সত্য ও মঙ্গলের প্রত্যাশায় অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সারাদেশে রঙের উৎসবে বর্ষবরণ : আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পর এবারই প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা : চুয়াডাঙ্গার চাঁদমারী মাঠে সাত দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার উদ্বোধন

- আপডেট সময় : ০৫:১৫:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ এপ্রিল ২০১৭ ৫৬৮ বার পড়া হয়েছে
সমীকরণ ডেস্ক: নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে সারাদেশে পালিত হলো বর্ষবরণের বর্ণিল উৎসব। প্রচ- গরম উপেক্ষা করে সব বয়সের মানুষ মেতে ওঠে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ উদযাপনে। শুভ ও কল্যাণকে স্বাগত জানিয়ে সারাদেশে সকাল থেকে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শোভাযাত্রায় ছিল প্রাণের উন্মাদনা। অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে ধর্ম-বর্ণ সব কিছুর ঊর্ধে উঠে মানুষ আনন্দে আত্মহারা হয়েছে। ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে রাজধানীর রমনার বটমূলে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়াটের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। ‘আলোকের এই ঝরনাধারায় ধুইয়ে দাও’ এই আবাহনের মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয় নতুন বছরকে। এবছর ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানটি জাতীয় জীবনে বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। কেননা, সংগঠনটি ১৯৬৭ সালে রমনার বটমূলে প্রথম নববর্ষ উদযাপন করে। তাই এবার এর ৫০ বছর পূর্ণ হল। এদিকে, রাজধানীতে বর্ষবরণের অপর একটি ঐতিহ্য ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বের হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে। গতবছর এই শোভাযাত্রাটি অর্জন করে ইউনেস্কোর বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সম্মান। এছাড়াও, রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় ‘হাজারও কণ্ঠে বর্ষবরণ’ অনুষ্ঠান। রবীন্দ্র সরোবরে আয়োজন করা হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠান।
চুয়াডাঙ্গায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্যদিয়ে বর্ষবরণের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে শহরের চাঁদমারী মাঠে সাতদিনব্যপী বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
মুকুল ফৌজ’র লোক উৎসব: শুক্রবার সকাল ৬টায় ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও মুকুল ফৌজ’র যৌথ উদ্যোগে বিদ্যালয় চত্বরে বর্ণিল লোক সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করা হয়। মুকুল ফৌজ’র অন্যতম সদস্য নুঝাত পারভীনের প্রানবন্ত সঞ্চালনায় বাঙালি সাংস্কৃতিকে তুলে ধরে বোশেখী গান, নৃত্য ও কবিতা আবৃত্তি করে শিশুরা। উপস্থিত সকলের মাঝে মুড়ি, মিঠাই আর বাতাসা বিতরণ করা হয়। মুকুল ফৌজ’র সভাপতি রাশেদা হাসনাওয়ারার নিমন্ত্রণে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস। আরো উপস্থিত ছিলেন পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক আনজুমান আরা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দেব প্রসাদ পাল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আব্দুর রাজ্জাক, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. জসিম উদদিন প্রমূখ।
বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা: বাংলা নববর্ষে দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি কামনা করে বাংলা নববর্ষ ১৪২৪ বঙ্গাব্দ উদযাপন উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বের হওয়া এ শোভাযাত্রায় নেতৃত্বদেন জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস। মঙ্গল শোভাযাত্রাটি শহর প্রদক্ষিণ শেষে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় বাঙালি জাতির বিভিন্ন কৃষ্টি-কালচার, ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরে বিভিন্ন সাজ-পোষাকে বয়ো-বৃদ্ধ, শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
সরকারি কলেজে বর্ষবরণ: পরে সরকারি কলেজ মুক্ত মঞ্চে বর্ষবরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসময় জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস, পুলিশ সুপা মো. নিজাম উদ্দিন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সেখ সামসুল আবেদিন খোকন, পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপুসহ জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব, শিক্ষক-ছাত্র ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
জেলা প্রশাসকের পান্তাভোজ: পহেলা বৈশাখ বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের বাসভবনে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যাক্তিত্বদের নিয়ে পান্তাভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দেব প্রসাদ পালের আমন্ত্রণে জেলা প্রশাসকের বাঙালিপনায় অংশনেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সেখ সামসুল আবেদিন খোকন, পুলিশ সুপার মো. নিজাম উদ্দিন, পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু, স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক আনজুমান আরা, জেলা আ.লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক মুন্সী আলমগীর হান্নান, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর কামরুজ্জামান, প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর সিদ্দিকুর রহমান, পৌর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলীসহ আইনজীবি, সামাজিক- রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ আয়োজনে সামিল হন। পরে আলমডাঙ্গা কলা কেন্দ্রের শিশুদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন অতিথিরা।
জেলা পরিষদের আয়োজন: বাঙালি জাতির পুরান ঐতিহ্য পহেলা বৈশাখে পান্তাভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদ। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সেখ সামসুল আবেদিন খোকনের নিমন্ত্রণে অনুষ্ঠানে অংশনেন পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন, জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান কবিরসহ জেলা পরিষদের সদস্য, আ.লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সমমনা দলের নেতৃবৃন্দ।
চাঁদমারী মাঠে পৌর বৈশাখী মেলা: ১৪২২ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিপুল উৎসাহ এবং উদ্দীপনার সাথে উদ্বোধন করা হয় পৌর বৈশাখী মেলার। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টায় ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় খেলার (চাঁদ মারী) মাঠে ১০দিনব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সেখ সামসুল আবেদিন খোকন, পুলিশ সুপার মো. নিজাম উদ্দিন, পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু প্রমূখ। বিকেল থেকে মেলায় দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় জানান দেয় মেলার নান্দনিকতার। এবার মেলায় হরেক রকমের খেলনা, নাগরদোলা, মিষ্টির দোকান, কাপড়ের দোকান, চটপটির দোকান, র্যাফেল ড্র, ঐতিহ্যবাহী পানের দোকান ও কসমেটিক্স প্রসাধনী সামগ্রির দোকানিরা পসরা সাজিয়ে বসেছেন।
চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিব’র বর্ষবরণ: বর্ষবরণ উপলক্ষে ৬ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন চুয়াডাঙ্গা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান ও বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। শুক্রবার সকাল ১০টায় সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় চত্বরে আয়োজিত মেলার উদ্বোধন করেন চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবি’র পরিচালক লে. কর্ণেল আমির মজিদ। দিনব্যাপী সর্বসাধারনের ব্যাপক অংশগ্রহণ ও উপস্থিতিতে মেলা প্রাঙ্গন ছিল সরগরম। মেলায় পান্তাভাত, দেশীয় প্রজাতির মাছ ভাজা, আলুভর্তা ও শুটকী ভর্তা, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, বাইস্কপ, গার্মেন্টস আইটেম, বিভিন্ন প্রকার দেশীয় পিঠা এবং শরবতের স্টলসহ বিভিন্ন প্রকার স্টল ছিল। মেলায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি, বানর খেলা, সাপ খেলা এবং নাগরদোলাও ছিল। এছাড়াও বিকেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
উন্নতমানের খাবার পরিবেশন: এ ছাড়াও নববর্ষের আনন্দ সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে সদর হাসপাতাল, সরকারি শিশু পরিবার ও জেল খানায় উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হয়। সাথে সাথে বাংলা নববর্ষ বরণের নানা আয়োজন করা হয়।
সরোজগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের আয়োজনে শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে বিদ্যালয়ের সভাপতি জুয়েল রানার সভাপতিত্বে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আকবর আলী, অভিভাবক সদস্য জিল্লুর রহমান, আব্দুর মান্নান, শিউলী আক্তার। শিক্ষক প্রতিনিধি আব্দুর জব্বার, শ্রী বিশ্বনাথ ঘোষ, গোলজার হোসেন প্রমূখ। পরে ছাত্রছাত্রীরদের মাঝে মিষ্টি বিতরণের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্ত করা হয়।
তিতুদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়ের খাড়াগোদা ও তিতুদহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল ৭টার দিকে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে শোভাযাত্রা বের হয়। উপস্থিত ছিলেন তিতুদহ ইউপি চেয়ারম্যান জনাব আকতার হোসেন, ইউনিয়ন আ,লীগ সভাপতি জনাব খবির উদ্দীন বিশ্বাস, ৭নং ওয়ার্ড আওয়া লীগের সেক্রেটারি মেসকাত হোসেন, আ,লীগ নেতা জামির হোসেন, সাদেক আলী, মোস্তবার মিয়া, প্রধান শিক্ষক মশিউর রহমান, সিনিয়র শিক্ষক বশির আহম্মেদ, জুনায়েদ প্রমূখ। সার্বিক সহোযোগিতায় ছিলেন বিদ্যালয়ের সভাপতি হাফিজুর রহমান। এদিকে, তিতুদহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তানভির আলম আলোসহ বিদ্যালয়ে সকল শিক্ষক এবং সভাপতির উপস্থিতিতে নববর্ষ উদযাপন করা হয়।
আলমডাঙ্গা অফিস জানিয়েছে, আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শুক্রবার সকালে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বর থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে শেষ হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেন–উপজেলা চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দীন, ইউএনও আজাদ জাহান, পৌর মেয়র হাসান কাদির গনু, থানার অফিসার ইনচার্জ আকরাম হোসেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মহিদুল ইসলাম খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আতিয়ার রহমান, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কাজী খালেদুর রহমান অরুন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শামীম আরা, ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, আবু সাঈদ পিন্টু, আব্দুল হালিম, কাউছার আহমেদ বাবলু, আমিরুল ইসলাম মন্টু, দারুস সালাম, মাসুদ পারভেজ, নুরুল ইসলাম, উপজেলা মৎস্য অফিসার মঈনুল ইসলাম, সমাজসেবা অফিসার আবু তালেব প্রমুখ। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যান, রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। উপজেলার বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন রঙ-বেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন, মুখোশ, হরেক রকম পুতুল ও কাগজ দিয়ে তৈরি প্রতিকৃতি, পালকিতে নববধু, মাছ ধরার নানা প্রাচীন যন্ত্র নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। আলমডাঙ্গা কলাকেন্দ্র, মুক্তিযোদ্ধা সাংস্কৃতিক সংসদ, মাটি সাংস্কৃতিক একাডেমিসহ বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন। একই সময়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ পান্তা পরিবেশন করা হয়।
দর্শনা অফিস জানিয়েছে, ‘নন্দিত বৈশাখ গর্বিত বাঙ্গালী’- শ্লোগানকে ধারণ করে দর্শনার অনির্বাণ থিয়েটারের আয়োজনে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে দর্শনা কলেজ মাঠ থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পেশাজীবি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকসহ প্রায় ২২টি সংগঠন এ শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। এদের মধ্যে দর্শনা সরকারী কলেজ, মেমনগর বিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কাষ্টমস সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্যামপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, নান্দনিক দর্শনা, দক্ষিন চাঁদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিন চাঁদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দর্শনা গণ-উন্নয়ন গন্থাগার, চটকাতলা যুব সংঘ, জাগো দর্শনা, পুরাতন বাজার দোকান মালিক সমিতি, রামনগর মাথাভাঙ্গা যুব সংঘ, আস্থা দর্শনা, ওয়েভ ফাউন্ডেশন, জেডিসি ক্লাব, দর্শনা শান্তিপাড়া শিশু সংগঠন, সজিব সংগঠন, র্ফোড দর্শনা, দর্শনা হরিজন সম্প্রদায়, দর্শনা যুব সংগঠন এবং আরআর ইলেক্ট্রনিক্স। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে দর্শনা সরকারী কলেজ শহীদ মিনারে বৈশাখীর গানে গানে একটি বর্ষবরণ চলতে থাকে।
অপরদিকে দর্শনা শিল্পনগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পেশাজীবি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বর্ণিল সাজে একে একে উপস্থিত হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। এরপর দর্শনা শহর প্রদক্ষিণ করে কেরুজ ফুটবল মাঠে গিয়ে শেষ হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রাটি পরিচালনা করেন দর্শনা অনির্বাণ থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন। বিকেলে বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা ও সন্ধ্যায় বাংলার পুরাতন দিনের গানের আসর পরিবেশিত হয়। সন্ধ্যায় কবিতা আবৃতি করেন অনির্বাণ থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, সদস্য মুন্সি কবির ও রচনা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন লোক শিল্পী রতœা, মাম্পি, জ্যোতি, নেহা, পলিন, ইশি, রিমন, সায়েম, আলিফ, মিতি, সুপ্তি, আলিফ, অবন্তি, প্রভাত, রাণী শাহ, আজাদী ও লাবলী।
