চুয়াডাঙ্গা ০১:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৯ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
কালিদাসপুর স্টুডিও’র মধ্যে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে গণধোলাই নাগদাহ ও খাসকররা ইউনিয়ন আ.লীগের কর্মী সভায় এমপি ছেলুন জোয়ার্দ্দার কলেজিয়েট স্কুলের উপাধ্যক্ষ শামিম রেজার ৫২তম জন্মবার্ষিকী পালন বারাদী ইউনিয়নে গণসংযোগ, পথসভা ও লিফলেট বিতরণকালে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে স্বেচ্ছাসেবকদের বিরুদ্ধে রোগীর স্বজনের অভিযোগ আলমডাঙ্গায় পুত্রবধূর বটির কোপে শাশুড়ি জখম বাংলাদেশিদের ওপর মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া নিউজিল্যান্ডের কাছে বড় ব্যবধানে হারলো বাংলাদেশ মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে পুলিশ-আমলা-বিচারাঙ্গন সবার মধ্যে আতঙ্ক আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা

সরকারের ভেতরেই সিন্ডিকেট?

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৯:৪৭:০৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৪৯ বার পড়া হয়েছে
সময়ের সমীকরণ অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সমীকরণ প্রতিবেদন:
নিত্যপণ্যের সিন্ডিকেট এখন সবার জানা৷ ভোজ্য তেল, চাল, পেঁয়াজ, ডিম, চাল, ব্রয়লার মুরগির পর সর্বশেষ হলো ডাব সিন্ডিকেট। আর ইলিশ মাছের এই ভরা মৌসুমে মাছের উচ্চ মূল্যের পেছনেও আছে সিন্ডিকেট। ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘ডাবের অস্বাভাবিক দাম নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমরা বিস্মিত হই। কারণ আমদানি পণ্য বা আরো কিছু পণ্যের নিয়ন্ত্রণ কিছু সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের হাতে আছে। কিন্তু ডাবের ব্যবসা তো করেন হাজার হাজার হাজার ব্যবসায়ী। এখানে কীভাবে সিন্ডিকেট সম্ভব! এখানে যেটা হয়েছে ব্যবসায়ীদের অসৎ মানসিকতা। ডেঙ্গুর অজুহাত তুলে তারা যে যার মতো ডাবের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের মধ্যে এখন যে অসৎ মানসিকতা ঢুকে গেছে সেটা নিয়ন্ত্রণ খুবই কঠিন। তারা সব সময় দাম বাড়ানোর অজুহাত খুঁজতে থাকেন।’ ‘এখন আমরা ইলিশ নিয়ে কাজ করছি। বোঝার চেষ্টা করছি ভরা মৌসুমেও দাম কেন এত বেশি। আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। অভিযান চালানোর আগে আমরা তথ্য নিয়ে যাচাই করি। এখানেও একই পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছি,’ বলেন তিনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘বড় বড় সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এখন যেকোনো পর্যায়ে সিন্ডিকেট হয়। সেটা স্থানীয়, আঞ্চলিক সবখানেই। এখানে ক্ষুদ্র আর বড় ব্যবসায়ী এখন আর বিষয় নয়। যে যেভাবে পারে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে ফেলে।’ এ পর্যন্ত ভোজ্য তেল, পেঁয়াজ, চাল, ডিম, ব্রয়লার মুরগিসহ আরো কিছু পণ্যের শক্তিশালী সিন্ডিকেট চিহ্নিত হয়েছে। যেমন ভোজ্য তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে ছয়-সাতটি প্রতিষ্ঠান, চাল ২০টি প্রতিষ্ঠান, ব্রয়লার মুরগি-ডিম পাঁচ-ছয়টি প্রতিষ্ঠান। তাদের নোটিস করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিদপ্তর এবং প্রতিযোগিতা কমিশন মামলাও করেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী এই সিন্ডিকেট নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন, বাণিজ্যমন্ত্রী আসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন। আর শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেছেন, ‘অর্থনীতি ও বাজার দুই জায়গাতেই সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। যার কারণে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঝরে পড়ছেন এবং পণ্যের মূল্য বেড়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘মন্ত্রীদের ভেতরেই সিন্ডিকেট আছে। শেয়ার কেলেঙ্কারিতে জড়িতরা মন্ত্রী।’ এই কথা বলে অবশ্য কামাল আহমেদ মজুমদার অন্য মন্ত্রীদের তোপের মুখে পড়ে চুপ হয়ে গেছেন। ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘ভোগ্যপণ্য ও কৃষিপণ্যে বড় বড় ব্যবসায়ি গ্রুপ ঢুকে বাজার তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গেছে।’

