চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে আ. লীগের ১০ মনোনয়ন প্রত্যাশী এক মঞ্চে
সংবাদ সম্মেলনে বাধা, মারধর ও মোটরসাইকেল ভাঙচুরের অভিযোগ
এ অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি বড়জোর এক মাস থাকবে- আজাদুল ইসলাম আজাদ

- আপডেট সময় : ১১:২৫:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬২ বার পড়া হয়েছে
দর্শনা অফিস:
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দর্শনায় চুয়াডাঙ্গা- ২ আসনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ঐক্যবদ্ধ সংবাদ সম্মেলনে বাধা, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার বেলা তিনটায় দর্শনা বাস স্ট্যান্ড যাত্রী ছাউনীর সামনে পূর্ব ঘোষিত সংবাদ সম্মেলন আয়োজনকে কেন্দ্র করে এ হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ, দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান মন্জুসহ আটজন মনোনয়ন প্রত্যাশী যৌথভাবে বিএনপি, জামায়াতের নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে এই সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেন। চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগার টগরকে পাশ কাটিয়ে আহুত সংবাদ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দর্শনায় উভয় পক্ষের নেতা-কর্মীদের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছিলো। গতকালের সংবাদ সম্মেলনে বাধা প্রদান, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা এরই বর্হিপ্রকাশ বলে স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের মত। গতকাল বিকেল ৩টায় সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে দর্শনা বাসস্ট্যান্ড যাত্রী ছাউনীর সামনে নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনে নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে থাকলে প্রতিপক্ষের নেতা-কর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেন চুয়াডাঙ্গা- ২ আসনে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। পরে পুলিশি হস্তক্ষেপে ঐক্যবদ্ধ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এ ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সংবাদ সম্মেলন শুরু হওয়ার পূর্বেই যে ঘটনাটি ঘটে গেল এটি লজ্জা ও দুঃখজনক। আমাদের কথা বলার অধিকার দিবেন না? সম্মেলনে উপস্থিতি আছে কারা? আমরাই বা কারা? এখানে যারা উপস্থিত আছেন প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মী। এ ঘটনায় সবাইকে অপদস্ত করা হয়েছে। যারা এখানে আসতে চেয়েছিলেন তারা আমাদের নেতা-কর্মী ও সমর্থক। তাদেরকে আসতে দেবে না বলে দেশীয় অস্ত্র ও লাঠি সোটা দিয়ে তাদেরকে মারধর ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। অথচ এর প্রতিকার হচ্ছে না। তবে এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি আর বড়জোর ১৫ দিন থেকে এক মাস পর্যন্ত থাকবে।’
সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সর্বকালের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্ট নিহত সকল শহীদ, জাতীয় চার নেতা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৩০ লক্ষ বাঙালি ও ২ লক্ষ মা বোন যারা সম্ভ্রম হারিয়েছেন তাদের আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মান জানানো হয়। একইসাথে দামুড়হুদার নাটুদহ আট কবর, জীবননগর উপজেলাধীন ধোপাখালীর শহীদ স্মৃতিসৌধ ও দামুড়হুদা উপজেলাধীন পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের হৈবতপুর স্মৃতিসৌধে শায়িত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণকেও স্মরণ করা হয়।
আজাদুল ইসলাম আজাদ তাঁর লিখিত বক্তব্যে আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শোষণ বঞ্চনা, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যেই গোটা বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত করেছিলেন। দেশ স্বাধীনের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যেই পাকিস্তানের প্রেতাত্মা ৭১ এর পরাজিত শক্তি তাদের আন্তর্জাতিক প্রভুদের সক্রিয় সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল অর্জন ও চেতনাকে ধ্বংস ও মুছে ফেলার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর প্রায় ৩০ বছরই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। বাকি বছর গুলোতে স্বাধীনতার পক্ষের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জাতির পিতার সুযোগ্য সন্তান গণতন্ত্রের মানষকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার পরিচালনার সুযোগ পায়। সেই একই অপশক্তি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে হত্যার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময়ে দফায় দফায় মারাত্মক আক্রমণ করে। প্রকাশ্য দিবালোকে গ্রেনেড হামলা করতেও পিছুপা হয়নি। আল্লাহ তা’আলার অশেষ কৃপায় পিতা-মাতা ভাইবোন আত্মীয় স্বজন সবকিছু হারিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা জীবনে বেঁচে আছেন।
তিনি বর্তমান সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বাঙালি জাতির স্বপ্নের পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, উড়াল সেতু, এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ে, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট স্থাপন, পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, রেলওয়ে ব্যাপক উন্নয়ন সাধন, সমুদ্র বিজয়, ছিট মহলে ভারতের সাথে সীমানা নির্ধারণ, পায়রা গভীর সমূদ্র বন্দর ইত্যাদি অসংখ্য বৃহৎ প্রকল্প এই সরকারের অর্জন। এছাড়া লক্ষ লক্ষ গৃহহীন মানুষকে সরকারি জায়গায় ও খরচে গৃহ নির্মাণ করে গৃহহীনদের থাকার ব্যবস্থা করা, সার, ডিজেল কৃষকের নিকট সংক্ষলতা করা, কৃষি, শিক্ষা, শিল্প, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি সহ রাস্তাঘাটের সরকারের বড় অর্জন যে অর্জনের কথা শুধু বাংলাদেশের জনগণই নয় ইউরোপ, আমেরিকা, জাতিসংঘ, বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ সহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের স্বীকৃত। বাংলাদেশ আজ শুধু উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবেই পরিচিত নয়, বিশ্ব সভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত।
আজাদুল ইসলাম আজাদ বর্তমান মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে বলেন, অবশ্যই, আমরা স্বীকার করি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য কোন কোন ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার সকল স্তরের বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষ ভীষণ কষ্টে আছে। এই সমস্যাটি আজ বাংলাদেশেরই নয় বরং এটি বর্তমানে একটি বৈশ্বিক সমস্যা ও গভীর সংকট। সারা পৃথিবী করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ এবং বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরিণতি এই মূল্য বৃদ্ধির কারণ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী কিছু হাইব্রিড নেতাকর্মীর সীমাহীন দুর্নীতি কর্তৃত্ব পরায়ণ ও পরিবারকরণ মনোবৃত্তি ও দায়িত্বজ্ঞানহীন কিছু কর্মকাণ্ডে
বর্তমান গণমুখী সরকারের গগনচুম্বী ভাবমূর্তি অনেকাংশেই ম্লান করেছে। দেশ, জনগন ও দলের স্বার্থে এদেরকে চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
সংবাদ সম্মেলন থেকে পরীক্ষিত কর্মীদেরকে বাছাই করে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দিলে নির্বাচনি বৈতরণী যেমন পার হওয়া যাবে, সেই সাথে দেশ, দল ও দলের প্রাণশক্তি কর্মীরাও বাঁচবে বলে দাবি করা হয়।
দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান মন্জুর সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন ঢাকাস্থ চুয়াডাঙ্গা জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মির্জা শাহরিয়া মাহমুদ লণ্টু, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ড. হামিদুর রহমান, জীবননগর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম, জীবননগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ অমল, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সদস্য অ্যাড. শাহরিয়ার কবির, দর্শনা সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি এয়ার কমান্ডার আবু বক্কর ও সকলের সময় পত্রিকার সম্পদক ও প্রকাশক নুর হাকিম।
সংবাদ সম্মেলনে নেতারা জানান আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উপস্থিত দশ জন মনোনয়ন প্রত্যাশ মধ্যে থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন তার পক্ষে আমরা হাতে হাত মিলিয়ে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করব।