চুয়াডাঙ্গা ১২:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৯ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
কালিদাসপুর স্টুডিও’র মধ্যে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে গণধোলাই নাগদাহ ও খাসকররা ইউনিয়ন আ.লীগের কর্মী সভায় এমপি ছেলুন জোয়ার্দ্দার কলেজিয়েট স্কুলের উপাধ্যক্ষ শামিম রেজার ৫২তম জন্মবার্ষিকী পালন বারাদী ইউনিয়নে গণসংযোগ, পথসভা ও লিফলেট বিতরণকালে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে স্বেচ্ছাসেবকদের বিরুদ্ধে রোগীর স্বজনের অভিযোগ আলমডাঙ্গায় পুত্রবধূর বটির কোপে শাশুড়ি জখম বাংলাদেশিদের ওপর মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া নিউজিল্যান্ডের কাছে বড় ব্যবধানে হারলো বাংলাদেশ মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে পুলিশ-আমলা-বিচারাঙ্গন সবার মধ্যে আতঙ্ক আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা

বাংলাদেশে ভিন্নমত দমনের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:১৫:১৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ৭ বার পড়া হয়েছে
সময়ের সমীকরণ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সমীকরণ প্রতিবেদন:
গত শুক্রবার নিউ ইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয় বাংলাদেশে সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং গুমের ঘটনাগুলো ট্র্যাক করেছেন এমন দুইজন বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মীকে বৃহস্পতিবার দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এর ফলে, দেশটিতে নতুন করে ভিন্নমত দমনের মাত্রা বৃদ্ধি সম্পর্কে শঙ্কা জেগে উঠেছে। রাজধানী ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান এবং পরিচালক এ এস এম নাসিরুদ্দিন এলানকে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের অধীনে ভুল তথ্য ছড়ানোর জন্য দোষী সাব্যস্ত করেছে।

মানহানিকর মনে করে এমন কিছু মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে আইনটি সরকারকে গ্রেফতার এবং বিচারের বিস্তৃত ক্ষমতা প্রদান করেছে।
আগামী নির্বাচনের আগে ১৭ কোটি মানুষের ওপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের নিয়ন্ত্রণ শক্ত করে ধরে রেখেছেন। ভিন্নমতের কণ্ঠকে হয়রানি ও দমন করার জন্য গত ১৪ বছর ধরে তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব ব্যাপকভাবে দখল করেছেন। তেমনি একটি প্রতিষ্ঠান হলো দেশটির বিচার বিভাগ। (মানবাধিকার কর্মীদের ঘটনাটি) বিচার বিভাগকে ব্যবহার করতে শেখ হাসিনার বিস্তৃত প্রচারণার সর্বশেষ নজির। ক্রমবর্ধমানভাবে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা বিচারব্যবস্থায় বিরোধীদলীয় সমর্থক, নেতাকর্মী এবং সাংবাদিকরা আটকা পড়েছেন। আদালতের কক্ষগুলো তাদের দিয়ে ঠাসা।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের নেতা মিস্টার খান এবং মিস্টার এলানের বিরুদ্ধে মামলাটির সূচনাÑ এক দশক আগের একটি নৃশংস ঘটনা নিয়ে তাদের করা একটি ‘ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং রিপোর্ট’ থেকে। ২০১৩ সালের ওই রিপোর্টে দেখা গেছে, একটি ইসলামী সংগঠন কর্তৃক আয়োজিত একটি সমাবেশ সাফ করার জন্য পুলিশ গুরুতর নির্যাতন চালিয়েছে।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নামের সংগঠনটি ওই বছরের মে মাসে নবী মুহাম্মাদ (সা.) কে নিয়ে (তাদের ভাষায়) আপত্তিকর মন্তব্য ও কার্টুনের প্রতিবাদে ঢাকাকে অচল করে দেয়। তার জবাবে, পুলিশ গভীর রাতের ক্র্যাকডাউনে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং সহিংসতা চালায়।
বিরোধী দলগুলো শত শত মানুষ নিহত হওয়ার অভিযোগ করেছিল। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী সংখ্যাটি ছিল আনুমানিক ডজনখানেক থেকে ৫০-এর মধ্যে। অধিকারের রিপোর্ট জানায়, নিহত ৬১ জনের নাম পাওয়া গেছে।

