রাজনীতিতে ভোটের হাওয়া : সব দলেই চলছে পূর্বপ্রস্তুতি

- আপডেট সময় : ০৫:২০:২৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ মে ২০১৭ ৩১৯ বার পড়া হয়েছে
সমীকরণ ডেস্ক: শুরু হয়েছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি। ২০১৮ সালের শেষভাগে অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে ব্যাপক প্রতিযোগিতামূলক হবে এমনটা ধরে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমে গেছে রাজনৈতিক দলগুলো। নিজ নিজ কৌশলে ঘর গোছানোর পাশাপাশি জোর প্রস্তুতি চলছে ভোটযুদ্ধের। ভোটারদের কাছে টানতে নেওয়া হচ্ছে নানা কর্মসূচি। অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে উপযুক্ত প্রার্থী বাছাইয়ের কাজও এগিয়ে চলছে। নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তৃণমূলে তীক্ষ্ম নজর রাখছেন দলীয়প্রধান থেকে শুরু করে দলের নীতিনির্ধারণী মহল। সব মিলিয়ে সবাই এখন নির্বাচনমুখী। ভোটের চিন্তা মাথায় রেখে মিত্র বাড়ানোর পথে হাঁটছে সব দলই। জোট ভাঙছে। আবার নতুন জোট হচ্ছে। নানা কারণে দীর্ঘদিন দূরে থাকা নেতাদের দলে টানা হচ্ছে। তবে নির্বাচনী মাঠে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ বিএনপি থেকে অনেক এগিয়ে রয়েছে। এখন চলছে প্রচার ও ইশতেহার তৈরির কাজ। দলীয় মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও নেতাদের নির্বাচনী দিকনির্দেশনার পাশাপাশি সফরকালে দলীয় প্রতীক নৌকায় ভোট চাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা পাওয়ার পর বর্তমান সংসদ সদস্যসহ মনোনয়ন প্রত্যাশী সাড়ে ৩ হাজার প্রার্থী অভ্যন্তরীণ ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন তৃণমূলে। তারা একদিকে প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন ও সাফল্যের চিত্র তুলে ধরছেন, অন্যদিকে বিএনপির অপপ্রচারের জবাব দেওয়া শুরু করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এসব প্রচারণা চলছে।
অন্যদিকে, নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে নির্বাচনসহ রাজনীতির নানাদিক সংবলিত ‘ভিশন-২০৩০’ প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনশ আসনে নয়শ প্রার্থী প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) নির্বাচনী মাঠে ক্রমেই সরব হচ্ছে। বিশেষ করে জাপা চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ ৫৮ দলের সমন্বয়ে ‘সম্মিলিত জাতীয় জোট’ নামে বিশাল এক জোট করেছেন। পাশাপাশি দুই বড় জোটভুক্ত ও জোটের বাইরে অন্য রাজনৈতিক দল নিজেদের মতো করে নির্বাচনী প্রস্তুতির কাজ করছে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের পর ২৯ জানুয়ারি সংসদের অধিবেশন প্রথম বসে। এই হিসেবে ২৯ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংবিধানের ১২৩(৩) ধারা অনুসারেও মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলা রয়েছে।
নির্বাচনী প্রস্তুতিতে আওয়ামী লীগের তোড়জোড় বেশি দেখা যাচ্ছে। সর্বশেষ গত রবিবার সংসদীয় দলের বৈঠকেও প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এখন থেকেই নির্বাচনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামার জন্য দলের সংসদ সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী নির্বাচন কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে করিয়ে দিয়ে সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, জনপ্রিয়তা ছাড়া কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। এলাকায় দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তি করারও নির্দেশ দেন তিনি। এমনকি ওই বৈঠকে নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে স্বতন্ত্র ১১ সংসদ সদস্যকেও নতুন মনোনয়নের জন্য মনোযোগ দিয়ে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে তৃণমূলে জনপ্রিয়তা অন্যতম মাপকাঠি-হাইকমান্ডের কাছ থেকে এমন বক্তব্য আসায় নির্বাচনী প্রচারণায় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। যারা দীর্ঘদিন একজন আরেকজনের মুখ দেখতেন না, তারাও এখন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড জনগণের সামনে তুলে ধরছেন।
আগামী জুন মাসে দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযান ফের শুরু হবে। দলকে সুসংগঠিত করতে আগামী নভেম্বর মাসেই জেলায় জেলায় জনসংযোগে নামবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। সরকারের উন্নয়ন ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতা তুলে ধরার পাশাপাশি বিরোধী শক্তির নেতিবাচক কর্মকান্ড তুলে ধরবেন তিনি। সূত্র জানায়, দলে নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুতি চলছে। ২২ এপ্রিল থেকে জেলা নেতাদের দলীয় সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে ডেকে অভ্যন্তরীণ ভেদাভেদ মিটিয়ে ফেলতে বলা হচ্ছে। দলের সিনিয়র নেতারাও গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন। মনোনয়নের জন্য এখন থেকেই দেওয়া হচ্ছে সতর্কবার্তা। দলের তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং নির্দেশনা দিতে ২০ মে সব জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পাশাপাশি প্রচার, দফতর, তথ্য ও গবেষণা এবং উপ-প্রচার ও উপ-দফতর সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
সারাদেশে তিনশ’ আসনে সাড়ে ৩ হাজার প্রার্থী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। প্রতিটি আসনের জরিপ রিপোর্ট ও প্রকৃত চিত্র দলের হাইকমান্ডের কাছে আছে। নির্বাচনী এলাকায় কার কী অবস্থা, জনসমর্থন কার কেমন, আর কারা জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন- সব রিপোর্ট শেখ হাসিনার টেবিলে। মনোনয়ন দেওয়ার আগে আরো জরিপ চালাবেন শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামত প্রাধান্য পাবে। যারা জনগণের সমর্থন ধরে রাখতে পেয়েছেন তারাই আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন। সম্প্রতি আ.লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন এবারের নির্বাচনে আমি সবার দায়িত্ব নিতে পারবো না। তার সাফ কথা, জনবিচ্ছিন্ন কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না আগামী সংসদ নির্বাচনে। আ.লীগ দলীয় প্রধানের এমন বক্তব্য থেকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা আগামী সংসদ নির্বাচন হবে সব দলের অংশগ্রহণে অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ নির্বাচন।