নিত্যপণ্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে

- আপডেট সময় : ০৪:০২:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ মে ২০১৭ ৩১০ বার পড়া হয়েছে
পৃথিবীর অন্যসব দেশে মাহে রমজান এলে প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার প্রতিযোগিতা চলে। কীভাবে রোজাদারদের সেবা করা যায়, সাহারি ও ইফতারকে আরো বর্ণিল করা যায়- এসব কথা মাথায় রেখে ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের ওপর বিশেষ ছাড় দিয়ে থাকেন। ম্যধ্য ও নি¤œ আয়ের মানুষ রমজান এলে একটু সস্তিতে নিঃশ^াস ফেলে। এই মাসে সুন্দরভাবে চলার পরও কিছু সঞ্চয় করা যাবে, কিছু দান করা যাবে- এই ভেবে তাদের প্রশান্তি আরো বেড়ে যায়। এর ঠিক উল্টো চিত্র দেখা যায় বাংলাদেশে। এখানে রমজান যেন এক বিভিষীকার নাম। আমাদের মতো নি¤œ-মধ্য আয় ও উচ্চ-মধ্য আয়ের মানুষের জন্য মাহে রমজান এক বড় আতংক। রমজান মানেই অতিরিক্ত খরচ। অন্য মাসে কোনরকম চললেও রমজানে এসে হোঁচট খেতে হয় মাসের শুরুতেই। দেড়/দুই মাস আগে থেকেই বাড়তে থাকে নিত্যপণ্যের দাম। রমজান যত কাছে আসে বাজারের আগুন তত ছড়িয়ে পড়ে মানুষের ঘরে ঘরে। কত মানুষ যে গোপনে চোখের অশ্রু ফেলে খোদার কাছে প্রার্থনা করেন- ‘হে আল্লাহ! এবারের রমজানটা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোনরকম পার করার ব্যবস্থা করে দাও। এই অল্প টাকায় তুমি অনেক বরকত দিয়ে দাও। হে আল্লাহ!…’
এতক্ষণ যা বললাম, তা আমার বানানো কথা নয়, আবার মস্তিষ্কের অলীক কল্পনাও নয়। রমজানকে কেন্দ্র করে একদল অসাধু মুনাফাখোর ব্যবসায়ীর কারণে সুন্দর রমজানযাপন আমাদের মতো অল্প আয়ের মানুষের জন্য স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আশেপাশের মানুষের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকলেই বুঝা যাবে রমজানের আনন্দের চেয়ে বেদনার ছাপই বেশি গাঢ় তাদের চোখে-মুখে। এ বেদনা অন্য কিছু নয়, অসাধু ব্যবসায়ী কতৃক কৃত্রিমভাবে বাজার অস্থিতিশীল করার ফল। গত মাসের শেষের দিক থেকেই ‘মাহে রমজানকে কেন্দ্র করে দ্রবমূল্যের ঊর্দ্ধগতি। লাগামহীন বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব সামগ্রীর দাম। ছোলা-চিনির দাম লাগাম ছাড়া।’ যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বাজার তদারকি করার একটি কমিটি আছে, তবে ক্রেতা ও পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, ওই কমিটির ভূমিকা ও তত্ত্বাবধান সন্তোষজনক নয়। তাই প্রতিবারের মতো এবারও রমজান আসার দেড় মাস আগে থেকেই নিত্য প্রয়োজণীয় পণ্যের বাজার আগুন হয়ে আছে। বিশ^বাজারে পণ্যের দাম কম হওয়া সত্ত্বেও আমাদের দেশের পাইকারী ও খুচরা বাজারে পণ্যের দাম বেশি রাখা হচ্ছে। শুধু তাই নয়। যেসব পণ্যের দাম ‘বিশ^বাজারে বেড়েছে’ অজুহাতে বাড়ানো হয়েছে, বিশ^বাজারে দাম কমার পরও ওই সব পণ্যের দাম দীর্ঘদিন দেশের বাজারে অপরিবর্তীত অর্থাৎ ‘না কমানো’ অবস্থাতেই আছে। । যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে চলছে, যদি এতে লাগাম না দেওয়া যায় তবে সাধারণ মানুষের সুন্দর রমজানযাপন ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হবে। তাই সরকার ও আইনশৃংখলা বাহিনীর কাছে অনুরোধ, দয়া করে বাজার তদারকির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হোক। ব্যবসায়ীদের বলছি, আপনারাও অতি মুনাফার লোভ থেকে বেরিয়ে এসে সাধারণ মানুষের কথা ভাবুন। নিত্যপণ্য আমাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখুন।