সত্য ও মঙ্গলের প্রত্যাশায় সবাইকে : বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা

- আপডেট সময় : ০৫:১৯:৩৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল ২০১৭ ৩৪০ বার পড়া হয়েছে
বাংলা নববর্ষ আজ। চির নতুনের ডাকে পহেলা বৈশাখের এই ভোরে জেগে উঠবে নগর-গ্রাম-মফস্বল। সারাবছর ধরে জমে ওঠা গ্লানি ও জীর্ণতাকে দূর করে ধরণীকে শূচি করার প্রত্যয়ে চৈত্রের খরতাপে শান্তির পরশ নিয়ে এসেছে নববর্ষের নতুন মাস বৈশাখ। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে এক সময় অগ্রহায়ন ছিল সূচনা মাস। অগ্রহায়ন ফসল কাটার মাস। আর বৈশাখ বীজ বপনের মাস। রবিশস্য ঘরে উঠিয়ে আবার বীজ বোনার কাজ। ফসলের গন্ধভরা স্বর্গসুখের মাস ছেড়ে খরতাপের অমলিন দিনে এসে ঠাঁই নিয়েছে নতুন বছরের সূচনা। বাংলার আদিপ্রাণ কৃষককূল কালের বিবর্তনে এই সত্যকে মেনে নিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বৈশাখকে আবাহন করে লিখেছেন: “মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা, অগ্নি¯œানে শুচি হোক ধরা।” এই দুটি লাইনের ম্যধদিয়ে বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাওয়ার মন্ত্র উচ্চারণ করেছেন। এই মন্ত্র ধুলি মলিন জরাগ্রস্থ পৃথিবীর বিপরীত চেতনা-যে চেতনা জীবনকে পরিশুদ্ধ করে। যে বোধ জীবনের অবমাননা ঘটায়, তাকে দূর করে জীবনের দর্শনিক সুন্দরকে প্রতিষ্ঠার আহবান জানিয়েছেন কবি গুরু। এই সত্য ও মঙ্গলের সাধনায় বাংলা নববর্ষে সব বাঙ্গালীর ভেতরে থাকুক-এই আহবান ধ্বনিত হোক প্রতিটি বাঙ্গালী, তথা সারা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষীদের মনে। ঋতু পরিক্রমায় বৈশাখ আসবে-এটাই প্রকৃতির নিয়ম। বৈশাখের সঙ্গে আসে কালবৈশাখী ঝড়ও। বৈশাখে থাকে গ্রীষ্মের দাবদাহ। তারপরও বৈশাখের জন্য মানুষের আবাহন কেন? ১লা বৈশাখে পুরানো সব ধুয়েমুছে ফেলে নতুন করে শুরু করে জীবনের যাবতীয় লেনদেন। সাংস্কৃতি প্রিয় জাতি আয়োজন করে বৈশাখী মেলা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জমজমাট আয়োজন মানুষ রাতভর উপভোগ করে। মানুষ দিনটিকে অন্যরকম করে তাকে পূর্ণতার পথে নিয়ে যাওয়ার ডাক দেয়। এ হোক- অসংখ্য মানুষের বুকের ভেতর থাকে, যাঁরা সমাজকে সুস্থ্য রাখার চিন্তায় নিজেদের কর্মসূচী নির্ধারণ করে। বৈশাখের দাবদাহ শুধু পোড়ায় না, তাকে সুন্দর ¯িœগ্ধও করে। জীবনের যা কিছু প্রয়োজন রবীন্দ্রনাথ বৈশাখের প্রকৃতির মাঝে তাকে অনুভব করেছেন। প্রকৃতির এমন বিচিত্র রূপেই শুধূ ধরণীর সৌন্দর্য নয়। মানুষের জীবনে বোধের বহুরূপ অভিধাও এই সৌন্দর্য। বৈশাখকে অন্তরে টেনে নিয়ে বাঙ্গালীর নতুন বছরের যাত্রা শুরু হয়। বাঙ্গালী অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে জানে, রুখে দাঁড়ায়ও। নতুন বছরের আগমনে বাঙ্গালী আবার জেগে উঠুক তার নিজস্ব মহিমায়-এটাই আজ ব্রত হোক বৈশাখের শুরুতে।