রিপোর্টটি প্রকাশের পরপরই, মিসেস হাসিনার সরকার ওই দুই মানবাধিকার কর্মীকে আটক করে। মিস্টার খানকে ৬২ এবং মিস্টার এলানকে ২৫ দিনের জন্য আটকে রাখে। তাদের রিপোর্টকে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি আইন অনুযায়ী বিকৃত এবং মানহানিকর বলে অভিহিত করা হয়। মিসেস হাসিনার কর্মকর্তারা বলতে থাকেন, অপারেশনের সময় কেউ নিহত হয়নি। তিনি সংসদে বলেছিলেন, হেফাজতে ইসলামের সদস্যরা ‘গায়ে লাল রঙ মেখে’ ভুয়া মৃত্যুর ঘটনা ঘটিয়েছে।

এক যৌথ চিঠিতে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ ৩০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, দুই মানবাধিকার কর্মীকে দোষী সাব্যস্ত করার বিষয়টিকে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নথিভুক্ত করার প্রতিশোধ’ বলে অভিহিত করেছে। তারা মানবাধিকার কর্মীদের মুক্তি চেয়েছে।

সংস্থাগুলো বলছে, তহবিল পেতে বাধা দেয়া এবং রেজিস্ট্রেশন নবায়ন না করাসহ বিভিন্নভাবে সরকার মানবাধিকার কর্মীদের এবং অধিকারকে হয়রানি করতে অব্যাহত প্রচারণা চালালেও- বহু মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত র‌্যাবের কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর সম্প্রতি ২০১৩ সালের মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছিল। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা আনার জন্য অধিকারের মতো মানবাধিকার সংস্থাগুলোর রিপোর্টগুলোকে দায়ী করেছেন। যৌথ চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘হয়রানি, ভয়ভীতি এবং প্রতিশোধের ভয় ছাড়াই মানবাধিকার কর্মীদের প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে দেয়া উচিত। যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নথিভুক্ত এবং প্রকাশ করেন, তাদের বিচার ও শাস্তি দেয়ার পরিবর্তে; সরকারের উচিত (ঘটনাগুলো) তদন্ত করা এবং (মানবাধিকার) লঙ্ঘনকারী অপরাধীদের জবাবদিহি করা।’

বাংলাদেশ সরকার এক বিবৃতিতে, অধিকারকে ‘ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণিত রেকর্ড থাকা অসঙ্গত ও রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট একটি সত্তা’ বলে অভিহিত করেছে। সরকারের ভাষ্য : বিচার বিভাগ ‘প্রমাণের ভিত্তিতে এবং আইন অনুসারে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে’।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বাংলাদেশে ভিন্নমত দমনের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে

আপডেট সময় : ০৯:১৫:১৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সমীকরণ প্রতিবেদন:
গত শুক্রবার নিউ ইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয় বাংলাদেশে সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং গুমের ঘটনাগুলো ট্র্যাক করেছেন এমন দুইজন বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মীকে বৃহস্পতিবার দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এর ফলে, দেশটিতে নতুন করে ভিন্নমত দমনের মাত্রা বৃদ্ধি সম্পর্কে শঙ্কা জেগে উঠেছে। রাজধানী ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান এবং পরিচালক এ এস এম নাসিরুদ্দিন এলানকে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের অধীনে ভুল তথ্য ছড়ানোর জন্য দোষী সাব্যস্ত করেছে।

