে যে সামান্যতম শঙ্কাটুকু ছিল, ম্যাচ শেষ হওয়ার অনেক আগেই তা উবে গেছে। ৮৩ রানের মধ্যে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে আফগানিস্তানকে ম্যাচ থেকে আগেই ছিটকে দিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর কেবল দেখার অপেক্ষা ছিল, পরাজয়ের ব্যবধানটা ঠিক কতটা ছোট করতে পারে আসগর স্টানিকজাইয়ের দল। সফরকারী দলটির লেজের ব্যাটসম্যানরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে, তবে খুব বেশিদূর এগোতে পারেনি। বলা ভালো, এগোতে দেয়নি বাংলাদেশের বোলাররা। দুর্ধর্ষ বোলিংয়ে মাশরাফি ব্রিগেড আফগানদের ইনিংস গুঁড়িয়ে দিয়েছে ১৩৮ রানে। তুলে নিয়েছে ১৪১ রানের বড় জয়। সব মিলিয়ে মিরপুরে এদিন আসল বাংলাদেশকেই দেখা গেল, তাতে একটা সতর্কবার্তাও দেয়া গেল দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলতে শুক্রবারই ঢাকায় আসা ইংল্যান্ড দলকে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাট হাসে তামিমের, আফগানদের বিপক্ষে এদিন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরিটা তুলে নিয়ে টাইগারদের বাঁহাতি ওপেনার জানিয়ে দিলেন, তৈরি তিনিও। এদিন ১১৮ রানের অনিন্দ্যসুন্দর এক ইনিংস খেলেছেন তামিম। দলীয় ২৩ রানের মাথায় সৌম্য ফিরে যাওয়ার পর সাব্বিরকে নিয়ে ১৪০ রানের দারুণ এক জুটি গড়ে বাংলাদেশকে দিয়েছেন শক্ত ভিত। ১১টি চার এবং ২টি ছক্কায় সাজানো তার ১১৮ বলের ইনিংসটি প্রতি মুহূর্তে বলে গেছে, আগের ম্যাচে রান না পাওয়াটা ছিল ক্ষণিকের ভুল। ডাকাবুকো ব্যাটিংয়ে ৬৫ রানের ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস খেলে সাব্বিরও জানিয়ে দিলেন, টি২০ ক্রিকেটের মতো ওয়ানডেতেও তিন নাম্বারে ব্যাটিংয়ের চ্যালেঞ্জটা নিতে তিনি পুরোপুরি তৈরি। ম্যাচ আর সিরিজের সেরা তামিম এবং সাব্বিরের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ২ উইকেট হারিয়ে ২১২ রান তুলে ফেলেছিল বাংলাদেশ। তখনো ইনিংসের প্রায় ১২ ওভার বাকি। আগের দুই ম্যাচের ব্যর্থতা ঢেকে এদিন স্বাগতিকরা আফগানদের কাঁধে বড় রানের বোঝা চাপিয়ে দেবেথ প্রত্যাশাটা এমনই ছিল। কিন্তু শেষতক তা আর হলো না, দ্রুত রান তুলতে গিয়ে শেষের দিকে উইকেট পড়ল মুড়ি-মুড়কির মতো। সাকিব (১৭), মুশফিক (১২), মোসাদ্দেকরা (৪) দ্রুত ফিরলেন সাজঘরে। মাশরাফি-মোশাররফরাও পারেননি। দলের পুঁজিটা তাই প্রত্যাশিত মাত্রা পেল না। শেষ ১০ ওভারে উঠল মাত্র ৬৪ রান, সেটাও ৪ নাম্বার ব্যাটিং পজিশনটা সাকিবকে ছেড়ে দিয়ে ছয়ে নামা মাহমুদউল্লাহ শেষ পর্যন্ত উইকেটে টিকে ছিলেন বলেই। ২২ বলে ৪টি চারে শেষের দিকে তার হার না মানা ৩২ রানের ইনিংসেই ৩০০ ছুঁই ছুঁই পুঁজি বাংলাদেশের। ওই সময়ে উইকেট পড়েছে ৫টি। তবুও ভালো, আফগানদের বিপক্ষে আগের ৪টি ওয়ানডের মতো এদিন আর অলআউট হয়নি বাংলাদেশ। আর ২৭৯ রানও যে মিরপুরের উইকেটে অনেক বড় সংগ্রহ, টাইগার বোলাররা সেটাও চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে অতিথিদের। শুরুটা করেছিলেন মাশরাফি, ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই ডানহাতি এই পেসার উপড়ে ফেলেছেন বিধ্বংসী ওপেনার মোহাম্মদ শাহজাদের স্টাম্প। ওই উইকেটটি দিয়ে আবদুর রাজ্জাককে (২০৭) টপকে গেছেন মাশরাফি, সাকিবের পর তিনিই এখন ওয়ানডেতে দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। টাইগার দলপতির দেয়া শুরুর ওই ধাক্কা নওরোজ মঙ্গল আর রহমত শাহর ৪৭ রানের ছোট্ট জুটিতে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছিল আফগানিস্তান। কিন্তু দীর্ঘ বিরতির পর দলে ফেরা মোশাররফ তিন বলের ব্যবধানে নওরোজ (৩৩) আর হাসমতউল্লাহ শাহিদিকে ফিরিয়ে সেই চেষ্টার ইতি টেনে দিয়েছেন। মোশাররফ এরপর নিজের তৃতীয় শিকার বানিয়েছেন মোহাম্মদ নবীকেও (৩)। এর মাঝেই আফগান ব্যাটসম্যানদের ওপর ছোটখাটো একটা ঝড় বইয়ে দিয়েছেন ডানহাতি পেসার তাসকিন আহমেদ (২/৩১)। আফগানদের হয়ে এদিন সর্বোচ্চ ৩৬ রানের ইনিংস খেলা রহমতউল্লাহকে নাসির হোসেনের ক্যাচ বানানোর পর তুলে নিয়েছেন সামিউল্লাহ শেনওয়ারির উইকেটটিও। এরপর নবীর বিদায়, ৮৯ রানে ৭ উইকেট খুইয়ে তখন শত রানের নিচে অলআউট হওয়ার শঙ্কায় আফগানিস্তান। লেজের ব্যাটসম্যানরা অবশ্য শেষ পর্যন্ত তা হতে দেয়নি। এই ম্যাচ থেকে আফগানদের প্রাপ্তি আসলে ওইটুকুই! আগের দুই ওয়ানডেতে চরম পরীক্ষা নেয়ার পর দিনটা ক্রিকেটবিধাতা লিখে রেখেছিলেন বাংলাদেশের নামেই। ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও এমন দিনের অপেক্ষায় টাইগাররা। আসন্ন সিরিজে এমন দিন আসুক বার বার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ২৭৯/৮ (তামিম ১১৮, সৌম্য ১১, সাব্বির ৬৫, সাকিব ১৭, মুশফিক ১২, মাহমুদউল্লাহ ৩২*, মোসাদ্দেক ৪, মোশাররফ ৪, মাশরাফি ২, শফিউল ২*; নবী ২/৪১, দওলত ১/৫৮, মিরওয়াইস ২/৪৩, রশিদ ২/৩৯, রহমত ১/৫৯)। আফগানিস্তান : ৩৩.৫ ওভারে ১৩৮/১০ (নওরোজ ৩৩, রহমত ৩৬, নাজিবউল্লাহ ২৬, সামিউল্লাহ ১৩, রশিদ ১৭; মাশরাফি ১/১৫, শফিউল ১/২৮, সাকিব ০/৩৪, মোশাররফ ৩/২৪, তাসকিন ২/৩১, মোসাদ্দেক ১/৫)। ফল : বাংলাদেশ ১৪১ রানে জয়ী। সিরিজ : ২-১ ব্যবধানে জয়ী বাংলাদেশ। ম্যাচসেরা : তামিম ইকবাল। সিরিজসেরা : তামিম ইকবাল।