সিন্ডিকেট কারা?
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) হিসাব বলছে একাদশ জাতীয় সংসদের শপথ নেয়া সংসদ সদস্যদের ১৮২ জনই ব্যবসায়ী। যা মোট সংসদ সদস্যদের ৬২ শতাংশ। আর এই ব্যবসায়ীদের আবার আওয়ামী লীগের মহাজোট থেকে নির্বাচিত হলেন ১৭৪ জন। যা ৬০ দশমিক ৪১ শতাংশ। কনজ্যুমারস অ্যাসেসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, ‘বেশ কয়েকজন মন্ত্রীও আছেন যারা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাদের চালসহ ভোগ্যপণ্যের ব্যবসা আছে। আর ব্যবসায়ী এমপিতো অনেক। ফলে তারা সবাই মিলে নিজেদের মানে ব্যবসায়ীদের স্বার্থই দেখে।’ তার কথা, ‘এর বাইরে আরো যারা প্রভাবশালী ব্যবসায়ী আছেন, তারা ওই মন্ত্রী-এমপিদেরই আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব। তারা সরকার ও প্রশাসনে অনেক প্রভাবশালী ফলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায় না। ব্যবস্থা নেয়া হয় না। সরকারের মধ্যেই সিন্ডিকেট থাকলে যা হয় তাই হচ্ছে।’
একই কথা বলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। তিনি বলেন, ‘এটা তো ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রিত সরকার। তাই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে টুকটাক কথা হলেও কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখিনি। এই সরকার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে বলেও মনে হয় না। কারণ সরকারের মধ্যেই সিন্ডিকেট ঢুকে গেছে। সরকারে ব্যবসায়ীদের প্রভাব যতদিন থাকবে, ততদিন সিন্ডিকেটও থাকবে।’ ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘সিন্ডিকেট আছে, তাদের আমরা চিহ্নিতও করেছি। সরকারের কাছে সে ব্যাপারে বিস্তারিত প্রতিবেদনও দিয়েছি। কিন্তু আমরা ভোক্তা অধিকার আইনে সব বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারি না। আমরা সাধারণত ভোক্তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিই। সিন্ডিকেট, মজুদতদারীর রিুদ্ধে আইন আছে। বিশেষ ক্ষমতা আইন আছে। কর্তৃপক্ষ চাইলে ব্যবস্থা নিতে পারে। আমাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রতিযোগিতা কমিশন ৭৬টি মামলা করেছে। ডিমের ক্ষেত্রে আটটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।’

কেন আইন প্রয়োগ হয় না?
ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯ সালের আর প্রতিযোগিতা কমিশন আইন ২০১২ সালে। ভোক্তা আইনে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদন্ড আর অনুর্ধ্ব দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে। আর প্রতিযোগিতা আইনে সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান আছে। তবে এই আইন সাধারণত খুচরা বিক্রেতাদের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করতে দেখা যায়। সিন্ডিকেট, মজুতদাদের বিরুদ্ধে নয়। আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে এইসব মজুতদার, কালোবাজারি, সিন্ডিকেটবাজদের ধরতেই ওই আইন করেছিলেন। এই আইনে মৃত্যুদণ্ড এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান আছে। কিন্তু এই আইনটি প্রয়োগ করা হচ্ছেনা বাজার সিন্ডিকেটকারীদের বিরুদ্ধে। মনে হয় যেন আইনটি আর নেই।’ তার মতে, ‘বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগ করলে ওই ব্যবসায়ীদের কারাগারে যেতে হবে। সেটা হলে তো অনেকেই বিপদে পড়বেন। যারা ক্ষমতায় আছেন তাদের সঙ্গেই তো এই ব্যবসায়ীরা আছেন। তাদেরকে তো সবাই চেনেন, সরকার চেনে।’
আর নাজের হোসেন বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর ব্যবস্থা নিতে দেখি না। এর কারণ হলো এই সরকার ব্যবসায়ী বান্ধব। তারা জনবান্ধব নয়।’ ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘আমাদের টার্গেট থাকে ভোগ্যপণ্যের সাপ্লাই চেইন যাতে বিঘ্নিত না হয়। তাই আমাদের আইনে যে ব্যবস্থা আছে তাও অনেক সময় প্রয়োগ না করে আমরা ব্যবসায়ীদের মোটিভেটেড করার চেষ্টা করি।’

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

সরকারের ভেতরেই সিন্ডিকেট?

