চুয়াডাঙ্গা ০৫:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৯ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
কালিদাসপুর স্টুডিও’র মধ্যে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে গণধোলাই নাগদাহ ও খাসকররা ইউনিয়ন আ.লীগের কর্মী সভায় এমপি ছেলুন জোয়ার্দ্দার কলেজিয়েট স্কুলের উপাধ্যক্ষ শামিম রেজার ৫২তম জন্মবার্ষিকী পালন বারাদী ইউনিয়নে গণসংযোগ, পথসভা ও লিফলেট বিতরণকালে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে স্বেচ্ছাসেবকদের বিরুদ্ধে রোগীর স্বজনের অভিযোগ আলমডাঙ্গায় পুত্রবধূর বটির কোপে শাশুড়ি জখম বাংলাদেশিদের ওপর মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া নিউজিল্যান্ডের কাছে বড় ব্যবধানে হারলো বাংলাদেশ মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে পুলিশ-আমলা-বিচারাঙ্গন সবার মধ্যে আতঙ্ক আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা

নিরক্ষরমুক্ত দেশ গড়ার কাজ বন্ধ; উদাসীনতা গ্রহণযোগ্য নয়

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:০৭:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২১ বার পড়া হয়েছে
সময়ের সমীকরণ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সাক্ষরতা ও উন্নয়ন নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটি চিন্তা করা যায় না। সুস্থ সুন্দর দৈনন্দিন জীবনের জন্যও সাক্ষরতা দরকার। যেসব দেশে সাক্ষরতার হার ভালো, তাদের জনগণের স্বাস্থ্য ভালো, উৎপাদনক্ষমতা ভালো, সিদ্ধান্ত নেয়ার সক্ষমতাও বেশি। এটি মানবসম্পদ উন্নয়নে জরুরি। তাই বিশ্বের সব দেশ শতভাগ সাক্ষরতা অর্জন করতে চায়। কিন্তু আমাদের অবস্থা ভিন্ন। এমনকি পূর্ব আফ্রিকার যে দেশটিকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ট্রল হয়, সেই উগান্ডাও সাক্ষরতায় আমাদের চেয়ে এগিয়ে।

আমাদের প্রায় ২৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় চার কোটি মানুষ নিরক্ষর। প্রতি চারজনে একজন স্বাক্ষর জ্ঞানহীন। তারা চোখ থাকিতে অন্ধ। আমাদের দুর্ভাগ্য, তাদের আলোকিত করার গুরুত্বও সরকার বুঝছে না। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এ বছর দেশে সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। তবে জুলাইয়ে প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, প্রায়োগিক সাক্ষরতার হার ৬২ দশমিক ৯২ শতাংশ। সে হিসাবে প্রায় ৪০ শতাংশ জনগোষ্ঠী নিরক্ষর। যারা পড়তে, লিখতে বুঝতে ও গণনা করতে পারেন তারা প্রায়োগিক সাক্ষরতাসম্পন্ন বলে ধরা হয়। বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ২০১৪ সালের মধ্যে দেশকে নিরক্ষরমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এর পর ২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতিতেও একই লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। তবে টানা তিন মেয়াদেও তা পূরণ সম্ভব হয়নি; বরং বর্তমানে নিরক্ষরমুক্ত করার সরকারি সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। দেশে সাক্ষরতা-সংক্রান্ত কর্মসূচি পরিচালনা করে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো (বিএনএফই)। সংস্থার মহাপরিচালক জানান, ১০টি প্রকল্প তৈরি করেছিলেন। কোনোটিই অনুমোদন হয়নি। তাই নতুন কোনো কার্যক্রম নেই।

বাস্তবতা হলো, এ খাতে সরকারের বরাদ্দ একেবারে সামান্য। সরকার কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু নিরক্ষরতা দূরীকরণে এক যুগ আগের মাত্র তিন হাজার কোটি টাকার প্রকল্প কেন অর্থের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়লো বোধগম্য নয়। আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো, এ নিয়ে তখন কিছু তোড়জোড় থাকলেও পরে সব থেমে যায়। কাগজ-কলমে দেখানো আর বাস্তবতা এক নয়। সরকারের উদাসীনতায় নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ গড়া কঠিন হবে।

