চুয়াডাঙ্গা ০৪:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৯ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
কালিদাসপুর স্টুডিও’র মধ্যে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে গণধোলাই নাগদাহ ও খাসকররা ইউনিয়ন আ.লীগের কর্মী সভায় এমপি ছেলুন জোয়ার্দ্দার কলেজিয়েট স্কুলের উপাধ্যক্ষ শামিম রেজার ৫২তম জন্মবার্ষিকী পালন বারাদী ইউনিয়নে গণসংযোগ, পথসভা ও লিফলেট বিতরণকালে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে স্বেচ্ছাসেবকদের বিরুদ্ধে রোগীর স্বজনের অভিযোগ আলমডাঙ্গায় পুত্রবধূর বটির কোপে শাশুড়ি জখম বাংলাদেশিদের ওপর মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া নিউজিল্যান্ডের কাছে বড় ব্যবধানে হারলো বাংলাদেশ মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে পুলিশ-আমলা-বিচারাঙ্গন সবার মধ্যে আতঙ্ক আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা

ব্যাংক খাতে অস্থিরতা; বিশৃঙ্খলার স্বাভাবিক পরিণতি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:৩০:০১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৪ বার পড়া হয়েছে
সময়ের সমীকরণ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দেশের ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বেশ কদিন ধরে এই অবস্থা চলছে। কয়েকটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদত্যাগ ও আরো কয়েকটির এমডির পদত্যাগের সম্ভাবনা ঘিরে এই অস্থিরতার জন্ম। টালমাটাল অর্থনীতির হাল সামলানোর পরিবর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এই মুহূর্তে ব্যাংক খাতের অস্থিরতা প্রশমনের কাজে ব্যস্ত। ব্যাংকের এমডিরা কেন পদত্যাগ করেন সেটা সংশ্লিষ্ট খাতের সবারই জানা।

গণমাধ্যমের খবরে প্রায়ই বিষয়গুলো উঠে আসে। এমডিরা পেশাদারিত্ব থেকেই ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা তাতে নানাভাবে বাদ সাধেন। আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের নীতিমালা দেয়া পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব। কিন্তু তার পরিবর্তে পরিষদের সদস্যরা নিজেদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেন। নামে-বেনামে নিজেরা ঋণ নেয়া, অবৈধভাবে সুদ মওকুফ করে নেয়া বা ঋণ নিয়মিত করা, কমিশন খাওয়াসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির সুযোগ দিতে প্রায়শ এমডিদের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিষদ সদস্যরা। এর অর্থ, ব্যাংক খাতে কোনো পেশাদারিত্ব নেই। কোনো শৃঙ্খলা নেই। পরিষদের চাপের কাছে নতি স্বীকার করতে চান না এমন এমডিরাই চাকরি ছেড়ে দেন বা দিতে বাধ্য হন। যারা নতি স্বীকার করে পদ ধরে রাখেন তারা পরিচালনা পরিষদকে নানাভাবে অনৈতিক সুবিধা দেন।

ব্যাংক থেকে জনগণের আমানতের শত শত কোটি টাকা পানির মতো বের করে নিতে সহযোগিতা করেন। এভাবে তারা ব্যাংকেরও লালবাতি জ্বালিয়ে দেন, সেই সাথে দেশের অর্থনীতিরও। রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক এর উদাহরণ। অতীতে ন্যাশন্যাল ব্যাংকও বড় উদাহরণ হয়ে আছে। দেশের অর্থনীতি যখন ক্রমশ অধোমুখী যাত্রা শুরু করেছে সেই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এমডিদের পদত্যাগ ঠেকানো নিয়ে ব্যস্ত। তারা এমডিদের ডেকে বৈঠক করছেন, আশ^াস দিচ্ছেন সুরক্ষা দেয়ার। গত দু’দিনে পদত্যাগ করা পদ্মা ব্যাংকের সাবেক এমডি ও পদত্যাগের গুঞ্জন ওঠা আরো কয়েকজনের সাথে আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। তৃতীয় প্রজন্মের একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের সাথে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

এসব বৈঠকে এমডিদের চাকরির সুরক্ষা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আশ্বাস দেয়া হয়। পরিচালকদের চাপে ব্যাংকের এমডিদের পদত্যাগ ঠেকাতে ২০১৪ সালে একটি সুরক্ষা নীতিমালা করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেই নীতিমালা যে কার্যত ব্যর্থ হয়েছে বর্তমানে এমডিদের পদত্যাগের হিড়িক তারই জাজ্বল্যমান প্রমাণ। সুতরাং এখন যে আশ^াস দেয়া হচ্ছে সেটিও ব্যর্থ না হয়ে যায় না। এভাবে কোনো দেশের ব্যাংকিং খাত চলতে পারে না। আর্থিক খাত নিজস্ব নিয়মে, শৃঙ্খলার মধ্যে চলবে এমন নিশ্চয়তা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক আগেই ব্যর্থ হয়েছে। রাজনৈতিক ইচ্ছার কাছে পরাস্ত হয়েছে অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক সব রাষ্ট্রযন্ত্র। ঋণখেলাপিদের বারবার অযৌক্তিক সুবিধা দেয়া, দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ন্যূনতম ব্যবস্থা নিতে অপারগতা এবং রাজনৈতিক চাপে সব ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের ব্যাপারে চোখ বুজে থাকার নীতি অবলম্বন- এ সবই কেন্দ্রীয় ব্যাংককে, বলা যায় অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। এর দুঃখজনক পরিণতি ভোগ করতে হবে সাধারণ মানুষকেই।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ব্যাংক খাতে অস্থিরতা; বিশৃঙ্খলার স্বাভাবিক পরিণতি

