আইপিএল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ঘিরে চলছে বাজিকরদের : চুয়াডাঙ্গায় জমজমাট জুয়ার আসর

- আপডেট সময় : ০১:৫৬:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ এপ্রিল ২০১৭ ৪১০ বার পড়া হয়েছে
অঞ্জন দত্ত: চুয়াডাঙ্গায় ক্রিকেট খেলা নিয়ে চলছে জমজমাট জুয়া। বিশ্বকাপ, আইপিএল (ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ), ঘরোয়ালীগ, এমনকি দেশ-বিদেশের টেষ্ট খেলাগুলোকে ঘিরেও চলে বাজিকরদের রমরমা জুয়া। ক্রিকেট বাজি নামক এই জুয়ায় শক্তিশালী দল থেকে শুরু করে প্রতি বলেই চলে বাজি। এই জুয়ায় জড়িয়ে পড়েছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, যুবক ও ব্যবসায়ীরা। এমনকি পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও বাজি। জুয়ার স্রোতে টাকা ছাড়াও হারাচ্ছে ব্যবহৃত মোবাইল, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার ও জমি-জমা। আর এই জুয়ার টাকা যোগাতে অনেকে জড়িয়ে পড়ছে চুরি-ডাকাতি সহ নানা অপরাধে। জুয়াড়িরা টাকা ধার-দেনা করেছে বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে। খবর নিয়ে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলাসহ চারটি উপজেলার বেশিকয়েকটি ক্রিকেটকে ঘিরে চলছে লাখ লাখ টাকার জুয়া। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা শহরের স্বর্ণকার পট্টি ক্রিকেট জুয়াড় শীর্ষে। এছাড়া, সদর হাসপাতাল এলাকা, কেদারগঞ্জ বাজার, শান্তিপাড়া স্কুলমোড়, বেলগাছী মুসলিমপাড়া, ফার্মপাড়া, স্টেশন পট্টিসহ বেশকয়েকটি স্থানেই চলে এই জুয়াড় আসর। এসব এলাকার চিহ্নিত জুয়াড়ী ছাড়াও পরিচিত জনদের মধ্যেই চলে এই জুয়া। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কলেজ ছাত্র জানায়, ক্রিকেটে বাজি ধরার কারনে তার জীবনে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। তিনি নগদ টাকা ও তার ব্যবহৃত মোবাইল হারিয়েছে। তিনি আইপিএল ক্রিকেটে বাজি ধরতে বাবার পকেট থেকেও টাকা নিয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল এলাকার এক যুবক জানান, বছর দুয়েক আগে ক্রিকেট জুয়া খেলায় জিতে দুইটি মোবাইলফোন কিনেছিলেন তিনি। গতবছর জুয়া খেলায় তার কোন প্রকার লাভ না হওয়ায় গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি টাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আইপিএল নিয়ে জুয়ার আসর নতুন নয়। এই লিগ শুরুর পর থেকে বাজিকরদের একটা অংশ দেশের তরুন এবং যুবকদের টেনে নিয়ে যাচ্ছে এ ধরনের নেশায়। তাছাড়া বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাজিকররা প্রতিদিন আইপিএল ম্যাচের উপর বাজি ধরছেন। একদিনে কেউ কেউ লাখপতি হচ্ছেন আবার কেউ নিঃস্ব হয়ে সর্বশ্ব খোঁয়াচ্ছেন। জেতার গল্পটি এখানে সীমিত। ঢাকার বাইরে যেমন, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া অঞ্চলে এ ধরনের কর্মকান্ড বেশি হয়ে থাকে। গত এক সপ্তাহে সরেজমিনে এসব এলাকার লোকদের জড়িয়ে থাকার প্রমান পেয়েছে পুলিশ। গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষে মারাও গেছে কয়েকজন। তবুও প্রশাসন এক প্রকার অসহায়। কারণ, হঠাৎ করে অভিযান চালানোর পর অনেক জায়গায় ফের এ ধরনের আসর বসানো হচ্ছে। শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারতেও এই জুয়া ছড়িয়ে পড়েছে।
কিভাবে আইপিএল ম্যাচ নিয়ে জুয়া হয়:
যেমন মুস্তাফিজুর রহমান এক ওভারে কত রান দিবে কিংবা কয়টি উইকেট পাবে- তার উপর ধরা হয় বাজি। কেউ ১০০ টাকা বাজি ধরলে তাকে দেয়া হয় ২০০ টাকা। যদি বড় অংকের বাজি ধরা হয়, যেমন ১০ হাজার টাকার বিপরীতে একজন পাবেন ২০ হাজার টাকা, অর্থ্যাৎ যে টাকা বাজি ধরা হবে তার দ্বি-গুন পাবেন সেই ব্যক্তি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুকে এক বাজিকর সেই অভিজ্ঞতার কথাই বললেন, ‘আমরা ল্যাপটপের মাধ্যমে সব খেলোয়াড়ের বল, রান, উইকেট এগুলো ছোট ছোট ঘর তৈরি করি। এরপর আগ্রহী ব্যক্তির কাছ থেকে বাজির সম পরিমান টাকা নিয়ে অপেক্ষা করি। তিনি জিতলে আমরা তাকে ডাবল দিয়ে দেই। নয়তো পুরাটাই আমাদের থেকে যায়। তবে বেশিরভাগ সময় জুয়া জেতেন না ভুক্তভোগিরা। কিছুদিন আগে এক যুবক ২ লাখ খুঁইয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন।’ এই বাজিকরের কথাতেই একটা বিষয় পরিস্কার, ঢাকার আশে-পাশে এলাকায় ছড়িয়ে গেছে আইপিএল নিয়ে জুয়া। এ ধরনের আসরে মধ্যম আয়ের মানুষেরা এবং তাদের ছেলে-মেয়েরা জড়িয়ে পড়ছে বলে জানা যায়। এদিকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) এক পরিচালক একটি সূত্র মারফত জানালেন, ‘এটি বন্ধ হবার নয়। কারণ, এখানে ১ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জুয়া হয়। আর প্রশাসন এটার উৎপত্তিস্থলও খুঁজে পাবেনা। কারণ, এ ধরনের জুয়া প্রতিটি অলি-গলিতে হয়ে থাকে। যদিও গত এক সপ্তাহে পুলিশ বেশ কিছু জায়গা সনাক্ত করেছে। ইতোমধ্যে তাদের তৎপরতায় জুয়া একটু কম হচ্ছে বলে বেশিরভাগ এলাকাবাসী জানায়। ক্রিকেটের উপর বাজি ধরার প্রক্রিয়াটি অনেক পুরানো। এরজন্য জীবন দিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক হ্যানসি ক্রনিয়ে। ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ভারতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলসহ পাকিস্তানের অনেক তারকা ক্রিকেটার। এ ধরনের কর্মকান্ড বন্ধ করতে হলে ক্রিকেটারদের মানসিকতা পরিবর্তন দরকার। তবে আন্তর্জাতিকভাবে ক্রিকেট নিয়ে জুয়ার পরিধি বাড়লেও এই রোগে ছাত্র-ছাত্রীরা নিঃস্ব হয়নি। যা হয়েছে আইপিএল নিয়ে জুয়া ধরতে গিয়ে। চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ জানিয়েছে, বিষয়টি বেশ কয়েকবার শুনেও যথেষ্ঠ প্রমান না থাকায় তাদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। আলামত এবং প্রমাণ পাওয়া গেলে দোষীদের আইনের আওতায় নেয়া হবে।