গণতন্ত্র মানবাধিকার নিয়ে বৈশ্বিক উদ্বেগ; ইতিবাচক পদক্ষেপ নিন

- আপডেট সময় : ১০:৫৮:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের করুণ দশা নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা প্রকাশ পাচ্ছে বহির্বিশে^ও। ভারতের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই) এক প্রতিবেদনে ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র লাইফ সাপোর্টে’ বলে মন্তব্য করেছে। দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরে তারা জানিয়েছে, তরুণরা এখন কিভাবে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ দিকে বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো একটি অবাধ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানাচ্ছে। এর মধ্যে সরকার নিজে রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। নিয়ইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে বিরোধীদের কিভাবে মামলার জটে আটকানো হয়েছে তা তুলে ধরেছে। সর্বশেষ মানবাধিকার সংগঠনের দুই কর্মকর্তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। সাইবার আইনের বিতর্কিত ধারায়।
এ অবস্থায় একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা কমে আসছে। সরকারের নানামুখী চাপে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আরো ক্ষীণ হয়েছে। অন্যদিকে গণতান্ত্রিক বিশ্ব ও বৈশ্বিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোরও কণ্ঠ উচ্চকিত। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে মানবাধিকার পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়ে প্রস্তাব পাস হয়েছে। এ সংক্রান্ত এক বিবৃতিতে ইইউ পার্লামেন্ট মানবাধিকার সংগঠনের দুই নেতার বিরুদ্ধে দণ্ডাদেশের নিন্দা জানিয়েছে। তাদের দণ্ডাদেশ নিয়ে ৭২টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় নথিভুক্ত করার প্রতিশোধ হিসেবে এমন বিচারিক উদ্যোগ বলে তারা মন্তব্য করেছে। দু’জনকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে উল্লিখিত সব পক্ষ থেকে।
পিটিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, একসময় নির্বাচন বাংলাদেশে উৎসবের কারণ ছিল। এখন তরুণরা দেখছেন, তাদের নিজের নেতা নির্বাচনের মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। আবার কঠিন আইন প্রয়োগ করে ক্ষমতাবানদের সমালোচনার অধিকার হরণ করা হয়েছে। গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, সমালোচক ও বিরোধী ব্যক্তিদের কারাদণ্ডসহ নৃশংস কৌশলে দমানো হয়। বার্তা সংস্থাটির খবরে মন্তব্য করা হয়, পুলিশ, বিচার বিভাগ ও আমলারা শেখ হাসিনার অনুগত হিসেবে দেখা হয়। একই ধরনের খবর বৈশ্বিক মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যে ধসে গেছে সেটা বিশ্ব জেনে গেছে।
বাংলাদেশের পরিচিতি একটি উদার মুসলিম গণতান্ত্রিক দেশ। সেই হিসেবে সভ্য দেশগুলোর সাথে তার গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। কিন্তু সরকার দেশকে যেদিকে নিয়ে যাচ্ছে তাতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ পুরোপুরি বিলুপ্ত হচ্ছে। আমরা অনুসরণ করছি চীন ও রাশিয়ার কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা। অথচ দেশ দু’টির সাথে আমাদের দেনা-পাওনার সম্পর্ক নেতিবাচক। আমাদের অর্থনৈতিক লেনদেন প্রধানত আমেরিকা ও ইউরোপের সাথে। সরকার গণতন্ত্র থেকে দূরে সরে গেলে তারা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিতে পারে। ইইউ পার্লামেন্ট নতুন বিবৃতিতে তেমনি আভাস দিয়েছে।
বৈশ্বিক উদ্বেগ ও নিন্দা প্রকাশের বিষয়গুলো সরকার আমলে নিচ্ছে না। এ অবস্থায় পশ্চিমারা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রশ্নে বড় পদক্ষেপ নিলে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দ্রব্যমূল্যের চাপে দিশেহারা মানুষের অবস্থা তখন আরো খারাপ হবে। যদিও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষা ও অধিকারের চর্চা করা উচিত বাইরের চাপ ছাড়াই। সরকার তো দেশের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনায় শপথবদ্ধ। তাই এ বিষয়ে সময় থাকতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে এটাই প্রত্যাশিত।