আপডেট সময় : ০৯:৩০:০১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

দেশের ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বেশ কদিন ধরে এই অবস্থা চলছে। কয়েকটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদত্যাগ ও আরো কয়েকটির এমডির পদত্যাগের সম্ভাবনা ঘিরে এই অস্থিরতার জন্ম। টালমাটাল অর্থনীতির হাল সামলানোর পরিবর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এই মুহূর্তে ব্যাংক খাতের অস্থিরতা প্রশমনের কাজে ব্যস্ত। ব্যাংকের এমডিরা কেন পদত্যাগ করেন সেটা সংশ্লিষ্ট খাতের সবারই জানা।

গণমাধ্যমের খবরে প্রায়ই বিষয়গুলো উঠে আসে। এমডিরা পেশাদারিত্ব থেকেই ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা তাতে নানাভাবে বাদ সাধেন। আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের নীতিমালা দেয়া পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব। কিন্তু তার পরিবর্তে পরিষদের সদস্যরা নিজেদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেন। নামে-বেনামে নিজেরা ঋণ নেয়া, অবৈধভাবে সুদ মওকুফ করে নেয়া বা ঋণ নিয়মিত করা, কমিশন খাওয়াসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির সুযোগ দিতে প্রায়শ এমডিদের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিষদ সদস্যরা। এর অর্থ, ব্যাংক খাতে কোনো পেশাদারিত্ব নেই। কোনো শৃঙ্খলা নেই। পরিষদের চাপের কাছে নতি স্বীকার করতে চান না এমন এমডিরাই চাকরি ছেড়ে দেন বা দিতে বাধ্য হন। যারা নতি স্বীকার করে পদ ধরে রাখেন তারা পরিচালনা পরিষদকে নানাভাবে অনৈতিক সুবিধা দেন।

ব্যাংক থেকে জনগণের আমানতের শত শত কোটি টাকা পানির মতো বের করে নিতে সহযোগিতা করেন। এভাবে তারা ব্যাংকেরও লালবাতি জ্বালিয়ে দেন, সেই সাথে দেশের অর্থনীতিরও। রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক এর উদাহরণ। অতীতে ন্যাশন্যাল ব্যাংকও বড় উদাহরণ হয়ে আছে। দেশের অর্থনীতি যখন ক্রমশ অধোমুখী যাত্রা শুরু করেছে সেই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এমডিদের পদত্যাগ ঠেকানো নিয়ে ব্যস্ত। তারা এমডিদের ডেকে বৈঠক করছেন, আশ^াস দিচ্ছেন সুরক্ষা দেয়ার। গত দু’দিনে পদত্যাগ করা পদ্মা ব্যাংকের সাবেক এমডি ও পদত্যাগের গুঞ্জন ওঠা আরো কয়েকজনের সাথে আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। তৃতীয় প্রজন্মের একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের সাথে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

এসব বৈঠকে এমডিদের চাকরির সুরক্ষা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আশ্বাস দেয়া হয়। পরিচালকদের চাপে ব্যাংকের এমডিদের পদত্যাগ ঠেকাতে ২০১৪ সালে একটি সুরক্ষা নীতিমালা করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেই নীতিমালা যে কার্যত ব্যর্থ হয়েছে বর্তমানে এমডিদের পদত্যাগের হিড়িক তারই জাজ্বল্যমান প্রমাণ। সুতরাং এখন যে আশ^াস দেয়া হচ্ছে সেটিও ব্যর্থ না হয়ে যায় না। এভাবে কোনো দেশের ব্যাংকিং খাত চলতে পারে না। আর্থিক খাত নিজস্ব নিয়মে, শৃঙ্খলার মধ্যে চলবে এমন নিশ্চয়তা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক আগেই ব্যর্থ হয়েছে। রাজনৈতিক ইচ্ছার কাছে পরাস্ত হয়েছে অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক সব রাষ্ট্রযন্ত্র। ঋণখেলাপিদের বারবার অযৌক্তিক সুবিধা দেয়া, দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ন্যূনতম ব্যবস্থা নিতে অপারগতা এবং রাজনৈতিক চাপে সব ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের ব্যাপারে চোখ বুজে থাকার নীতি অবলম্বন- এ সবই কেন্দ্রীয় ব্যাংককে, বলা যায় অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। এর দুঃখজনক পরিণতি ভোগ করতে হবে সাধারণ মানুষকেই।