চুয়াডাঙ্গায় ব্লাষ্ট মহামারীতে ২০ হাজার বিঘা জমির ধান চিটা : হতাশ কৃষক

- আপডেট সময় : ০৫:১৩:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল ২০১৭ ৩৯০ বার পড়া হয়েছে
এমএ মামুন: আর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ব্রি-২৮ ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শুরু হবে। কৃষকের ঘরে উঠবে সারা বছরের খাবার। আশা ছিল, ধান বিক্রি করে মেটাবে মহাজনের দেনা পাওনা। কিন্তুু মহামারী ব্লাষ্ট রোগ কৃষকদের সব আশাভঙ্গের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলায় আবাদী প্রায় ২০ হাজার বিঘা জমির ধান চিটা হয়ে গেছে। তবে, কৃষি বিভাগের হিসাবে ৫শ’ বিঘা । কৃষকরা তাদের অন্যান্য মাঠের জমির ধান নিয়ে এখন চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। জেলার সদরের বেগমপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মাঠে দূর থেকে দেখলে মনে হয় জমির ধান পেকে গেছে। কিন্ত কাছ থেকে দেখলে বোঝা যায় ধানের প্রতিটি শীষ শুকিয়ে গেছে এবং ধানে দানা নেই, সবই চিটা। দোস্ত গ্রামের মাঠে যেয়ে কথা হয় কৃষক আবু ছালেহর সাথে তিনি জানান, তার ৩ বিঘা ব্লাষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি এবার তার জমি থেকে খরচের টাকাটাও উঠাতে পারবেন না। কথা হয় কৃষ্টপুর গ্রামের জিল্লুর রহমানের সাথে। তিনিও জানান, তার ৭ বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়েছে। অনুরুপভাবে নুর ইসলামের ৪বিঘা, হালিমের ৩বিঘা কুন্দিপুর গ্রামের নাসিরের সাড়ে ৪ বিঘা, ইব্রাহিমের ৩ বিঘা জমির ধান ব্লাষ্ট রোগে চিটা হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা জানান, ধার দেনা করে ধানের আবাদ করায় আজ তারা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তারা এবার মোটা অংকের দেনায় জড়িয়ে যাবে। সেইসাথে ঘরে খাবারের ধানও উঠবে না। কৃষকরা বিঘা প্রতি ফলনের আশা করেছিল ২০ থেকে ২২ মন। ব্লাষ্ট রোগের কারণে সেখানে উৎপাদন হবে মাত্র ৪ থেকে ৫ মন। এরফলে এবছর কৃষকদের খরচের টাকাটাও ঘরে আসবে না । তারা জড়িয়ে যাবে ঋণের জালে। তবে, কৃষিবিদরা কৃষকদের শান্ত¦না ও বাকী ধান রক্ষায় পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু কৃষকরা সে পরামর্শে কোন ভরসা পাচ্ছে না। গতবছর চুয়াডাঙ্গায় মহামারী ব্লাষ্ট রোগে গম নষ্ট হবার পর এবছর চুয়াডাঙ্গা, আলমডাঙ্গা ও জীবননগর উপজেলার মাঠে ব্রি-২৮ ধান ব্লাষ্ট রোগে ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া যে সকল ধানে এখনো ব্লাষ্ট আক্রান্ত হয়নি সে ধানগুলিও ব্লাষ্ট রোগ থেকে রক্ষা করতে পারবে কিনা কৃষকরা শঙ্কায় আছে । কৃষকদের অভিযোগ, কৃষি উপ-সহকারীরা আগাম জানালে হয়তো এই মহামারী ব্লাষ্ট রোগের হাত থেকে ধান রক্ষা করা যেত । তবে, কৃষিবিদরা জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গায় আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে ধানে ব্লাষ্ট রোগ দেখা দিয়েছে। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নির্মল কুমার দে জানান, মহামারী ব্লাষ্ট রোগের কারণে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৩০০’ বিঘা, আলমডাঙ্গায় ১০৫, দামুড়হুদায় ৭৫ বিঘা ও জীবননগরে ৩০ বিঘাসহ প্রায় ৫১০ বিঘা জমির ধান ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু সরজমিনে দেখা যায় ব্লাষ্ট রোগে প্রায় ২৫ হাজার বিঘা জমির ধান ক্ষতি হয়েছে। এ জেলায় সব থেকে বেশী ক্ষতি হয়েছে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নে। চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্ত সুত্র জানায়, চলতি বছর জেলায় ব্রি-২৮ ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় প্রায় ৩৪ হাজার হেষ্টর এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় প্রতি হেক্টরে সাড়ে ৩ মেট্রিক টনের বেশী । কিন্তু নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২শ’ হেক্টর জমিতে অতিরিক্ত আবাদ হয়েছে। এ বিষয়ে কৃষিবিদদের দাবী আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে এই রোগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ব্লাষ্ট একটি ছত্রাক জনিত রোগ। যেকোনো ফসলে এই রোগ তখনি হয় যখন রাতে ঠান্ডা, দিনে গরম এবং সকালে শিশির পড়ে। শিশির পড়াতে তা বাতাসের অধিক আর্দ্রতায় এ রোগের প্রকোপ বাড়ায়।