সড়কের ধুলাবালিতে চাকা পিছলে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহতের ঘটনায় স্থানীয়দের ক্ষোভ:সংস্কার না করায় চুয়াডাঙ্গার প্রধান সড়কটি এখন মরণ ফাঁদ! : দুর্ঘটনা আতঙ্কে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ পথচারীরা : নিরাপদে চলাচল নিশ্চিতের দাবি

- আপডেট সময় : ০৫:৪৫:০৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ এপ্রিল ২০১৭ ৩০৬ বার পড়া হয়েছে
উজ্জল মাসুদ/সোহেল সজীব: দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় চুয়াডাঙ্গা শহরের প্রধান সড়কটি বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে খানা-খন্দ এবং পিচ ফুলে ফেপে যাওয়ার কারণে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে চরম ভোগান্তির মুখে পড়ছে জেলাবাসী এবং বিভিন্ন স্থান থেকে আগত মানুষেরা। সড়কে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দূর্ঘটনা। সড়কের মাঝেমাঝে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত তৈরি হওয়ার কারণে যানবাহনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ অকেজো পড়ছে। অপরদিকে, সড়কের পিচ উঠে যাওয়ায় যানবাহন চলাচলের ফলে সড়কের ধুলাবালি উড়ে পথচারীদের চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। ধুলাবালিতে ভরা সড়কে গাড়ির গতিরোধ করার সময়ও চাকা পিছলে দুর্ঘটনা ঘটছে। গত রোববার চুয়াডাঙ্গা শহরের প্রধান ডাকঘরের সামনে ট্রাক অতিক্রম করার সময় ধুলাবালিতে মোটরসাইকেলের চাকা পিছলে ওই ট্রাকের নিচে পড়েন দৌলতদিয়াড়ের যুবক বাপ্পী। ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এছাড়া ছোট-খাটো দুর্ঘটনা তো ঘটছেই। চুয়াডাঙ্গার শহীদ আবুল কাশেম সড়ক অথবা চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়ক। জেলার প্রাণকেন্দ্র শহীদ হাসান চত্বর অর্থাৎ বড় বাজার চৌরাস্তার মোড় থেকে এই সড়কটি ঝিনাইদহের দিকে গেছে। জেলার সবচে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এটি। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চুয়াডাঙ্গা এবং মেহেরপুরের অসংখ্য যাত্রীবাহী বাস যাতায়াত করে। দুই জেলা থেকে ঢাকাগামী বেশকয়েকটি যাত্রীবাসও প্রতিনিয়ত যাতায়াত করছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে মেহেরপুরের মুজিবনগর কমপ্লেক্সের উদ্দেশ্যে আগত যানবাহনের বেশিরভাগই এই সড়ক দিয়েই যাতায়াত করে। শুধু তাই নয়, সিলেট, চট্টগ্রাম থেকে আসা মালবাহী ট্রাকও শহরের মধ্য দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। এদিকে, বর্ষায় পানি আর গ্রীষ্মে ধুলাবালি জমা সড়কের ওই সব গর্ত এরিয়ে চলেন সকল প্রকার যানবাহনের চালকরা। গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ভেঙে যাও বা অকেজো হওয়ার আশঙ্কায় মূলত তারা সড়কের খানা-খন্দ এরিয়ে চলাচল করেন। শহীদ আবুল কাশেম সড়ক চুয়াডাঙ্গার প্রধান সড়ক। এই সড়কের আশপাশ ঘিরে রয়েছে দোকানপাট, মার্কেট, বিপনিবিতান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন অফিস এবং প্রতিষ্ঠান। চুয়াডাঙ্গা জেলার চার উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তি মেহেরপুর জেলার মানুষের সমাগম ঘটে এই সড়কে। কর্মক্ষেত্র এবং দৈনন্দিন প্রয়োজনের তাগিদে চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রায় ১২ লাখ মানুষের মধ্যে প্রতিদিন অন্তত চার লাখ মানুষের চলাচল হয় শহীদ আবুল কাশেম সড়কে। সড়কের শহীদ হাসান চত্বরের পাশেই রয়েছে মাথাভাঙ্গা নদী। নদীর তীর ঘেঁষে অবস্থিত কাঁচাবাজারের হাট, পানের হাট এবং নিচের বাজার খ্যাত মুদি ও মনোহারী মালামালের দোকান। শহীদ আবুল কাশেম সড়কের দু ধারে বিভিন্ন বিপনি বিতান এবং প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে জেলার ঐতিহ্যবাহী পুরাতন