আসছে নির্বাচন, বাড়ছে শঙ্কা

- আপডেট সময় : ০৪:০৩:০৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩০ এপ্রিল ২০১৭ ৫০০ বার পড়া হয়েছে
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই ঘনীভূত হচ্ছে রাজনৈতিক সংকট। দেশে বড় দুই দলের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিপরীতমুখী বক্তব্য এবং অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা জনমনে তৈরি করছে সহিংস রাজনীতির আশঙ্কা। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনেই হবে। বিএনপি নির্বাচনে এলে ভালো, নতুবা বিএনপিকে বাদ দিয়েই নির্বাচন। অপরপক্ষে বিএনপির নেতারা বলছেন, বিএনপিকে বাদ দিয়ে এবার ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দেয়া হবে না। সরকার নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি মেনে না নিলে আন্দোলনই শেষ পথ। যদি শেষ পর্যন্ত অতীতের মতো উভয় দলের সমঝোতা না হয় তবে সংঘাত অনিবার্য। দেশে আবারও শুরু হতে পারে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অচলাবস্থা। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দল অপরিহার্য, কেননা জনগণের ভাগ্য উনয়নে রাজনীতির বিকল্প নেই। আমাদের দেশে সহনশীল গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। স্বাধীনতার ৪৬ বছরে বারবার ব্যাহত হয়েছে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা। দলগুলোর পারস্পরিক সন্দেহ, অবিশ্বাস আর বিভক্তির কারণে নির্বাচন সুষ্ঠু হলেও বিরূপ মন্তব্য শোনা যায়। কেউ বলে নির্বাচনে সূক্ষ কারচুপি হয়েছে, আবার কেউ বলে ডিজিটাল কারচুপি হয়েছে। বিগত জাতীয় নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করাতে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ আমরা দেখেছি। জাতিসংঘের প্রতিনিধি ফার্নান্ডো তারানকো উভয় দলকে সমঝোতায় আনতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই, তৎকালীন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও দাতা দেশগুলোর উদ্যোগও ব্যর্থ হতে দেখেছি। যাই হোক, সব সমঝোতার উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ায় এবং দুই দলের অনড় অবস্থানের কারণে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপিসহ অধিকাংশ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়েই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছিল। সংগত কারণেই ওই নির্বাচন ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। কেননা ভোটারবিহীন নির্বাচন ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪ সংসদ সদস্য নির্বাচিতের ঘটনা দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচিত হয়। অবশ্য সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংবিধান সংশোধন করে বর্তমান সরকার। তবে সংবিধানের দোহাই দিয়ে দেশের মানুষকে সহিংস রাজনীতির বলি করা কাম্য নয়। কেননা সংবিধান দেশের মানুষের জন্য, সংবিধানের জন্য দেশ ও মানুষ নয়। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না মর্মে বিএনপি জোট ওই নির্বাচন বর্জন করে প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছিল। সরকারের দমননীতির কারণে বিএনপি আজ বিপর্যস্ত। তবে জনপ্রিয়তার দিক থেকে বিএনপি এখনও বাংলাদেশের অন্যতম দল। সুতরাং নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি আদায়ে দলটি সংগঠিত হয়ে আন্দোলনের ডাক দিলে সংঘাত অনিবার্য। কোণঠাসা বিএনপিকে সাংগঠনিক শক্তিতে দুর্বল করে দেখার সুযোগ নেই। তাই বিএনপিকে একটি রাজনৈতিক স্পেস দিতে হবে। কেননা জনগণ ক্ষমতার লড়াইয়ে আর বলির পাঁঠা হতে চায় না। রঙ্গভরা বঙ্গদেশে রাজনৈতিক মঞ্চে নায়ক-নায়িকার পরিবর্তন হলেও জনগণের ভাগ্য পরিবর্তিত হয় না। সুতরাং জাতিকে সহিংস রাজনৈতিক কর্মকান্ড থেকে বাঁচাতে দেশের বড় দুই দলের নেতারা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন এবং সব দলের অংশগ্রহণে একটি শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে উদ্যোগ নেবেনÑ এমনটাই প্রত্যাশা দেশের আপামর মানুষের।