আন্দোলনের অংক কষছে হেফাজত : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নয় কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটির টার্গেট বিএনপি

- আপডেট সময় : ০৪:০৪:৪৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ মে ২০১৭ ৩৭২ বার পড়া হয়েছে
সমীকরণ ডেস্ক: হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ আপাতত কোনো রাজনৈতিক দলের সরাসরি পক্ষ নেবে না। কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটি আরও কয়েকমাস পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবে। তবে রমজান শুরুর আগে হাইকোর্টের সামনে থেকে তাদের দাবি অনুযায়ী গ্রিকদেবী থেমিসের মূর্তি অপাসরণ করা না হলে রাজপথে নামার হুমকিকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে তারা। তিনবছর আগে শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ ডেকে ব্যর্থতার গ্লানি মুছতে চাচ্ছে হেফাজত। তাদের ধারণা এবার গ্রিকদেবীর মূর্তি অপসারণের দাবিতে রাস্তায় নামলে বা শাপলা চত্বরে সমাবেশ ডাকলে ব্যর্থ হবে না। আর যদি ব্যর্থ না হয় তাহলে পুরনো শক্তি ফিরে পাবে। তাতে সংগঠনের ভিত মজবুত হবে। তখন ভেবে দেখবে কোন রাজনৈতিক দলে ভিড়লে কত লাভ। যেহেতু হেফাজত রাজনৈতিক দল নয় এবং নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত নয়, তাই এমপি নির্বাচন করা বা রাজনীতিতে নেমে পড়া যৌক্তিক মনে করছে না দলটি। কিন্তু ধর্মীয় ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় রাজনৈতিক দলের পূর্ণ সমর্থন প্রত্যাশা করছে হেফাজত। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সংগঠনটি। তবে আওয়ামী লীগ যেহেতু সরকারে তাই হাইকোর্টের গ্রিক মূর্তি অপসারণে শেষ পর্যন্ত হেফাজতের দাবি পূরণ হবে কিনা সংশয়ে আছে সংগঠনটি। এ ক্ষেত্রে তারা রমজানের আগে মূর্তি সরানোর যে আল্টিমেটাম দিয়েছে সেটি পূরণ হয় কিনা দেখতে চায়। যদি দাবিমতো কাজ না হয় তাহলে যেসব রাজনৈতিক দল হেফাজতের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করবে সেসব রাজনৈতিক দলকেই প্রাধান্য দেবে। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে নয় বিএনপিকেই তাদের টার্গেট বেশি। সামনে যদি গ্রিক মূর্তির অপসারণের জন্য রাজপথে নামতেই হয় তাহলে বিএনপির সহায়তা লাগবে বলে মনে করেন হেফাজতের বেশিরভাগ নেতা। আবার অনেক নেতা আন্দোলনে না গিয়ে ধৈর্য ধরে আরও কিছু সময় অপেক্ষা করার পক্ষে। তাদের মতে, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার স্বীকৃতি দিয়েছেন, গ্রিক মূর্তি অপসারণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাই তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। আবার কোনো কোনো হেফাজতনেতা মনে করছেন কওমী মাদ্রাসা শিক্ষার স্বীকৃতি সরকারপ্রধান হিসেবে দিয়েছেন। শেখ হাসিনার জায়গায় অন্য কেউ রাষ্ট্রপ্রধান হলেও হয়তো দিতেন। তাই বলে শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পুলিশি হামলা ভুলে যেতে হবে কেন। তা কি করে সম্ভব। সমর্থন যদি দিতেই হয় তাহলে সেদিন সমাবেশের সমর্থনকারী বিএনপিকেই দিতে হবে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার স্বীকৃতির মতো আরও অনেক দাবি সহজেই পূরণ করা সম্ভব হবে। হেফাজতের কিছু নেতাকর্মী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক স্বৈরশাসক এইচএম এরশাদের জোটে যাওয়ার পক্ষে। কিন্তু শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ মনে করছেন এরশাদের কথার ঠিক থাকে না। শেষ পর্যন্ত হয়তো দেখা গেল এরশাদের জোটই নেই। আবার আওয়ামী লীগেই ঢুকে গেছেন তিনি। তাই তার সঙ্গে যাওয়া ঠিক হবে না। তাই এ মুহূর্তে সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই সম্পৃক্ত না হয়ে স্বতন্ত্র থেকে আন্দোলনে যাওয়া শ্রেয়। শীর্ষ নেতারা বলছেন, হেফাজত হচ্ছে অরাজনৈতিক দ্বীনি ও ইসলামী সংগঠন। তাই এ মূলনীতির মধ্যে থাকলে জনসমর্থন বেশি থাকবে এবং গ্রিক মূর্তি সরানোর আন্দোলন যদি করতেই হয় তাহলে আন্দোলন সফল হবে। এ প্রসঙ্গে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা আহমদ শফীর প্রেস সেক্রেটারি মাওলানা মুনির আহমদ বলেন, হেফাজতে ইসলাম কোনো রাজনৈতিক দলকে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে যে সমর্থন করবে না তা আমাদের সংগঠনের আমির আল্লামা আহমদ শফী বলেছেন। হেফাজত ধর্মীয়, সামাজিক, জাতীয় স্বার্থ রক্ষার ইস্যুতে কর্মসূচি চালিয়ে যাবে। হেফাজত স্বাধীনতার সপক্ষেও কাজ করবে। তবে সংগঠনটির ন্যায়ভিত্তিক আন্দোলন কর্মসূচিতে কোনো রাজনৈতিক দল সমর্থন দিলে তা সাদরে গ্রহণ করা হবে। তাতে তাদের লাভই হবে।