মানহানিকর মনে করে এমন কিছু মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে আইনটি সরকারকে গ্রেফতার এবং বিচারের বিস্তৃত ক্ষমতা প্রদান করেছে।
আগামী নির্বাচনের আগে ১৭ কোটি মানুষের ওপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের নিয়ন্ত্রণ শক্ত করে ধরে রেখেছেন। ভিন্নমতের কণ্ঠকে হয়রানি ও দমন করার জন্য গত ১৪ বছর ধরে তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব ব্যাপকভাবে দখল করেছেন। তেমনি একটি প্রতিষ্ঠান হলো দেশটির বিচার বিভাগ। (মানবাধিকার কর্মীদের ঘটনাটি) বিচার বিভাগকে ব্যবহার করতে শেখ হাসিনার বিস্তৃত প্রচারণার সর্বশেষ নজির। ক্রমবর্ধমানভাবে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা বিচারব্যবস্থায় বিরোধীদলীয় সমর্থক, নেতাকর্মী এবং সাংবাদিকরা আটকা পড়েছেন। আদালতের কক্ষগুলো তাদের দিয়ে ঠাসা।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের নেতা মিস্টার খান এবং মিস্টার এলানের বিরুদ্ধে মামলাটির সূচনাÑ এক দশক আগের একটি নৃশংস ঘটনা নিয়ে তাদের করা একটি ‘ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং রিপোর্ট’ থেকে। ২০১৩ সালের ওই রিপোর্টে দেখা গেছে, একটি ইসলামী সংগঠন কর্তৃক আয়োজিত একটি সমাবেশ সাফ করার জন্য পুলিশ গুরুতর নির্যাতন চালিয়েছে।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নামের সংগঠনটি ওই বছরের মে মাসে নবী মুহাম্মাদ (সা.) কে নিয়ে (তাদের ভাষায়) আপত্তিকর মন্তব্য ও কার্টুনের প্রতিবাদে ঢাকাকে অচল করে দেয়। তার জবাবে, পুলিশ গভীর রাতের ক্র্যাকডাউনে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং সহিংসতা চালায়।
বিরোধী দলগুলো শত শত মানুষ নিহত হওয়ার অভিযোগ করেছিল। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী সংখ্যাটি ছিল আনুমানিক ডজনখানেক থেকে ৫০-এর মধ্যে। অধিকারের রিপোর্ট জানায়, নিহত ৬১ জনের নাম পাওয়া গেছে।

রিপোর্টটি প্রকাশের পরপরই, মিসেস হাসিনার সরকার ওই দুই মানবাধিকার কর্মীকে আটক করে। মিস্টার খানকে ৬২ এবং মিস্টার এলানকে ২৫ দিনের জন্য আটকে রাখে। তাদের রিপোর্টকে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি আইন অনুযায়ী বিকৃত এবং মানহানিকর বলে অভিহিত করা হয়। মিসেস হাসিনার কর্মকর্তারা বলতে থাকেন, অপারেশনের সময় কেউ নিহত হয়নি। তিনি সংসদে বলেছিলেন, হেফাজতে ইসলামের সদস্যরা ‘গায়ে লাল রঙ মেখে’ ভুয়া মৃত্যুর ঘটনা ঘটিয়েছে।

এক যৌথ চিঠিতে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ ৩০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, দুই মানবাধিকার কর্মীকে দোষী সাব্যস্ত করার বিষয়টিকে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নথিভুক্ত করার প্রতিশোধ’ বলে অভিহিত করেছে। তারা মানবাধিকার কর্মীদের মুক্তি চেয়েছে।

সংস্থাগুলো বলছে, তহবিল পেতে বাধা দেয়া এবং রেজিস্ট্রেশন নবায়ন না করাসহ বিভিন্নভাবে সরকার মানবাধিকার কর্মীদের এবং অধিকারকে হয়রানি করতে অব্যাহত প্রচারণা চালালেও- বহু মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত র‌্যাবের কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর সম্প্রতি ২০১৩ সালের মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছিল। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা আনার জন্য অধিকারের মতো মানবাধিকার সংস্থাগুলোর রিপোর্টগুলোকে দায়ী করেছেন। যৌথ চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘হয়রানি, ভয়ভীতি এবং প্রতিশোধের ভয় ছাড়াই মানবাধিকার কর্মীদের প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে দেয়া উচিত। যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নথিভুক্ত এবং প্রকাশ করেন, তাদের বিচার ও শাস্তি দেয়ার পরিবর্তে; সরকারের উচিত (ঘটনাগুলো) তদন্ত করা এবং (মানবাধিকার) লঙ্ঘনকারী অপরাধীদের জবাবদিহি করা।’

বাংলাদেশ সরকার এক বিবৃতিতে, অধিকারকে ‘ভুল তথ্য প্রচারের প্রমাণিত রেকর্ড থাকা অসঙ্গত ও রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট একটি সত্তা’ বলে অভিহিত করেছে। সরকারের ভাষ্য : বিচার বিভাগ ‘প্রমাণের ভিত্তিতে এবং আইন অনুসারে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে’।