কৃষকের স্বপ্ন ভাসছে বৃষ্টির পানিতে : দিশেহারা চাষী

- আপডেট সময় : ০৪:৩৫:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ মে ২০১৭ ৪৬৯ বার পড়া হয়েছে
আলমডাঙ্গায় বৈশাখী ঝড়ো হাওয়ায় ১৩ হাজার হেক্টর উঠতি বোরো ধান জমিতে হেলে পড়েছে
কৃষকের স্বপ্ন ভাসছে বৃষ্টির পানিতে : দিশেহারা চাষী
ভাংবাড়িয়া, হারদী, কুমারী, জেহালা, কালিদাসপুর, ডাউকি, জামজামি, খাসকরররা, নাগদাহসহ এই অঞ্চলের ফসল ঘরে তোলা নিয়ে সংশয়
আলমডাঙ্গা অফিস: গত কয়েক দিনে অব্যাহত ঝড়ো হাওয়া আর বৃষ্টিতে আলমডাঙ্গা উপজেলার প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর উঠতি বোরো ধান শতকরা প্রায় ৮০% ঝড়ো হাওয়ায় হেলে গেছে আর ২০% পানিতে ডুবে গেছে। এছাড়া অনেক বোরো ক্ষেতে কোমরের ওপরে পানি। এতে কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছে। মুজুরি ৩ শত থেকে ৫ শত টাকা বৃদ্ধি হয়েছে তবু মিলছে না উপযুক্ত লেবার। আবার অনেক স্থানে বাধ্য হয়ে কৃষক আধাপাকা ধান কাটছে। বর্ষণ আরো অব্যাহত থাকলে ক্ষেতের ধান ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিবে। গতকাল খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, ঝড়ো হাওয়া আর বৃষ্টিতে আলমডাঙ্গাসহ আশপাশের ভাংবাড়িয়া, হারদী, কুমারী, জেহালা, কালিদাসপুর, ডাউকি, জামজামি, খাসকরররা, নাগদাহসহ প্রায় সবকটি ইউনিয়নের ১৩ হাজার হেক্টর ফসলি জমির বোরো ঝড়ো হাওয়ায় হেলে গেছে বাকি ধান পানিতে ডুবে গেছে। উপজেলার ডাউকি ইউনিয়নের বাদেমাজু গ্রামের কৃষক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এক সাপ্তাহ আগেই ধান কাটার দরকার ছিল। কিন্তু ঝড়ো হাওয়ায় আর প্রবল বৃষ্টির পানিতে এখন সে আশা নিরাশায় পরিনত। আমার জমির সব ধান হেলে পড়েছে আবার ডুবে ও গেছে। এ অবস্থায় মহা বিপদে আছি।’ হাউসপুরের কৃষক শরিফ বাদেমাজুর আনিস, তারাচাদ, খিলাফত ও একই আশা ব্যক্ত করেন।
এ প্রতিবেদককে আরো জানিয়েছে, যে হারে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে বোরো ক্ষেতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষকের মাঝে হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে। বোরো ধান ঝড়ো হাওয়ায় তলিয়ে যাওয়ায় দু-এক দিনের মধ্যে পানি নামলে কৃষক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কাঙ্খিত ফলন পাবে না। অনেক ক্ষেত্রে ধান চিটা হয়ে যাবে। বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার কারণে অনেক হা-হুতোষ ও কান্না করছে। এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, কৃষিবিদ একেএম হাসিবুল হাসান জানান, গত কয়েক দিনের ঝড়ো হাওয়া আর টানা বৃষ্টিতে উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়নের নদী ও বিল এলাকার প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমির ধানের মধ্যে ২০% বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। এতে ফসলের আংশিক ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। সরকারি উদ্দ্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষদের আপাতত কোন সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে না। বৃষ্টি আরো হলে ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। তবে কৃষক ধান বিচালী করতে না পারলে ও আটি করার পর যে নাড়া বা নিচের অংশ রেখে যাচ্ছে সেটা জৈব সারের ঘাটতি পূরণ করবে। তিনি আরো জানান, আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী চলতি মাসের ২০ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত এ অবস্থা বিরাজ করবে অথবা এর চেয়ে আরো অবনতির আশংকা রয়েছে। এ বিষয়টি সামনে রেখে ২৮ জাতের বোরো ধান গুলো ৭৫-৮০% পেঁকে গেলেই কৃষকদের কেটে নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরো বলেন এসময় কৃষক-কৃষাণী মাঠে ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে। কৃষকরা অন্যান্য ধানের সাথে ব্রিধান ২৮, ২৯, ৫০, ৫৮, ৬০ ও ৬৭ চাষ করে অধিক লাভবান হওয়ার আশা ব্যক্ত করেন। ধানের বাম্পার ফলন হলেও এ মুহূর্তে লেবার সংকটের সাথে সাথে খরচ বেড়ে গেছে। তিনি এ ও বলেন কৃষকরা ঝড়ো হাওয়া আর বৃষ্টির কারণে বিচালী করতে না পারলে একদিকে যেমন গরুর খাদ্য নিয়ে সংকটে পড়লে সেটা কাঁদা করার সময় ভালভাবে পচলে তা মাটির উবর্রতা বৃদ্ধি হবে। কালিদাসপুরের এক কৃষক জানান বৃষ্টির কারণে বিচালী করা কষ্ট। এজন্য গোখাদ্য সংকট হতে পারে। সব মিলিয়ে বোরো ধান নিয়ে মহা বিপদেই আছি।