পুলিশ-বিএনপি দফায় দফায় সংঘর্ষ

- আপডেট সময় : ০৮:২০:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ মে ২০২৩ ২৪ বার পড়া হয়েছে
সমীকরণ প্রতিবেদন:
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে মঙ্গলবার পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার পুলিশ, পথচারী ও বিএনপি নেতাকর্মীসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা একটি বিআরটিসি বাসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দলটির কেন্দ্রীয় নেতাসহ অন্তত ১০ জনকে আটক করে। এর বাইরে পদযাত্রা শুরুর আগে লালবাগ থানা বিএনপির পাঁচজন নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। একই দিন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগেও পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশনাকে অধীনস্থ আদালত এবং সরকারের অবজ্ঞা, গায়েবি মামলায় নির্বিচার গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, আওয়ামী সরকারে সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে এ কর্মসূচি পালন করেন দলটির নেতাকর্মীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুই দিনের কর্মসূচির শেষ দিন মঙ্গলবার বেলা ৩টায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে ধানমন্ডি এলাকার বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে থেকে পদযাত্রা শুরু হয়। এটি কাটাবন এলাকায় গিয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পদযাত্রাটি সিটি কলেজের সামনে আসার পর পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে তা আটকে দেয়। এ সময়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করেন। পরে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম রবি নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু একদিকে পুলিশ আটকে দেওয়ায় নেতাকর্মীরা বের হতে পারছিলেন না। মিছিলের মধ্যভাগ থেকে নেতাকর্মীরা পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যেতে চাইলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। এ সময় ক্ষিপ্ত হয়ে ব্যানারে লাগানো বাঁশ ভেঙে পুলিশের দিকে মারতে থাকেন। পুলিশও তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ সময়ে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় ও ঘটনাস্থল থেকে শেখ রবিউল ইসলাম রবি, ধানমন্ডি থানার সাবেক সদস্য সচিব সৈকতকে আটক করে। কিছুক্ষণ পর নেতাকর্মীরা আবারও জড়ো হয়ে ‘ফখরুদ্দিন কনভেনশন সেন্টার’ এর সামনে অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে সেখানে একটি যাত্রীবাহী বিআরটিসি গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। গাড়িতে একটি সিটে আগুন লেগে যাওয়ার পরপরই উপস্থিত পুলিশ সদস্য এবং গাড়ির লোকজন তা নিভিয়ে ফেলেন। এর বাইরে ল্যাব এইড হাসপাতাল মোড়ে পুলিশ বাক্স ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধরা। এ সময় ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। লোকজন ছোটাছুটি শুরু করেন। এ ঘটনার আগেই ওই এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ঘটনার জন্য পুলিশ ও বিএনপি নেতারা পরস্পরকে দোষারোপ করছেন। বিএনপির অভিযোগ, তাদের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা আটকে পুলিশ লাঠিপেটা করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। আর পুলিশ বলছে, বিএনপির মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। রমনা জোনের ডিসি মো. আশরাফ হোসেন বলেন, পুলিশের ওপর বিএনপির একদল নেতাকর্মী হামলা চালায় এবং যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়। ফলে তাদের অ্যাকশনে যেতে হয়। এই হামলায় ৮ থেকে ৯ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ধানমন্ডি থানার ওসি ইকরাম আলী মিয়া বলেন, সায়েন্স ল্যাব এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। ওই ঘটনায় জড়িত অন্যদের ধরতে আশপাশের এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। তাদের নামে পুলিশের কাজে বাধা, গাড়িতে আগুন দেওয়া ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা প্রস্তুতি চলছে। ওসি বলেন, ওই ঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও শটগানের গুলি ছুড়েছে পুলিশ। মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, তাদের এই পদযাত্রা ছিল শান্তিপূর্ণ। ল্যাব এইডের কাছে পদযাত্রা শেষ করে নেতাকর্মীদের নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যেতে বলি। তারাও চলে আসেন। এরপরই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। নেতাকর্মীদের নিরাপদে বাড়ি ফেরার সুযোগ না দিয়ে তাদের ওপর হামলা করে পুলিশ। অনেক কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, অনেকে আহত হয়েছেন। বিএনপির ঘাড়ে দোষ দেওয়ার জন্য এটা সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। বিএনপির এ কর্মসূচিকে ঘিরে দুপুরের পর থেকেই মহানগর দক্ষিণের বিভিন্ন স্থান থেকে থানা-ওয়ার্ড ও ইউনিট পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ধানমন্ডি এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। বেলা পৌনে ৩টার দিকে প্রধান অতিথির সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে গয়েশ্বর চন্দ্ররায় বলেন, শিগগিরই সরকার পতনের আন্দোলন ঘোষণা করা হবে। তাদের লড়াই ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, এ লড়াই দেশের মানুষকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। পাশাপাশি লড়াই হবে তাদের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করার। রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে বিএনপি দাবি আদায় করে নেবে। পদযাত্রায় আরও অংশ নেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। ঢাকা মহানগরের দুই অংশেই প্রত্যেক থানা, ওয়ার্ড আর ইউনিটের নেতাকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ দিন মিছিলে আর সেস্নাগানে মুখর করে তোলেন রাজধানীর দুই এলাকা। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, ভোটাধিকার, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, আর্থিক খাতে লুটপাট আর দুর্নীতির বিষয়গুলোকে এ পদযাত্রায় বেশি প্রাধান্য দেন তারা। মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে গাবতলী বাগবাড়ি থেকে টেকনিক্যাল ও কল্যাণপুর হয়ে পঙ্গু হাসপাতালের সামনে থেকে ৩০০ ফুট রাস্তা পর্যন্ত পদযাত্রায় সংগঠনের আহ্বায়ক আমানউলস্নাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, দেশের শ্রমিক, মজুর আর মধ্যবিত্তদের হালাল উপার্জনে চলার উপায় নেই। প্রতিদিনই প্রত্যেক জিনিসের দাম বাড়ছে কিন্তু বেতন-ভাতা আর উপার্জন বাড়ছে না। এখন আর তারা চলতে পারছেন না, তাদের কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু সেই কষ্টের কথা বলতে গেলে বাধা দেওয়া হয়। এ অবস্থার উত্তরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করতে হবে, রাজপথের আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এই সরকারকে বিদায় করতে না পারলে দেশের অস্তিত্ব থাকবে না, স্বাধীনতা থাকবে না। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, দলের নেতা কামরুজ্জামান রতন, তাবিথ আউয়াল, যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণসহ আরও অনেকে।