গত কয়েক বছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, বছরে প্রায় ১ শতাংশ করে সাক্ষরতার হার বাড়ছে। এ হারে বাড়লে শতভাগ সাক্ষরতা হতে আরো ২৫-৩০ বছর লাগবে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে হলে দেশকে নিরক্ষরমুক্ত করতে হবে। এ গতি দিয়ে সেই লক্ষ্যের কাছে পৌঁছানো দুরূহ। যেখানে এখনো প্রায় ১৪ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ে। ঝরেপড়া বন্ধ করা এবং বিদ্যালয়ের বাইরের জনগোষ্ঠীকে বিশেষ কর্মসূচির আওতায় অক্ষরজ্ঞান দিতে না পারলে নিরক্ষরতার হার কমানো অসম্ভব। নিরক্ষরতা দূরীকরণে দেশের শিক্ষার্থীদের কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন অনেক শিক্ষাবিদ। পরিকল্পিত ও কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজশিক্ষার্থীদের মাধ্যমে স্বল্পসময়ের মধ্যে দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর করা সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছা।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

নিরক্ষরমুক্ত দেশ গড়ার কাজ বন্ধ; উদাসীনতা গ্রহণযোগ্য নয়

আপডেট সময় : ০৩:০৭:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সাক্ষরতা ও উন্নয়ন নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটি চিন্তা করা যায় না। সুস্থ সুন্দর দৈনন্দিন জীবনের জন্যও সাক্ষরতা দরকার। যেসব দেশে সাক্ষরতার হার ভালো, তাদের জনগণের স্বাস্থ্য ভালো, উৎপাদনক্ষমতা ভালো, সিদ্ধান্ত নেয়ার সক্ষমতাও বেশি। এটি মানবসম্পদ উন্নয়নে জরুরি। তাই বিশ্বের সব দেশ শতভাগ সাক্ষরতা অর্জন করতে চায়। কিন্তু আমাদের অবস্থা ভিন্ন। এমনকি পূর্ব আফ্রিকার যে দেশটিকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ট্রল হয়, সেই উগান্ডাও সাক্ষরতায় আমাদের চেয়ে এগিয়ে।

আমাদের প্রায় ২৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় চার কোটি মানুষ নিরক্ষর। প্রতি চারজনে একজন স্বাক্ষর জ্ঞানহীন। তারা চোখ থাকিতে অন্ধ। আমাদের দুর্ভাগ্য, তাদের আলোকিত করার গুরুত্বও সরকার বুঝছে না। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এ বছর দেশে সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। তবে জুলাইয়ে প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, প্রায়োগিক সাক্ষরতার হার ৬২ দশমিক ৯২ শতাংশ। সে হিসাবে প্রায় ৪০ শতাংশ জনগোষ্ঠী নিরক্ষর। যারা পড়তে, লিখতে বুঝতে ও গণনা করতে পারেন তারা প্রায়োগিক সাক্ষরতাসম্পন্ন বলে ধরা হয়। বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ২০১৪ সালের মধ্যে দেশকে নিরক্ষরমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এর পর ২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতিতেও একই লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। তবে টানা তিন মেয়াদেও তা পূরণ সম্ভব হয়নি; বরং বর্তমানে নিরক্ষরমুক্ত করার সরকারি সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। দেশে সাক্ষরতা-সংক্রান্ত কর্মসূচি পরিচালনা করে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো (বিএনএফই)। সংস্থার মহাপরিচালক জানান, ১০টি প্রকল্প তৈরি করেছিলেন। কোনোটিই অনুমোদন হয়নি। তাই নতুন কোনো কার্যক্রম নেই।

বাস্তবতা হলো, এ খাতে সরকারের বরাদ্দ একেবারে সামান্য। সরকার কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু নিরক্ষরতা দূরীকরণে এক যুগ আগের মাত্র তিন হাজার কোটি টাকার প্রকল্প কেন অর্থের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়লো বোধগম্য নয়। আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো, এ নিয়ে তখন কিছু তোড়জোড় থাকলেও পরে সব থেমে যায়। কাগজ-কলমে দেখানো আর বাস্তবতা এক নয়। সরকারের উদাসীনতায় নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ গড়া কঠিন হবে।

গত কয়েক বছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, বছরে প্রায় ১ শতাংশ করে সাক্ষরতার হার বাড়ছে। এ হারে বাড়লে শতভাগ সাক্ষরতা হতে আরো ২৫-৩০ বছর লাগবে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে হলে দেশকে নিরক্ষরমুক্ত করতে হবে। এ গতি দিয়ে সেই লক্ষ্যের কাছে পৌঁছানো দুরূহ। যেখানে এখনো প্রায় ১৪ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ে। ঝরেপড়া বন্ধ করা এবং বিদ্যালয়ের বাইরের জনগোষ্ঠীকে বিশেষ কর্মসূচির আওতায় অক্ষরজ্ঞান দিতে না পারলে নিরক্ষরতার হার কমানো অসম্ভব। নিরক্ষরতা দূরীকরণে দেশের শিক্ষার্থীদের কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন অনেক শিক্ষাবিদ। পরিকল্পিত ও কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজশিক্ষার্থীদের মাধ্যমে স্বল্পসময়ের মধ্যে দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর করা সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছা।