আলমডাঙ্গায় মৎস্য ব্যবসায়ীর বাড়িতে গুলি ও বোমা ফাটিয়ে চাঁদা দাবি : চাঁদার টাকা দেয়ার শেষ দিনে নৃশংসতা:কায়েতপাড়া বাওড় মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি জিয়াকে গুলি করে হত্যা: আটক-১

- আপডেট সময় : ০৬:২৮:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল ২০১৭ ৪০৫ বার পড়া হয়েছে
আলমডাঙ্গা অফিস/জামজামি প্রতিনিধি: আলমডাঙ্গার নারায়নকান্দি-কায়েতপাড়া বাওড় মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি জিয়াউর রহমানকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্ত্বরা। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাওড়ের পাশে একটি ধান ক্ষেত থেকে তার গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে জিয়ার লাশের ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। এঘটনায় রামদিয়া এলাকার মৎস্য খামারের ম্যানেজার সেলিমকে সন্দেহমূলকভাবে আটক করেছে পুলিশ। জানা যায়, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার খাসকররা ইউনিয়নের কায়েতপাড়া গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে জিয়াউর রহমান জিয়া দু’বছর আগে নারায়নকান্দি-কায়েতপাড়া বাওড়ের মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেই থেকে তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এর মেয়াদ ছিল আর মাত্র একমাস। প্রতিদিনের মতো গত মঙ্গলবার রাতে পাহারা দেয়ার জন্য বাওড়ে যান জিয়াউর। সারারাত নৌকা নিয়ে বাওড় পাহারা দেয়ার পর রাত ৩টার দিকে আকাশে মেঘ দেখে বাড়ি ফেরার জন্য নৌকা পাড়ে নেন। তার সঙ্গী একই গ্রামের তাইজদ্দিনের ছেলে মুনিয়ার, আনছারের ছেলে ইউনুছ, দুঃখি ম-লের ছেলে আব্দার, রামদিয়া গ্রামের জলিলের ছেলে সলক ও আনজেত সর্দারের ছেলে কবিরকে নিয়ে ডাঙ্গায় আসার পর তাদের নৌকা বেঁধে আসতে বলে একাই হাটা শুরু করেন জিয়া। আনুমানিক ৩৫/ ৪০ গজ এগুনোর পর আগে থেকে ওঁত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা জিয়ার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে পাশের ধান ক্ষেতের মধ্যে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে জিয়ার মাথায়, চোয়ালে এবং কোমরের পাজরে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে ধান ক্ষেতে জিয়ার লাশ ফেলে পালিয়ে যায় তারা। এসময় জিয়ার সঙ্গীরা গুলির শব্দ শুনে সামনের দিকে এগুতে গেলে তাদের দিকে আরও দুই রাউন্ড গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায় হত্যাকারীরা। শব্দ শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে জিয়ার গুলিবিদ্ধ লাশ দেখতে পান। খবর দেওয়া হয় আলমডাঙ্গা থানা পুলিশে। সকালে থানার অফিসার ইনচার্জ আকরাম হোসেন ঘটনাস্থলে এসে জিয়াউর রহমানের লাশ উদ্ধার করেন। এসময় ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করে পুলিশ। জিয়া হত্যাকা-ের সাথে জড়িত সন্দেহে একই গ্রামের ফজলু সর্দারের ছেলে রামদিয়া এলাকার মৎস্য খামারের ম্যানেজার সেলিমকে আটক করেছে পুলিশ। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম ও সিআইডি ইন্সপেক্টর ইব্রাহিম হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এদিকে নিহত জিয়াউর রহমান জিয়ার বড় ভাই শরিফুল ইসলাম জানান, মাসখানেক আগে চরমপন্থিরা জিয়ার বাড়ি লক্ষ করে দুই রাউন্ড গুলি ও বোমা ফাটিয়ে ৬ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। ৬ লক্ষ টাকার মধ্যে দেনদরবার করে চাঁদার পরিমাণ কমিয়ে নিতেও রাজী হয়েছিলো তারা। ওই চাঁদার টাকা দেওয়ার শেষ দিন ছিল গত মঙ্গলবার। ঠিক শেষ দিনের শেষ রাতে জিয়াকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এলাকাবাসী জানায়, সপ্তাহখানেক আগে পাশের গ্রামের হামিদুল শাহ’র মৎস্য প্রজেক্টের ম্যানেজার ফজলু সর্দারের ছেলে সেলিমের সাথে জিয়ার কথা কাটাকাটি হলে সেলিম জিয়াকে হুমকি-ধামকি দেয়। এছাড়া গত মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টায় ঝড়ু ম-লের ছেলে ওল্টু ও লাল্টুসহ কয়েকজনের সাথে মাছ দেয়া-নেয়া নিয়ে বাকবিত-া সৃষ্টি হয় তার। ওই সময়ও জিয়াকে জীবননাশের হুমকি দেয় বলে জানায় এলাকাবাসী। চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, নারায়নকান্দি-কায়েতপাড়া বিল-বাওড়ের মৎস্যজীবী সমিতি নিয়ে কোন্দল চলছিলো। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকা- হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। হত্যাকা-ের সাথে জড়িত সন্দেহে সেলিম নামের একজনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত হিসেবে বেশকয়েকজন ব্যক্তিকে সন্দেহের তালিকায় নেয়া হয়েছে। তদন্তপূর্বক তাদের সকলকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা হবে। তবে কাউকে পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হবে না। নিহত জিয়াউর রহমানের বাড়ি বাওড়ের পাশে হওয়ায় তিনি দীর্ঘদিন ধরেই বাওড়ের সাথে জড়িত। তিন সন্তানের জনক ছিলেন জিয়া। তার বড় মেয়ে মেরিনা খাতুন ১০ম শ্রেণির ছাত্রী, ছোট মেয়ে ফাতেমা ৯ম শ্রেণী ও ছেলে জিহাদ ৩য় শ্রেনীতে লেখা পড়া করে। জিয়ার মৃত্যুতে, স্ত্রী ও সন্তানসহ পরিবারের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। এলাকার মানুষ হয়ে পড়েছে আতঙ্কিত। উল্লেখ্য, গত ৫ বছর আগে এই বিলে ব্রিজের নিকট খাসকররার বিল্লালের ছেলে হেলালকে নির্মমভাবে হত্যা করে ফেলে রাখা হয়েছিল। এর ৫ বছর পর আবারও একই বিলে হত্যা করা হল জিয়াকে।