রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ঠেকাতে আরসার নতুন কৌশল

- আপডেট সময় : ০৪:৫৩:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৪০ বার পড়া হয়েছে
সমীকরণ প্রতিবেদন:
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য অনুকূল পরিবেশ হলে স্বেচ্ছায় ফিরতে চায় রোহিঙ্গারা। গত ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গারা তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ফিরতে সভা-সমাবেশ ও মসজিদে মুনাজাতের মাধ্যমে আকুতি জানিয়েছেন। তারা দাবি করেন, প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া যেমন গতিশীল করতে হবে, তেমনি পরিবেশও নিশ্চিত করতে হবে। তবে এতে বেঁকে বসে আছে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গ্রুপ আরসা। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ঠেকাতে এবার নতুন কৌশল হাতে নিয়েছে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)। শিগগিরই বাংলাদেশ সরকার আশ্রিত কিছু রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসন করবে- এমন খবর জানতে পেরে ক্যাম্পে তাদের সহযোগীদের সক্রিয় করে তুলছে গোষ্ঠীটি। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অস্ত্রের মহড়াও করছে আরসা ক্যাডাররা। যেন প্রত্যাবাসনে রোহিঙ্গারা অনীহা প্রকাশ করে। ২০১৮ সাল থেকেই আরসা ক্যাডাররা উখিয়া-টেকনাফ এলাকাকে বিষিয়ে তুলেছে। তাদের অত্যাচার, অপহরণ, মুক্তিপণ বাণিজ্য ও হত্যার ভয়ে সাধারণ রোহিঙ্গা ও স্থানীয়রা আতঙ্কে থাকে সব সময়। রোহিঙ্গারা অভিযোগ করে, আরসাপ্রধান হাফেজ আতাউল্লাহ ওরফে আবু আম্মর জুনুনির নির্দেশে ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের জিম্মি করে রেখেছে আরসা ক্যাডাররা। শিগগিরই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে আমরা শুনেছি। চীনের সহযোগিতায় বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে যাচ্ছে। ক্যাম্পের ভেতরেও এ বিষয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা চলছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে শিগগিরই মাতৃভূমিতে ফিরতে পারবে রোহিঙ্গারা। এ খবর জেনে আরসা কমান্ডাররা প্রত্যাবাসন ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো: মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের দুর্বলতা নেই, প্রস্তুতিরও অভাব নেই। ২০১৮ সালে সব রোহিঙ্গার পরিবারভিত্তিক ডাটাবেজ তৈরি করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মিয়ানমারকে হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু সেই ডাটাবেজের যাচাই-বাছাই এখন পর্যন্ত শেষ করেনি। মাত্র ৫৬ হাজারের মতো সম্পন্ন করেছে মিয়ানমার। তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য আমরা মিয়ানমারের সাথে কাজ করে যাচ্ছি। সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমার থেকে সাড়া পাচ্ছি যে, তারা রোহিঙ্গাদের নিজ ভিটেতে নিয়ে যেতে নমনীয়তা প্রদর্শন করছে। মিয়ানমার বলছে, অন্তত দক্ষিণ মংডু থেকে পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের সেখানে ফেরত নেবে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনা হচ্ছে। আশা করছি, শিগগিরই বহুল প্রত্যাশিত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারব। তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরাতে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। এরপর দু’বার প্রত্যাবাসনের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু মিয়ানমার ও রোহিঙ্গাদের অনীহায় তা ভেস্তে যায়। চলতি বছরে চীনের মধ্যস্থতায় নতুন করে আলোচনায় আসে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। গত ১৫ মার্চ রোহিঙ্গাদের যাচাই-বাছাই করতে টেকনাফে আসে মিয়ানমার প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধি দলটি এক সপ্তাহ টেকনাফে অবস্থান করে কয়েক শ’ রোহিঙ্গা পরিবারের তালিকা যাচাই-বাছাই করে মিয়ানমারে ফিরে যায়। এরপর ৫ মে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সার্বিক পরিস্থিতি কতটা অনুকূলে- তা দেখতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুতে যায় ২০ জন রোহিঙ্গাসহ ২৭ সদস্যের প্রতিনিধিদল। তারপর প্রত্যাবাসনে রোহিঙ্গাদের রাজি করাতে ২৫ মে ফের মিয়ানমার প্রতিনিধিদল আসে টেকনাফে। তারপর কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই মিয়ানমারে ফিরে যায় দলটি। রোহিঙ্গাদের শর্ত আর মিয়ানমারের অনীহার কারণে প্রত্যাবাসনের এ উদ্যোগও আলোর মুখ দেখেনি।
এ দিকে গত রোববার ফেসবুকে একটি আইডি থেকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন না হওয়ার হুমকি দিয়ে অস্ত্রের মহড়া প্রদর্শন করা হয়েছে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ বলছে মিয়ানমারে ফিরে গেলে মগ ছাড়াও আরসা ক্যাডাররা আমাদের ওপর নির্যাতন শুরু করবে। কারণ মিয়ানমার সরকারের কিছু কর্মকর্তা ওই সব আরসা ক্যাডারকে লালন-পালন করে চলেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে ক্যাম্পে এক অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে।
বাংলাদেশ আর্মড পুলিশের ডিআইজি (এফডিএমএন অ্যান্ড এয়ার পোর্টস) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহীল বাকী বলেছেন, উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যেকোনো ধরনের অপরাধ দমন, অবৈধ অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার এবং রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্যদেরকে গ্রেফতারে এপিবিএন পুলিশকে পেশাদারিত্ব বজায় রেখে আরো কঠোর অ্যাকশনে যেতে হবে। তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হত্যা, খুন গুম, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় বন্ধে এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে এপিবিএন পুলিশ, জেলা পুলিশ, বিজিবি এবং র্যাব যৌথভাবে বিশেষ কম্বিং অভিযান শুরু করা হয়েছে। গত বুধবার কক্সবাজার পুলিশ সুপার কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে কাজ করা সরকারি, বেসরকারি ও আর্ন্তজাতিক সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে আর্মড পুলিশের ডিআইজি এ কথা বলেন।