জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের ইন্তেকাল

- আপডেট সময় : ০১:৩৮:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ ডিসেম্বর ২০২১ ৪৫৪ বার পড়া হয়েছে
বিশিষ্ট নজরুল গবেষক একুশে পদকপ্রাপ্ত জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।
অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের ছেলে বর্ষণ ইসলাম জানান, গত শুক্রবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বাবাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের লাইফ সার্পোটে রাখা হয়। ২৬ নভেম্বর বিকেলে তাকে হাসপাতালের হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গত ৭ অক্টোবর পেটের ব্যথা নিয়ে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন এই অধ্যাপক। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার ফুসফুসে পানি ধরা পড়ে। সেখানেই চিকিৎসা চলে কিছুদিন। তারপর কিছুটা ভালো বোধ করায় তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। একুশে পদকপ্রাপ্ত জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের মৃত্যুতে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ১৯৩৪ সালের ১ জানুয়ারি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার কলাকান্দা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পরে আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়, মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়, মিশিগান-অ্যান আরবর বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইস্ট ওয়েস্ট সেন্টারে ভাষাতত্ত্বে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন ও গবেষণা করেন। ১৯৫৮ সাল থেকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগ দেন। এরপর থেকেই তিনি নজরুল গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। ২০১৮ সালের ১৯ জুন বাংলাদেশ সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক ঘোষণা করে। একই বছরের ৩ ডিসেম্বর তিনি কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের সভাপতি পদে যোগদান করেন। তিনি বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক। তিনি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ১৯৫২ সালে মহান ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বন্দিশিবিরে নির্যাতিত হন। ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক তার বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা রয়েছে। তিনি অন্তত ৩০টি গ্রন্থের রচয়িতা। সাহিত্য চর্চা ও গবেষণার পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রেও অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে। এছাড়া তিনি একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, নজরুল একাডেমি পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া মাতৃভাষা সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন, বিকাশ, চর্চা, প্রচার-প্রসারে অবদান রাখায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক লাভ করেন।