খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি মাত্রা ছাড়া; ব্যর্থতার দায় কার

- আপডেট সময় : ০৩:৫৮:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২০ বার পড়া হয়েছে
দেশে দীর্ঘদিন ধরে দ্রব্যমূল্য সাধারণের নাগালের বাইরে। বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের বাজার অনিয়ন্ত্রিত। দিনে দিনে মানুষের জীবনযাত্রা কঠিনতর হয়েছে। সর্বশেষ হিসাবে পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ১২ শতাংশ ছাড়িয়েছে (১২ দশমিক ৫৪) যা গত ১২ বছরে সর্বোচ্চ। আর সার্বিক মূল্যস্ফীতির পরিমাণ ১০ শতাংশের মতো। বিবিএসের হিসাবে গত আগস্টে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। বাজারে প্রায় প্রতিটি জিনিসের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বাজারের ওপর সরকারের কোনো কার্যকর নিয়ন্ত্রণ নেই। বড় বড় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাণিজ্যমন্ত্রীর অনীহা তার বক্তব্যে স্পষ্ট। ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক সমর্থন পেয়ে সরকার তাদেরকে সব ধরনের অপতৎপরতার অবাধ লাইসেন্স দিয়েছে কিনা এমন প্রশ্ন সামনে আসছে। অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরা মূল্যস্ফীতির বর্তমান এ চিত্র ‘ভয়াবহ’ বলে বর্ণনা করছেন। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সরকারের অগ্রাধিকার বলে বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রীরা বক্তব্য বিবৃতি দিলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। সুদের হার বাড়ানো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের অন্যতম উপায়। অনেক দেশ সুদের হার বাড়িয়ে সুফল পেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে সুদহার না বাড়ানোর জন্য গোঁ ধরে ছিল সরকার। যখন সুদহার কমানো হলো, ততদিনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আমদানিতে কর রেয়াত দেয়াও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের আরেকটি কার্যকর উপায়। ডলারের অভাবে দেশে আমদানি বন্ধের উপক্রম। কর ছাড় দেয়া তো পরের কথা। সরকার গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের নিচে রাখবে বললেও কার্যত তা হয়নি। এ পরিস্থিতির দায় কার? সরকারের দায় আছে নিঃসন্দেহে। তবে এ ব্যর্থতার দায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও। জবাবদিহির অভাব এ ক্ষেত্রে বড় অনুঘটক। বিশে^র বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জবাবদিহির আইন আছে। বিভিন্ন দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকই জবাবদিহি করে। ভারতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পরপর তিন প্রান্তিকে ব্যর্থ হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক লিখিত জবাব দিতে বাধ্য। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি লিখে অর্থমন্ত্রীর কাছে জবাব দেন। এমনকি ফিলিপাইনের মতো দেশেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক চিঠি দিয়ে প্রেসিডেন্ট ও দেশবাসীকে জানাতে বাধ্য হন কেন তারা ব্যর্থ হলেন। বর্তমান সরকারের সময়ে বাংলাদেশে জবাবদিহির অভাব রাষ্ট্রের এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে পরিণত। মন্ত্রীরা যা ইচ্ছা তাই বলে পার পেয়ে যান। সিন্ডিকেটের গায়ে আঁচড় কাটা যাবে না এমন বক্তব্য দেয়ায় বাণিজ্যমন্ত্রীকে ‘ধরব’ বলে সরকারপ্রধান প্রকাশ্যে বললেও মৌখিক জিজ্ঞাসাও করেননি। সে তথ্য স্বয়ং বাণিজ্যমন্ত্রীই জানিয়েছেন।
বাজার ব্যবস্থাপনায় নৈরাজ্যের সুযোগে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়েছেন। তাদের কাছে বাজার এখন অসহায়। মূল্যস্ফীতির এ অবস্থার উন্নতির জন্য মুদ্রা ও রাজস্বনীতির পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নে দ্রুত কিছু সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারের গত ১৫ বছরের কর্মকাণ্ড থেকে মনে হয় না, এসব বিষয়ে তাদের আদৌ কোনো পরিকল্পনা আছে। ফলে মূল্যস্ফীতি নিকট ভবিষ্যতে দ্বিগুণ হয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না; বরং জনগণের মানসিক প্রস্তুতিটা জরুরি।