গলি, আলী হোসেন সুপার মার্কেট, অভিজাত বিপনি সমবায় নিউ মার্কেট, প্রধান ডাকঘর, প্রিন্সপ্লাজা মার্কেট, জেলা শিল্পকলা একাডেমী, জেলার একমাত্র সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, পৌরসভা, টাউন ফুটবল মাঠ, মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্র, চুয়াডাঙ্গা একাডেমী বিদ্যালয়, বিভিন্ন ব্যাংক বীমাসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান। এই সড়কে অবস্থিত রেলবাজারের অদূরে রয়েছে চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন।শহীদ আবুল কাশেম সড়ক ধরে ঝিনাইদহে মুখে আরও আছে চুয়াডাঙ্গার বাস টার্মিনাল, ৬ বিজিবি’র সদর দপ্তর। চুয়াডাঙ্গার প্রধান এবং শহরের মধ্যে জনগুরুত্বপূর্ণ এই শহীদ আবুল কাশেম সড়কটি এখন প্রায় খালে পরিনত হয়েছে। বড় বাজার চৌরাস্তার মোড় থেকে নূরনগর মোড় পর্যন্ত সড়কে অসংখ্যা বড় বড় গর্ত আর উচু ঢিপি তৈরি হয়েছে। কোন কোন স্থানে পিচ ফুলে ফেপে সরু লাইন তৈরি হয়েছে। আবার কিছু কিছু স্থানে পিচ এবং খোয়া উঠে ধুলাবালিতে পরিনত হয়েছে। আর এই ধুলাবালির ওপর দিয়ে গাড়ি চলাচলের সময় ধুলাবালি উড়ে পথচারী এবং সাইকেল-মোটরসাইকেল আরোহীদের চোখে পড়ছে। ফলে প্রতিনিয়ত ছোট-খাট বিভিন্ন দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে জনসাধারণ। বিশেষ করে সড়কের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের কোমলমতি ছাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ছে বেশি। সড়কে খানা-খন্দগুলো পাশ কাটাতে গিয়ে অনেকসময় পথচারীদের মধ্যে চলে যাচ্ছে সড়কে চলাচল করা ছোট-বড় বিভিন্ন যানবাহন। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা একাডেমী বিদ্যালয়ের ছাত্ররা পায়ে হেঁটে এবং বাইসাইকেলযোগে যাতায়াতের সময়ও পড়ছে একই সমস্যায়। চুয়াডাঙ্গার আলী হোসেন সুপার মার্কেটের সামনে থেকে শুরু করে সমবায় নিউ মার্কেটের সামনে এবং প্রিন্সপ্লাজা মার্কেট পর্যন্ত সড়কটি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে পিচ ফুলে-ফেপে ঢীপি তৈরি হয়েছে। পৌরসভার সামনে এবং আশপাশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। রেলবাজারের অদূরে রেলগেট থেকে শুরু করে বাসটার্মিনাল পর্যন্ত সড়কটি প্রায় সম্পূর্ণ মাটির রাস্তার রুপ নিয়েছে। কিছু কিছু যায়গায় অবশ্য খোয়ার চিহ্ন রয়েছে। সড়কের এখান দিয়েও এমএ বারী বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা যাতায়াত করে। এছাড়া ৬ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তরের সামনে বেশ কয়েকটি গতিরোধকের আশপাশে পিচ ফুলে ফেপে উঠেছে। এর ফলে শহীদ আবুল কাশেম সড়কের দীঘ পথটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে অনেকে। আবার অনেকেই বরণ করছে পঙ্গুত্ব। গত রোববার চুয়াডাঙ্গা শহরতলীর দৌলতদিয়াড় দক্ষিণপাড়ার যুবক বাপ্পী নিহত হন। শহরের প্রধান ডাকঘরের সামনে ট্রাক অতিক্রম করার সময় সড়কের ধুলাবালিতে তার মোটরসাইকেলের চাকা পিছলে ওই ট্রাকের নিচে পড়ে যান। ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান তিনি। তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ নামকাওয়াস্তে ইট-বালি-খোয়া ও পিচ দিয়ে এই সড়কের খানা-খন্দ ভরাট করার মাস না পুঁজতেই আবারও একই পরিনতি হয় সড়কের। তবে মুজিবনগর প্রকল্পের কাজে বদরগঞ্জ বাজার থেকে সুবদিয়া পর্যন্ত সংস্কার করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গার প্রধান এবং শহরের ব্যস্ততম সড়কটি সংস্কারের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী এবং উন্নত সড়ক নির্মাণের দাবি জানিয়েছে জেলাবাসী এবং যাত্রী এবং সংশ্লিষ্ট সকলে। অন্তত এই সড়কের শহরের অংশটুকু সংস্কার করে পথচারী ও বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।