চুয়াডাঙ্গা ও জীবননগরে ‘যুদ্ধকালীন বীরত্বগাঁথা’ শুনানোর অনুষ্ঠানে
শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনালেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা
- আপডেট সময় : ০৭:৪৮:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১ বার পড়া হয়েছে
সমীকরণ প্রতিবেদক:
নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদেরকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ‘যুদ্ধকালীন বীরত্বগাঁথা’ গল্প শুনিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা ও জীবননগরে বীর মুক্তিযোদ্ধারা। গতকাল রোববার পৃথক আয়োজনে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের এ গল্প শোনার বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
চুয়াডাঙ্গা:
নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদেরকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ‘যুদ্ধকালীন বীরত্বগাঁথা’ গল্প শুনিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার বীর মুক্তিযোদ্ধারা। গতকাল রোববার সকাল নয়টায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন প্রকল্পের আওতায় চুয়াডাঙ্গা ভিক্টোরিয়া জুবিলি (ভি জে) সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) এবং বাংলাদেশ সরকারের যুগ্ম সচিব শাহ আলম সরদার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের জীবন বাজী রেখে দেশকে স্বাধীন করেছেন। দেশকে স্বাধীন করার জন্য তারা শহীদ হয়েছেন। দেশের প্রতি তাদের গভীর ভালোবাসার কারণেই তারা জীবন দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলার এই অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানবে এবং তাদের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মও মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বগাথা জানতে পারবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহিদ হন এবং ২ লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারান। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত এক স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশ। তাঁর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালের মধ্যে একটি স্মার্ট বাংলাদেশের যে ঘোষণা দিয়েছেন তার কারগর হবে আজের শিক্ষার্থীরা। তাই তাদেরকে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলতে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।‘
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শামিম ভূইঁয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও বাংলাদেশ সরকারের উপ-সচিব ড. নুরুল আমিন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শারমিন আক্তার। অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ‘যুদ্ধকালীন বীরত্বগাঁথা’ গল্প শোনান বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিট কমান্ডের সাবেক কমান্ডার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু হোসেন, সাবেক ডেপুটি ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা হাফিজ উদ্দীন বাবু, সাবেক জেলা ইউনিট কমান্ডার আব্দুল মাবুদ জোয়ার্দ্দার ও জেলা ইউনিটের সাবেক কার্যকরি সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মুক্তার আলী। মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধে কীভাবে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন সেসব ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাঁথা গল্প শুনতে অনুষ্ঠানে অংশ নেয় চুয়াডাঙ্গা ভি জে সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, আলিয়া মাদ্রাসা ও বদরগঞ্জ কলেজের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা মুক্তিযোদ্ধাদের গল্প শোনার সময় যুদ্ধের বিভিন্ন কিছু জানতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রশ্নের উত্তর দেন। বীর মুক্তিযোদ্ধারা এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করায় আয়োজক ও সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসচর্চা বৃদ্ধি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্ম গড়ে তোলার লক্ষ্যে এ অনুষ্ঠান সময়োপযোগী। ‘দৃঢ় আদর্শ ও চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম। মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা এ দেশ স্বাধীন করেছি। এখন নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে এবং এ চেতনা ধারণ করতে হবে।’ পরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় এবং বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটি প্রানবন্ত উপস্থাপনায় দারুণ করে তোলেন চুয়াডাঙ্গা কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা নুসরাত জাহান করবি।
জীবননগর:
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন প্রকল্প জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে জীবননগরে শিক্ষার্থীদের ‘যুদ্ধকালীন বীরত্বগাঁথা‘ শোনালেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। গতকাল রোববার জীবননগর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হাসিনা মমতাজের সভাপতিত্বে শিক্ষার্থীদের যুদ্ধকালীন বীরত্বগাঁথা শোনানো হয়। উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী এক এক করে চারজন বীর মুক্তিযোদ্ধার মুখে শোনে মুক্তিযুদ্ধে তাদের বীরত্বগাঁথা সেসব সম্মুখ যুদ্ধ, যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে প্রেরণার ইতিহাস, বাঙালিদের প্রতি পাকিস্তানিদের নির্মমতার কথা ও রাজাকারদের আস্ফালন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ ও আত্মত্যাগের কথা। কীভাবে তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে সামনে রেখে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে চেতনায় ধারণ করে লাঠি দিয়ে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, কীভাবে যুদ্ধে আহতদের যুদ্ধ ময়দান থেকে উদ্ধার করে সেবা দিয়েছেন, হানাদার বাহিনীকে কীভাবে পর্যুদস্ত করেছেন শিক্ষার্থী শোনে সেসব কথা।
উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা দলিল উদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা বদর উদ্দিন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমান রহমান শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের যুদ্ধকালীন ঘটনা তুলে ধরেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জামুকার বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন প্রকল্পের যুগ্ম সচিব শাহ আলম সরদার।
জীবননগর উপজেলা একাডেমি সুপারভাইজার আব্দুল জব্বারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন প্রকল্পের উপসচিব ড. মো. রুহুল আমিন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তিথি মিত্রসহ স্থানীয় সাংবাদিক এবং উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরে কর্মকর্তারা। বক্তারা বলেন, এই ধরনের আয়োজন শুধু উপজেলা পর্যায়ে সীমাবদ্ধ না রেখে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে দেওয়া উচিত। আমাদের নতুন প্রজন্ম স্বাধীনতার সূর্য সন্তানদের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের অজানা ইতিহাস শুনতে পারলে তাদের মধ্যে দেশপ্রেম আরও জাগ্রত হবে। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস সম্পর্কে তারা জানতে পারবে। একইসাথে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে ধরনের আয়োজনের জন্যে জামুকা ও প্রকল্প পরিচালককে ধন্যবাদ দেন।