যে কারণে সন্তু ঘোষিত হলেন মাদার তেরেসা

- আপডেট সময় : ১০:৫৫:০০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ৬২৬ বার পড়া হয়েছে
বিশ্ব ডেস্ক: রবিবার শান্তিতে নোবেল জয়ী ক্যাথলিক সন্ন্যাসিনী মাদার তেরেসাকে সন্ত ঘোষণা করেছেন পোপ ফ্রান্সিস। এক নজর বুলিয়ে নেয়া যাক একজন ব্যক্তির সন্তু উপাধি পাওয়ার প্রক্রিয়ায়। সন্ত ঘোষণা করার আগে কয়েকটি ধাপে কিছু প্রক্রিয়া থাকে। সন্ত হওয়ার যোগ্য কোনও ব্যক্তির সন্তায়নের প্রক্রিয়াটি সাধারণত শুরু হয় তাঁর মৃত্যুর অন্তত পাঁচ বছর পরে। কিন্তু মাদার তেরেসার ক্ষেত্রে পোপ দ্বিতীয় জন পল এই নিয়ম শিথিল করেন। মাদার তেরেসা মারা যান ১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। জন পোপ ১৯৯৯ সালে তাঁর সন্তায়নের পদ্ধতি শুরু করার অনুমতি দেন। এক্ষেত্রে কয়েকটি ধাপে এগুতে হয়। প্রথমে ভক্তরা একটি ডায়োসেস-এর (ক্যাথলিক চার্চের স্থানীয় প্রশাসন) বিশপের কাছে আবেদন জানান যে, ওই ব্যক্তি অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। তাঁকে সন্ত করার কথা বিবেচনা করা হোক। বিশপ অনুমতি দিলে সেই ব্যক্তির লেখাপত্র, বক্তৃতা, উপদেশ ইত্যাদি সন্ধান করে একটি বিশদ জীবনী লেখা হয় এবং তাঁর অলৌকিক ক্ষমতার সাক্ষীদের বয়ান সংগ্রহ করা হয়। এই পর্যায়ে ওই ব্যক্তিকে বলা হয় ‘সারভেন্ট অব গড’ বা ঈশ্বরের সেবক। এরপর সমস্ত তথ্যপ্রমাণ দাখিল করা হয় এক জন ‘পস্ট্যুলেটর’-এর কাছে। তিনি সংশ্লিষ্ট ‘ঈশ্বরের সেবক’ সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহ করে সব কিছু বিবেচনা করে সন্তুষ্ট হলে সন্তায়ন প্রক্রিয়ার একটা ‘পস্ট্যুলেট’ বা প্রাথমিক ভিত তৈরি করেন। পস্ট্যুলেট-এর ভিত্তিতে পোপের কাছে সুপারিশ করা হয় তিনি যেন ঈশ্বরের সেবক-এর মহিমার কথা ঘোষণা করেন। পোপ সেই ঘোষণা করলে ঈশ্বরের সেবক ‘ভেনারেবল’ বা মহিমময় আখ্যায় পরিচিত হন। একটি বৈজ্ঞানিক কমিশন এবং একটি থিয়োলজিকাল কমিশন ‘ভেনারেবল’ মানুষটির সম্পাদিত অন্তত একটি ‘মিরাক্ল’ বা অলৌকিক কীর্তির সাক্ষ্যপ্রমাণ যাচাই করে সেটিকে অলৌকিক বলে স্বীকার করলে পোপের কাছে সেই সিদ্ধান্ত পাঠানো হয়। পোপ যদি মনে করেন, এ সবই সত্যি, তা হলে তিনি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ‘বিয়েটিফিকেশন’ ঘোষণা করেন। এর অর্থ: চার্চ এটা বিশ্বাসযোগ্য মনে করে ওই ব্যক্তির পাপমুক্তি হয়েছে। তিনি আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়ে স্বর্গে প্রবেশ করেছেন। এই পদ্ধতিতে সন্তায়নের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার জন্য দ্বিতীয় অলৌকিক ক্ষমতার প্রমাণের প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় এবং এক্ষেত্রে পোপের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়। মাদার তেরেসাকে সন্ত ঘোষণার জন্যে যে দুটি অলৌকিক ঘটনা পোপ অনুমোদন করেন তার একটি ঘটেছে ভারতে। মনিকা বেসরা নামের এক নারী বলেন তার ওভারিয়ান ক্যান্সার সেরেছে ১৯৯৮ সালে মাদার তেরেসার আশীর্বাদে। এর এক বছর আগে মারা গিয়েছিলেন তেরেসা। এদিকে ব্রাজিলিয়ান মার্সিলো হাদ্দাদ বলেছেন, মাদার তেরেসার কাছে তার স্ত্রীর প্রার্থনার কারণে ব্রেইন টিউমার সেরে গেছে। গত বছর এই ঘটনার অনুমোদন দিয়েছে ক্যাথলিক চার্চ। রবিবার সেইন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় মাদার তেরেসার সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করেন কার্ডিনাল অ্যাঙ্গেলো আমাতো। এরপর তিনি পোপ ফ্রান্সিসকে সন্তু হিসেবে তেরেসার নাম ঘোষণার আহ্বান জানান। পোপ ফ্রান্সিস বলেন, প্রযোজ্য আলোচনা ও ঐশ্বরিক সহায়তার জন্য প্রার্থনা ও আমদের বিশপ ব্রাদারদের পরামর্শ নেয়ার পরে আমরা কলকাতার আশীর্বাদপ্রাপ্ত তেরেসাকে সন্তু হিসেবে অধিভুক্ত করছি, নির্দেশ দেয়া হচ্ছে পুরো চার্চ (ক্যাথলিক) তাকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করবে সন্তু হিসেবে। সন্ত ঘোষিত হওয়ার পর থেকে এখন তাঁর নামে ‘হোলি মাস’ হতে পারবে। চার্চ নামাঙ্কিত হতে পারবে তেরেসার নামে এবং ছবিতে তাঁর মাথার পিছনে ‘হেলো’ বা জ্যোতির্বলয় থাকতে পারবে। টেলিগ্রাফ ও এএফপি।