আপডেট সময় : ০৯:৪৭:০৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সমীকরণ প্রতিবেদন:
নিত্যপণ্যের সিন্ডিকেট এখন সবার জানা৷ ভোজ্য তেল, চাল, পেঁয়াজ, ডিম, চাল, ব্রয়লার মুরগির পর সর্বশেষ হলো ডাব সিন্ডিকেট। আর ইলিশ মাছের এই ভরা মৌসুমে মাছের উচ্চ মূল্যের পেছনেও আছে সিন্ডিকেট। ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘ডাবের অস্বাভাবিক দাম নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমরা বিস্মিত হই। কারণ আমদানি পণ্য বা আরো কিছু পণ্যের নিয়ন্ত্রণ কিছু সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের হাতে আছে। কিন্তু ডাবের ব্যবসা তো করেন হাজার হাজার হাজার ব্যবসায়ী। এখানে কীভাবে সিন্ডিকেট সম্ভব! এখানে যেটা হয়েছে ব্যবসায়ীদের অসৎ মানসিকতা। ডেঙ্গুর অজুহাত তুলে তারা যে যার মতো ডাবের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের মধ্যে এখন যে অসৎ মানসিকতা ঢুকে গেছে সেটা নিয়ন্ত্রণ খুবই কঠিন। তারা সব সময় দাম বাড়ানোর অজুহাত খুঁজতে থাকেন।’ ‘এখন আমরা ইলিশ নিয়ে কাজ করছি। বোঝার চেষ্টা করছি ভরা মৌসুমেও দাম কেন এত বেশি। আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। অভিযান চালানোর আগে আমরা তথ্য নিয়ে যাচাই করি। এখানেও একই পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছি,’ বলেন তিনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘বড় বড় সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এখন যেকোনো পর্যায়ে সিন্ডিকেট হয়। সেটা স্থানীয়, আঞ্চলিক সবখানেই। এখানে ক্ষুদ্র আর বড় ব্যবসায়ী এখন আর বিষয় নয়। যে যেভাবে পারে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে ফেলে।’ এ পর্যন্ত ভোজ্য তেল, পেঁয়াজ, চাল, ডিম, ব্রয়লার মুরগিসহ আরো কিছু পণ্যের শক্তিশালী সিন্ডিকেট চিহ্নিত হয়েছে। যেমন ভোজ্য তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে ছয়-সাতটি প্রতিষ্ঠান, চাল ২০টি প্রতিষ্ঠান, ব্রয়লার মুরগি-ডিম পাঁচ-ছয়টি প্রতিষ্ঠান। তাদের নোটিস করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিদপ্তর এবং প্রতিযোগিতা কমিশন মামলাও করেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী এই সিন্ডিকেট নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন, বাণিজ্যমন্ত্রী আসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন। আর শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেছেন, ‘অর্থনীতি ও বাজার দুই জায়গাতেই সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। যার কারণে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঝরে পড়ছেন এবং পণ্যের মূল্য বেড়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘মন্ত্রীদের ভেতরেই সিন্ডিকেট আছে। শেয়ার কেলেঙ্কারিতে জড়িতরা মন্ত্রী।’ এই কথা বলে অবশ্য কামাল আহমেদ মজুমদার অন্য মন্ত্রীদের তোপের মুখে পড়ে চুপ হয়ে গেছেন। ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘ভোগ্যপণ্য ও কৃষিপণ্যে বড় বড় ব্যবসায়ি গ্রুপ ঢুকে বাজার তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গেছে।’

