বর্ষবরণ : মঙ্গল আলোক ছড়িয়ে গেছে সবখানে

- আপডেট সময় : ০৫:২৭:৪৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ এপ্রিল ২০১৭ ৩৪২ বার পড়া হয়েছে
বিপুল উত্সাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন। ঘটনাবহুল একটি বছরের বিদায়ের মধ্য দিয়ে সূচিত হয়েছে একটি নতুন বছর ১৪২৪। শুভকামনার শুভসূচনা হয়েছে ভোরে নতুন সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে। বাঙালি উত্সব-ঋদ্ধ জাতি। আমাদের আছে রাজনৈতিক উত্সব, আছে ধর্মীয় উত্সব। বাংলা বর্ষবরণ উত্সব হচ্ছে একমাত্র সার্বজনীন উত্সব। এই উত্সবে সব ধর্মের বাঙালি অপার আনন্দ নিয়ে অংশগ্রহণ করে থাকে। শুক্রবার পয়লা বৈশাখ সেই সত্যের সৌন্দর্য আবারও পরিলক্ষিত হয়েছে। ঢাকা মহানগরী পরিণত হয়েছিল উত্সবের নগরীতে। সব বয়সী মানুষ ঘরে-বাইরে আনন্দে মেতে উঠেছিল। শুধু ঢাকা মহানগরী নয়, দেশজুড়ে বৈশাখী উত্সবে লাল-সাদা শাড়ি, কপালে টিপ, খোঁপায় ফুলের মালা নিয়ে বর্ণিল সাজে সেজেছে নারীরা, পুরুষের পোশাকেও ছিল ঐতিহ্যের নবায়ন, শিশুরা মেতেছে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে। এবারের বর্ষবরণ ছিল কয়েকটি কারণে উল্লেখযোগ্য। মঙ্গলের বার্তা নিয়ে প্রতি বছর বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন ঢাকার চারুকলা অনুষদ থেকে যে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়, এ বছর এটি ইউনেস্কোর (জাতিসংঘের শিশু ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা) স্বীকৃতি লাভ করেছে। এই স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে গ্রহণীয় হয়েছে যে, সাংস্কৃতিক মিছিল বা শোভাযাত্রার ইতিহাসে এটি বিরল ঘটনা। এই শোভাযাত্রার ধারাবাহিকতা দেশের অনেক স্থানে এবং বিদেশেও পরিলক্ষিত হয়েছে। এই শোভাযাত্রা শুধু একটি সাধারণ শোভাযাত্রা নয়, এর মধ্যে প্রতিফলিত হয় বাংলা ও বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য, কৃষ্টি। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়ার প্রেরণা পাওয়া যায় এই শোভাযাত্রা থেকে উচ্চারিত ধ্বনি-প্রতিধ্বনি থেকে। অন্তর্গত চেতনার শুভ প্রত্যাশার বহিঃপ্রকাশ ঘটে এই মঙ্গল শোভাযাত্রায়। এই নগরীতে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রমনার বটমূলে সুরের মূর্ছনায় সূচিত হয় বর্ষবরণের। ছায়ানটের শুভ সকালের এই অনুষ্ঠান হয়ে উঠেছে বাঙালির হূদয়াবেগ ও প্রত্যাশা প্রকাশের মাধ্যম। নগরীর মানুষের সকালের গন্তব্য হয়ে ওঠে রমনার বটমূল। ছায়ানট এ বছরই বর্ষবরণের পঞ্চাশ বছর অতিক্রম করল। এটি বাঙালির সাংস্কৃতিক চেতনার একটি উজ্জ্বল অধ্যায়। বর্ষবরণের সঙ্গে আমাদের ‘হালখাতার’ নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। অর্থাত্ বাংলা নতুন বছরের সূচনার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্পর্ক আদিকাল থেকেই ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য গতি সঞ্চার করেছে পয়লা বৈশাখের উত্সবাদি। পয়লা বৈশাখের উত্সবকেন্দ্রিক বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলো বেশ চাঙ্গা হয়ে ওঠে এই সময়। নববর্ষ বরণ শুধু বাহ্যিক আনুষ্ঠানিকতার বিষয় নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে চেতনাগত ঐশ্বর্য। এবারের নববর্ষ বরণের সব অনুষ্ঠানেই ছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনার বহিঃপ্রকাশ। শুভ বোধের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িকতা ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে দেশবাসী মঙ্গলের শুভ বারতার জয় ঘোষণা করেছেন। এই চেতনার আলাকরেখা ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র।