দর্শনা পাকৃষ্ণপুর প্রত্যয় যুব সংঘের উদ্যোগে পহেলা বৈশাখ ওয়াটার ভলিবল খেলার আয়োজন করা হয়। গ্রামের সাকিল হোসেনের পুকুরের পানিতে দু-পাশে গোল পোষ্ট করে দু-দলের ২২ জন খেলোয়াড়ের অংশগ্রহণে এ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ ৯০ মিনিটের খেলায় ৭-৭ গোলে ড্র হয়। খেলোয়াড়দের মধ্যে ছিলেন কিতাব আলী, সাকিল হোসেন, মখলেছুর রহমান, সাইফুল ইসলাম, ইকরামুল হক, শরিফুল ইসলাম, জাহিদুল ইসলাম, সুমন, সাজন, তমাল, জুয়েল, সাদ্দাম, রাসেল, বাবন, সাগর, বিপ্লব, মোতালেব প্রমূখ।
জীবননগর অফিস জানিয়েছে, উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে ইউএনও সেলিম রেজার সভাপতিত্বে উপজেলা পরিষদ থেকে একটি শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে একই স্থানে একটি আলোচনা সভা ও সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী সকল বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বৈশাখী সাজে সাজানো হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন উপজেলা চেয়ারম্যান আবু. মো. আ. লতিফ অমল। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হাজী হাফিজুর রহমান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আয়েসা সুলতানা লাকী। উপজেলা পরিষদের সকল দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মিরা উপস্থিত ছিলেন।
হাসাদাহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জীবননগরের হাসাদাহ ইউনিয়ন যুবলীগের পক্ষ থেকে শুক্রবার সকাল ৯টায় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শোভাযাত্রা বের হয়ে হাসাদাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে শেষ হয়। যুবলীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যন জুম্মাত আলী মন্ডলের নের্তৃত্বে শোভাযাত্রায় অংশ নেন- ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম রবি বিশ্বাস, যুবলীগের সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন আলী, সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম মুকুল, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, যুবলীগ নেতা আজিবর রহমান প্রমূখ। এছাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা অংশ নেয়।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে একটি মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ সামসূজ্জোহা পার্কে গিয়ে শেষ হয়। মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন দোদুলের নেতৃত্বে শোভাযাত্রায় অংশ নেন- জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ, পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বশির আহমেদ, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মেজবাহুল হক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মঈনুল হাসান, সহকারী পুলিশ সুপার আহসান হাবিব, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাড. মিয়াজান আলী, আব্দুস সালাম বাবলু বিশ্বাস, আশকার আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. শাহিন ইব্রাহিম, আইন বিষয়ক সম্পাদক ও জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. পল্লব ভট্রাচার্যসহ জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক, সামাজিক বিভিন্ন সংগঠন।
মেহেরপুর ফ্রেন্ডস ৮৭’র উদ্যোগে শুক্রবার দিনব্যাপি বর্ষবরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেহেরপুর ফ্রেন্ডস ৮৭’র সদস্য প্রধান উপদেষ্টা সংসদ সদস্য অধ্যাপক ফরহাদ হোসেনের উপস্থিতি বর্ষবরণ অনুষ্ঠান প্রানবন্ত হয়ে উঠে। শুরুতেই অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন এমপি’র শুভ জন্মদিনের কেক কাটার মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ফ্রেন্ডস ৮৭’র পরিবারের সদস্যদের খেলাধুলা ও র্যাফেল ড্রসহ বিভিন্ন বিনোদনমূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এছাড়াও জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত সদস্য ফ্রেন্ডস ৮৭’র সদস্য খাজা মঈন উদ্দিন লিটন ও বুড়িপোতা ইউপির নবনির্বাচিত সদস্য শরিফুল ইসলামকে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা করা হয়। ফ্রেন্ডস ৮৭’র সভাপতি আমিনুল ইসলাম খোকনের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, উপদেষ্টা সদস্য এ্যাডভোকেট কামরুল হাসান, নুরুল ইসলাম, সহসভাপতি মোঃ আতিক, যুগ্ম সম্পাদক ফজলুল হক মন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ সানোয়ার হোসেন, দপ্তর সম্পাদক সহিদুল ইসলাম, বিপ্লব, মান্নান, আক্কাস আলী, শহিদুল ইসলাম, খায়রুল ইসলাম ও পাপ্পু প্রমূখ।
বারাদী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুরের আমঝুপিতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বর্ষবরণ উদযাপন করেছে। শুক্রবার সকালে আমঝুপি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আমঝুপি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, আমঝুপি আলিম মাদ্রাসা, গন্ধরাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আমঝুপি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আমঝুপি সরকারি প্রাথমিক বালক বিদ্যালয় বর্ষবরণ উপলক্ষে পৃথক শোভাযাত্রা বের হয়। আমঝুপি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন আহমদ (চুন্নু) শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন। অপরদিকে, মোমিনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়ে বিএডিসি র্ফাম হয়ে বিদ্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। উপস্থিত ছিলেন প্রধান শিক্ষক মীর মহাবুব রহমান খোকন, সহকারি শিক্ষক তারিক মুসা, সালমা পারভীন, কিবরিয়া, সিদ্দিকুর রহমান, কামাল প্রমূখ।
মুজিবনগর অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে মুজিবনগর উপজেলা পরিষদ থেকে ইউএনও হেমায়েত উদ্দিনের নেতৃত্বে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে শেষ হয়। উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে শোভাযাত্রায় অংশ নেন- মুজিবনগর থানার অফিসার ইনচার্জ কাজী কামাল হোসেন, বাগোয়ান ইউপি চেয়ারম্যান আয়ূব হোসেন, দারিয়াপুর ইউপি চেয়ারম্যান তৈফিকুল, মোনখালী ইউপি চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান, মুজিবনগর উপজেলা পরিষদের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারি,ন এবং স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। এরপর উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে পান্তা পরিবেশনের পর মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
গাংনী অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম জামাল আহমেদের নেতৃত্বে শোভাযাত্রাটি সারা শহর ঘুরে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে গিয়ে শেষ হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক, গাংনী থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম শফিকুল আলম, বিশিষ্ট সংগঠক সিরাজুল ইসলাম। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। উপজেলা প্রশাসন ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন পান্তা-ইলিশের আয়োজন করে।
অন্যদিকে, সাহারবাটী গ্রামের আয়োজনে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাহারবাটী চারচারা প্রাঙ্গনে ২ দিন ব্যাপী বর্ষবরণ উৎসব ও লোকজ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। নববর্ষ উদযাপন পরিষদের আহবায়ক তামজিদুর রহমান মুক্তির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন। অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ছিলেন মেহেরপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গোলাম রসূল। প্রধান আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক অধ্যাপক রফিকুর রশীদ রিজভী, গাংনী ইউএনও (ভারপ্রাপ্ত) এসএম জামাল আহমেদ। এদিকে, রাইপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হাজি আলফাজ উদ্দীন।
ঝিনাইদহ অফিস জানিয়েছে, ঝিনাইদহের হরিণাকু-ু উপজেলার লালনশাহ কলেজ কর্তৃপক্ষের উদ্দ্যোগে বর্ষ বরণ উৎসব পালিত হয়। এ উপলক্ষ্যে কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে অধ্যক্ষ আতিয়ার রহমানের নেতৃত্বে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। শোভা যাত্রায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন নিদর্শন লক্ষ্য করা যায়। শোভা যাত্রা শেষে কলেজ চত্ত্বরে পান্তা পরিবেশণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। দিন ব্যাপী এ সব অনুষ্ঠানে কলেজের অধ্যক্ষ আতিয়ার রহমান, অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষিকা, ছাত্র ছাত্রী বৃন্দ সহ প্রচুর সংখ্যক সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ লক্ষ করা যায়। এছাড়াও র্বষবরণ অনুষ্ঠান উপলক্ষে সকাল থেকেই কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে ব্যপক উৎসাহ ও উদ্দিপনা লক্ষ্য করা যায়।