২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট চূড়ান্ত করতে আজ বৈঠকে বসছেন প্রধানমন্ত্রী ভ্যাটহার ১২শতাংশ, ছয় খাতে অব্যাহতির পরিকল্পনা

- আপডেট সময় : ০৫:২০:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ মে ২০১৭ ৩৬৯ বার পড়া হয়েছে
সমীকরণ ডেস্ক: মূল্য সংযোজন কর (মূসক) হার ১৫ শতাংশ থেকে সরে আসার ইঙ্গিত আগেই দিয়ে রেখেছেন অর্থমন্ত্রী। শেষ পর্যন্ত এ হার ১২ শতাংশ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হতে পারে প্রস্তাবিত দুটির পরিবর্তে ছয়টি খাতে। কমতে পারে করপোরেট করহারও। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নীতিনির্ধারকদের বৈঠকে বাজেটের আকারসহ এসব বিষয় চূড়ান্ত হবে আজ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাজেটের আকার হতে পারে ৪ লাখ ২৬৭ কোটি টাকা, চলতি বাজেটের চেয়ে যা প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি।
প্রধানমন্ত্রীর আজকের বৈঠকে বাজেটের আকার চূড়ান্ত করার চেয়েও বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে মূসক ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ সংশোধন এবং তার বাস্তবায়ন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ২০১২ সালে ভ্যাট আইন পাস হওয়ার পর তা বাস্তবায়নে বারবার পেছালেও এবার আর সে পথে হাঁটবে না সরকার। তবে শেষ মুহূর্তে আইনে কিছু পরিবর্তন আসছে। আগে পণ্যভেদে বহুস্তর ভ্যাট থাকলেও নতুন আইনে একটি সর্বজনীন হার নির্ধারণ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত ভ্যাটের সর্বজনীন হার ১২ শতাংশ হতে পারে। যদিও গত বুধবার অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে এ হার ১৩ শতাংশ ধরে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের রাজস্ব আহরণ প্রাক্কলন করেছে এনবিআর। আর ব্যবসায়ীরা এ হার ১০ শতাংশের নিচে রাখার দাবি জানিয়ে আসছেন।
বাজেটে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট অব্যাহতির ক্ষেত্রেও কিছু পরিবর্তন আসছে। সব পণ্য আমাদানিতে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের পরিবর্তে প্রায় সাড়ে ৫০০ পণ্যে তা বহাল রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরই মধ্যে এ সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্তও করেছে এনবিআর। এছাড়া নতুন আইনে দুটি খাত ছাড়া সব পণ্য ও সেবায় ১৫ শতাংশ ভ্যাট হার নির্ধারণ করা হয়েছিল। শেষ মুহূর্তের সংশোধনীতে দুই খাতের পরিবর্তে ভ্যাট অব্যাহতির সুযোগ পাচ্ছে ছয়টি খাতে। ২০১২ সালের ওই আইনে শুধু বাংলাদেশের বাইরে ভূমি হস্তান্তর ও রফতানি খাতকে ভ্যাটমুক্ত রাখা হয়েছিল। সংশোধন করে এতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতের কিছু সেবা এবং পণ্যকে যুক্ত করার পাশাপাশি সংবাদপত্র-সংশ্লিষ্ট শিল্পকে এ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। রফতানি খাতের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে প্রচ্ছন্ন রফতানি খাতকেও। তবে প্রচ্ছন্ন রফতানির ক্ষেত্রে রিফান্ড পদ্ধতিতে ভ্যাট অব্যাহতি নিতে হবে রফতানিকারকদের। ব্যবসায়ীদের ভ্যাটমুক্ত টার্নওভারের সীমাও ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ লাখ টাকা করা হচ্ছে। করপোরেট করের ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারে তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির সর্বোচ্চ করহার ২ শতাংশ কমানোর প্রস্তাবনা রয়েছে বলে এনবিআর সূত্র জানিয়েছে।
বাজেট চূড়ান্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আজকের বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, অর্থ সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানসহ সংস্থাটির তিন নীতি (আয়কর, মূসক ও শুল্ক) বিভাগের সদস্য, সচিব এবং বাজেট সমন্বয়কারী অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অংশ নেবেন।
জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। ব্যবসা, উন্নয়ন ও জনবান্ধব বাজেট প্রণয়নে কাজ করছে এনবিআর। বাজেট প্রণয়নে এরই মধ্যে ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদসহ সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে। ভ্যাট আইন নিয়ে কিছু কথা থাকলেও অর্থমন্ত্রী এরই মধ্যে আইন বাস্তবায়ন নিয়ে বেশকিছু ইঙ্গিত দিয়েছেন। একটি সুন্দর ও উন্নয়নবান্ধব বাজেট দেয়া যাবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
তবে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের আগে ভ্যাট হার ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার পাশাপাশি আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক বহাল রাখার সুস্পষ্ট ঘোষণা দাবি করেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রথম সহসভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যবসায়ীদের ওপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ কখনই ভালো নয়। বাজেটের আকারের সঙ্গে করের পরিধি ও করজাল বাড়াতে হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, ৪ লাখ কোটি টাকার মোট বাজেটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে ২ লাখ ৮১ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরের মাধ্যমে রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্য থাকছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৩৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে এ লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হচ্ছে এনবিআরকে।
চলতি অর্থবছর এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য ছিল ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকার। অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। তবে এরই মধ্যে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকার সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও চলতি অর্থবছরের এ সময়ে রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৯ দশমিক ২৬ শতাংশ।
জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৩৮ শতাংশ বা ৪২ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হচ্ছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এডিপির আকার হচ্ছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯৬ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা আসবে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে। বাকি টাকা পাওয়া যাবে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে।
নতুন এডিপিতে ৯০টি নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এতে মোট প্রকল্পের সংখ্যা দাঁড়াবে ১ হাজার ১৯৫। এর বাইরে মোট ১ হাজার ৭৯টি বিনিয়োগ প্রকল্প থাকবে।
২০১৬-১৭ অর্থবছরের এডিপির আকার ধরা হয় ১ লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। যদিও বরাবরের মতোই এবারো এডিপি বাস্তবায়নের হার সন্তোষজনক নয়। চলতি অর্থবছরের নয় মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ৪৫ শতাংশ। অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে ব্যয় হয়েছে উন্নয়ন বরাদ্দের ৫৩ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা