আগামী সংসদ নির্বাচনে নিজস্ব কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে : জেলা প্রশাসকদের নিয়োগের পরিকল্পনা ইসির : আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ

- আপডেট সময় : ০৫:১৮:১৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ মে ২০১৭ ৪৫১ বার পড়া হয়েছে
সমীকরণ ডেস্ক: আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করার পরিকল্পনা করছে ইসি। এ নিয়ে সম্প্রতি আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা এক বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চার নির্বাচন কমিশনারের কাছে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। তবে এরপরও কমিশন বিষয়টি আমলে না নিয়ে আগের সিদ্ধান্তেই অটল রয়েছে। ইসি কর্মকর্তাদের অভিযোগ, জনবল সংকটের কথা বলে ইসির যোগ্য কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে জাতীয় নির্বাচনে ডিসিদের রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। অথচ জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে অবদান রেখে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তারা প্রশংসাও কুড়িয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই বলেন, এই সরকারের আমলে যে নির্বাচন হয়েছে তা অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনেও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ সব কাজ করেন। ডিসিরা শুধু নেতৃত্ব দেন। তারপরও এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডিসিদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে ইসি। ইসি সূত্রে জানা যায়, এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনের সিদ্ধান্ত ছিল নিজস্ব জনবল থেকে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করা হবে। এরপর সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রকিব কমিশন ইসির জনবল দিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সর্বশেষ সরকারের ইচ্ছা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নিজস্ব জনবল দিয়ে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। তবে প্রথমবারের মতো গত কমিশন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কয়েকজন থানা নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দেন। বর্তমান কমিশন এখনো নিজস্ব কর্মকর্তাদের বিষয়ে কোনো চিন্তাভাবনা করেনি। বরং জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) দিয়েই নির্বাচন সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করছেন। এবিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারবেন না। এটা একটা মেজর ইস্যু। এবিষয়ে একাই কোনো মত দেয়া ঠিক হবে না। তিনি পাঁচজনের একজন মাত্র। তিনি বলেন, ইসি কর্মকর্তারা যে দাবিদাওয়া পেশ করেছেন সেগুলো তারা কমিশন বৈঠকে আলোচনা করবেন। তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে তাদের দাবি নিয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। আলোচনা হলে বলতে পারবেন কাদের রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা করা হবে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বেশি দিন বাকি নেই। তাই রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়ে বর্তমান কমিশনকে জানানো হয়েছে। কিন্তু তারা এখনো কোনো উত্তর দেয়নি। নিজস্ব কর্মকর্তাদের নিয়োগের বিষয়ে আশ্বস্তও করেনি। সার্বিক কার্যক্রমে মনে হচ্ছে এবারও জেলা প্রশাসকদের নিয়োগ দেয়া হবে। কর্মকর্তারা বলেন, দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জেলা প্রশাসক, ইউএনও, পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) অধিকাংশেরই কর্মস্থল নির্ধারিত হয় ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের (এমপি) পছন্দ ও সুপারিশে। এ কারণে এই কর্মকর্তারা কমিশনের চেয়ে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের অনুরোধ-নির্দেশই বেশি পালন করেন। ফলে নির্বাচনের ফলাফল প্রশ্নবিদ্ধ হয়। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের একাধিক সূত্র জানান, প্রতি জেলায় একজন রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং প্রতিটি সংসদীয় আসনে একজন করে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের মতো জনবল ইসির আছে। বর্তমানে ৬৪ জন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, প্রায় ৪৫০ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ছাড়াও ১০ জন আঞ্চলিক কর্মকর্তা রয়েছেন ইসির। এব্যাপারে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, তারা যখন দায়িত্বে ছিলেন তখন থেকেই কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের নির্বাচনের মূল দায়িত্বে রাখার কাজ শুরু হয়। এরপর তারা যখন দায়িত্ব ছেড়ে আসেন তখন যে জনবল ছিল তাতে অন্তত ৭০ ভাগ আসনে নিজস্ব কর্মকর্তা দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা সম্ভব ছিল। এখন জনবলের সংখ্যা আরও বেড়েছে। তিনি বলেন, অবশ্যই জাতীয় নির্বাচনে কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের মূল দায়িত্বে রাখা উচিত। সব আসনে না রাখলেও অন্তত কিছু আসনে রাখা দরকার। তাহলে পরবর্তীতে এ সংখ্যা আরও বাড়ানো সম্ভব হবে। তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য আর বেশি সময় নেই। বর্তমান কমিশনকে রিটার্নিং কর্মকর্তার বিষয়টি আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার।’