সিন্ডিকেট কারা?
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) হিসাব বলছে একাদশ জাতীয় সংসদের শপথ নেয়া সংসদ সদস্যদের ১৮২ জনই ব্যবসায়ী। যা মোট সংসদ সদস্যদের ৬২ শতাংশ। আর এই ব্যবসায়ীদের আবার আওয়ামী লীগের মহাজোট থেকে নির্বাচিত হলেন ১৭৪ জন। যা ৬০ দশমিক ৪১ শতাংশ। কনজ্যুমারস অ্যাসেসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, ‘বেশ কয়েকজন মন্ত্রীও আছেন যারা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাদের চালসহ ভোগ্যপণ্যের ব্যবসা আছে। আর ব্যবসায়ী এমপিতো অনেক। ফলে তারা সবাই মিলে নিজেদের মানে ব্যবসায়ীদের স্বার্থই দেখে।’ তার কথা, ‘এর বাইরে আরো যারা প্রভাবশালী ব্যবসায়ী আছেন, তারা ওই মন্ত্রী-এমপিদেরই আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব। তারা সরকার ও প্রশাসনে অনেক প্রভাবশালী ফলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায় না। ব্যবস্থা নেয়া হয় না। সরকারের মধ্যেই সিন্ডিকেট থাকলে যা হয় তাই হচ্ছে।’
একই কথা বলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। তিনি বলেন, ‘এটা তো ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রিত সরকার। তাই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে টুকটাক কথা হলেও কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখিনি। এই সরকার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে বলেও মনে হয় না। কারণ সরকারের মধ্যেই সিন্ডিকেট ঢুকে গেছে। সরকারে ব্যবসায়ীদের প্রভাব যতদিন থাকবে, ততদিন সিন্ডিকেটও থাকবে।’ ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘সিন্ডিকেট আছে, তাদের আমরা চিহ্নিতও করেছি। সরকারের কাছে সে ব্যাপারে বিস্তারিত প্রতিবেদনও দিয়েছি। কিন্তু আমরা ভোক্তা অধিকার আইনে সব বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারি না। আমরা সাধারণত ভোক্তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিই। সিন্ডিকেট, মজুদতদারীর রিুদ্ধে আইন আছে। বিশেষ ক্ষমতা আইন আছে। কর্তৃপক্ষ চাইলে ব্যবস্থা নিতে পারে। আমাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রতিযোগিতা কমিশন ৭৬টি মামলা করেছে। ডিমের ক্ষেত্রে আটটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।’

কেন আইন প্রয়োগ হয় না?
ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯ সালের আর প্রতিযোগিতা কমিশন আইন ২০১২ সালে। ভোক্তা আইনে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদন্ড আর অনুর্ধ্ব দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে। আর প্রতিযোগিতা আইনে সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান আছে। তবে এই আইন সাধারণত খুচরা বিক্রেতাদের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করতে দেখা যায়। সিন্ডিকেট, মজুতদাদের বিরুদ্ধে নয়। আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে এইসব মজুতদার, কালোবাজারি, সিন্ডিকেটবাজদের ধরতেই ওই আইন করেছিলেন। এই আইনে মৃত্যুদণ্ড এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান আছে। কিন্তু এই আইনটি প্রয়োগ করা হচ্ছেনা বাজার সিন্ডিকেটকারীদের বিরুদ্ধে। মনে হয় যেন আইনটি আর নেই।’ তার মতে, ‘বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগ করলে ওই ব্যবসায়ীদের কারাগারে যেতে হবে। সেটা হলে তো অনেকেই বিপদে পড়বেন। যারা ক্ষমতায় আছেন তাদের সঙ্গেই তো এই ব্যবসায়ীরা আছেন। তাদেরকে তো সবাই চেনেন, সরকার চেনে।’
আর নাজের হোসেন বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর ব্যবস্থা নিতে দেখি না। এর কারণ হলো এই সরকার ব্যবসায়ী বান্ধব। তারা জনবান্ধব নয়।’ ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘আমাদের টার্গেট থাকে ভোগ্যপণ্যের সাপ্লাই চেইন যাতে বিঘ্নিত না হয়। তাই আমাদের আইনে যে ব্যবস্থা আছে তাও অনেক সময় প্রয়োগ না করে আমরা ব্যবসায়ীদের মোটিভেটেড করার চেষ্টা করি।’