অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি বন্ধে কঠোর হোন

- আপডেট সময় : ০৫:৪৩:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ মে ২০১৭ ৩৬৮ বার পড়া হয়েছে
রমজানকে সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীরা ফের অপতৎরতায় লিপ্ত হয়েছেন। ১৬ মে ২০১৭ তারিখ পত্রিকান্তরে প্রকাশ-ক্রমাগত বাড়ছে ভোজ্যতেলের মূল্য এবং পর্যাপ্ত ছোলা মজুদ থাকাসত্ত্বেও এর মূল্যও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। শুধু এই দুটি পণ্যই নয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় আরো বেশ কিছু পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী। পণ্যদ্রব্যের এই ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ ও স্বল্প আয়ের মানুষের দৈননিন্দন জীবনে যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে এর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নতুন করে নিষ্প্রয়োজন। সরকার ও সংশ্লিষ্ট সব দায়িত্বশীল মহলের তরফে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে নানা রকম আশ্বাস-প্রতিশ্রুতি-অঙ্গীকার ব্যক্ত হয়েছে বটে কিন্তু এর কোনোই সুফল দেখা যাচ্ছে না। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা সাক্ষ্য দিচ্ছে-বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কখনো কখনো অদূরদর্শিতার পরিচয় মিলেছে। ক্রেতা বা ভোক্তাসাধারণ শুধু আশ্বাস আর প্রতিশ্রুতির বানেই ভাসছেন বিদ্যমান বাস্তবতায় এ চিত্রও স্পষ্ট। রমজানে মানুষের চাহিদা সঙ্গত কারণেই বেশি থাকে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা মোতাবেক সরকারের মজুদ ব্যবস্থা যথেষ্ট স্ফীত এ কথা বারবার বলা হলেও বিদ্যমান বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে মূল্যসন্ত্রাসীরা সুযোগ কাজে লাগাতে সদা তৎপর। তাদের এই অপতৎপরতা নতুন কিছু নয়। সিন্ডিকেট কিংবা অসাধু ব্যবসায়ী চক্রের বিষয়টি ইতিপূর্বে বহুবার আলোচনায় এসেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অঙ্গীকারও সরকারের দায়িত্বশীল মহলের তরফে ব্যক্ত হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আজ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তযোগ্য কোনো ব্যবস্থাই নিশ্চিত করা যায়নি বলেই তাদের অপতৎরতার রাশ টেনে ধরা যায়নি। পবিত্র রমজান মাসে অসাধু ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফা লোটার অপতৎরতা আরো যেন বেগবান করে। ভোজ্যতেলের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারে পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ হচ্ছে-মিল মালিকদের অধিক মুনাফা হাতিয়ে নেয়ার প্রবণতার কারণেই এমনটি ঘটছে। পক্ষান্তরে আমদানিকারকদের তরফে দাবি করা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের বুকিং রেট বৃদ্ধি, দেশীয় মিল থেকে পর্যাপ্ত সরবরাহ হ্রাস পাওয়া এবং পাশাপাশি এক শ্রেণীর মুজদদারের কারসাজির কারণে ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে। অন্যদিকে গত অর্থবছর জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছর ৪২ হাজার টন ছোলা বেশি আমদানি হওয়া সত্ত্বেও এ পণ্যটির মূল্য রমজানের আগেই দফায় দফায় বাড়ছে। এক্ষেত্রেও ব্যবসায়ী-আমদানিকারক-সরবরাহকারীদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য মিলেছে। এক কথায় নানা রকম অজুহাত দাঁড় করিয়ে বাজারে অসাধুরা চালাচ্ছেন তুঘলকি কা-। এর নিরসন জরুরি। বাজার ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তযোগ্য ব্যবস্থাই কেবল নিশ্চিত করতে পারে স্থিতিশীল পরিস্থিতি। টিসিবি ইতোমধ্যে সারাদেশে ন্যায্যমূল্যে পাঁচটি পণ্য বিক্রি শুরু করলেও চাহিদার তুলনায় পণ্যের জোগান অনেক কম। এক্ষেত্রেও বিশেষ দৃষ্টি দেয়ার পাশাপাশি টিসিবিকে অধিকতর শক্তিশালী ও বিস্তৃতকরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। পণ্যমূল্য সহনীয় এবং অসাধু ব্যবসায়ী চক্রের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় এই সংস্থাটির অতীত কার্যক্রম অত্যন্ত প্রশংসনীয় হলেও বিগত কয়েক বছর ধরে এ সংস্থার সীমাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। টিসিবিকে শক্তিশালী করতে হলে নতুন কিছু উদ্যোগ নিতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া করতে হবে গতিশীল। বাজার অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি ক্ষেত্র। পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে মনিটরিং টিমের কার্যক্রমও আরো বিস্তৃত করা বাঞ্ছনীয়। বাজারকে নিয়ন্ত্রণে রাখা বা সাধারণ মানুষের আয়ত্তের মধ্যে রাখতে হলে দৃঢ় অঙ্গীকার প্রয়োজন। উচ্চারণসর্বস্ব অঙ্গীকার-প্রতিশ্রুতিতে এই পরিস্থিতির সুরাহা হবে না। দরকার সর্বত্র কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। অসাধু চক্রের কারসাজি বন্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই।