মুজিবনগরে গাড়ল পালনে অনেকের ভাগ্য ফিরিয়েছে

- আপডেট সময় : ১২:৫৬:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ৮৯০ বার পড়া হয়েছে
মুজিবনগর অফিস/ মেহেরপুর প্রতিনিধি: গাড়ল পালন একটি লাভজনক ব্যবসা। এ ব্যবসায় খরচ কম অথচ লাভ অনেক বেশি। মুজিবনগর উপজেলার তারানগর গ্রামের সিজির আহমেদ গাড়ল পালন করে ভাগ্য ফিরিয়েছেন। তার দেখাদেখি গাড়ল পালনে ঝুঁকেছেন মেহেরপুর ও পার্শ্ববর্তী চুয়াডাঙ্গা জেলার অনেকে। তাদের অনেকে ইতিমধ্যে সফলতা পেয়েছেন।
মেহেরপুর জেলা সদর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে মুজিবনগর উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী গ্রাম তারানগর। ওই গ্রামের মিস্ত্রিপাড়ার দবিরউদ্দিনের ছেলে সিজির আহমেদ গাড়ল পালন শুরু করেন ২০০২ সালে। এতে তিনি ব্যাপক লাভবান হয়েছেন। তার সফলতায় তার নিকট থেকে গাড়ল কিনে চাষ করে মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার অনেকে সফলতার মুখ দেখতে শুরু করেছেন।
গাড়ল পালনকারী সিজির আহমেদ জানান, ২০০২ সালে তার ছেলে সিজির আলম মেহেরপুর বিটিসি (তামাক কোম্পানি)-তে চাকরী করতেন। ওই সময় সিজির আলম সহকর্মীদের মাধ্যমে জানতে পারেন গাড়ল চাষে খরচ কম কিন্তু লাভ অনেক বেশি। বাড়ি ফিরে বাপ-বেটা আলাপ আলোচনা করে ওই বছর ভারত থেকে ৩টি গাড়ল কেনেন। ভারতীয় ওই গাড়ল দেশীয় ভেড়ার মত দেখতে। তবে এটি উন্নত জাত ও এদের লেজ লম্বা হয়। ভেড়ার চেয়ে গাড়লের মাংস সুস্বাদু ও পুষ্টিকর।
এখন তার ২শতাধিক গাড়ল আছে। তিনি দলে মেড়া (পাঠা) হিসেবে রেখেছেন গাড়ল। তিনি বলেন, গাড়ল মাঠে চরে খায়। তাই তাদের বাড়িতে খাওয়ানো জন্য তেমন কোন খরচ নেই। রাতে মেড়াগুলোকে আলাদা করে রাখা হয় এবং বাড়িতে তাদের খাবার দিতে হয়। এছাড়া জন্মের পর এক সপ্তাহ গাড়লের ছোট বাচ্চা আলাদা করে রাখা হয়। গাড়লগুলো মাঠে চরানো এবং বাড়িতে দেখাশুনা ও পরিচর্চার জন্য ৩ জন লোক নিয়োগ করা হয়েছে। দিনে ৩ বার খাওয়া ও বছরে ২ বার জামা-কাপড় প্রদান করার পাশা-পাশি তাদের প্রত্যেককে মসিক ৩ হাজার টাকা করে বেতন দিতে হয়।
সিজির আহমেদ আরো জানান, গাড়ল বছরে ২ বারে ২ থেকে ৮ টা পর্যন্ত বাচ্চা দেয়। দেড় বছর থেকে ২ বছরের পূর্ণ একটি গাড়লে ৪০ থেকে ৫০ কেজি মাংস হয়। পূর্ণ বয়স্ক একটি গাড়ল ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এমুহুর্তে এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে পালনের জন্য ৩ থেকে ৪ মাসের বাচ্ছা বেশি বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি বাচ্চা ৫ থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। খরচ-খরচা বাদ দিয়ে প্রতি বছর গাড়ল পালন থেকে তার ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা লাভ হয়। লাভ দিয়ে সংসার খরচ করার পাশাপাশি তিনি ২ টি মাইক্রোবাস কিনেছেন ও ৩ বিঘা জমি কিনে ওই জমির উপর পুকুর কেটেছেন। চলতি বছরে তিনি আরো দেড় বিঘা মাঠের জমি কিনেছেন।
রোগ বালাই সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে দবিরউদ্দিন আরো বলেন, রোগ-বালাই যাতে কম হয় সেজন্য গাড়লের ঘর বিশেষ ভাবে তৈরি করা হয়েছে। মাটি থেকে প্রায় ৩ ফুট উপরে ঘরে মাচার উপর রাখা হয় গাড়ল। তার পরও মুজিবনগর উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসের মাধ্যমে প্রতিটি গাড়লের খুরা বোগের জন্য বছরে ৩ বার ও পিপিআর রোগের জন্য বছরে একবার প্রতিশোধক টিকা দিয়ে নেয়া হয়। এছাড়া প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার পরামর্শে বাড়িতে গাড়লের অন্যান্য রোগের চিকিৎসা করা হয়।
সব শেষে সিজির আহমেদ বলেন, তার দেখাদেখি গাড়ল পালনে ঝুঁকেছেন মেহেরপুর ও পার্শ্ববর্তী চুয়াডাঙ্গা জেলার অনেকে। ৩ থেকে ৪ মাসের বাচ্চা খুবই বিক্রি হচ্ছে। গত ২/ত বছরে তাদের গ্রামেও ৬ থেকে ৭ বাড়িতে গাড়ল পালন হচ্ছে। তাদের অনেকে ইতিমধ্যে সফলতাও পেয়েছেন।