দীর্ঘ ১৮ বছর পর চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষক লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে হুইপ ছেলুন জোয়ার্দ্দার : সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের মফস্বলমুখী হতে হবে: সম্মেলনে সেøাগান আর উত্তেজনা : নতুন কমিটি ঘোষণা ছাড়াই মঞ্চ ছাড়লেন নেতারা

- আপডেট সময় : ০৫:১১:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ এপ্রিল ২০১৭ ৩৯৪ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক: বহু প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে দীর্ঘ ১৮ বছর পর ব্যাপক জাঁকজমক পূর্ণ আয়োজন আর উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ কৃষক লীগ, চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা ১১টায় শ্রীমন্ত টাউন হল সংলগ্ন জেলা শিল্পকলা একাডেমীর মুক্ত মঞ্চে এ আয়োজন করা হয়। প্রথম অধিবেশনের শুরুতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অতিথিরা। জেলা কৃষক লীগের সভাপতি হাজী মো. আজিজুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চুয়াডঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চুয়াডঙ্গা- ১ আসনের সাংসদ জাতীয় সংসদের হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন-এমপি। সম্মেলনের উদ্বোধক ছিলেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহা. মোতাহার হোসেন মোল্লা। বিশেষ অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা আ. লীগের সহসভাপতি ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সাংসদ আলহাজ্ব আলী আজগার টগর, সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি শরীফ আশরাফ আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবীদ সমীর চন্দ, সাংগঠনিক সম্পাদক আতিকুল হক আতিক, দপ্তর সম্পাদক নাজমুল ইসলাম পানু, কৃষিপণ্য ও ফসল বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবীদ আশরাফুল ইসলাম স্বপন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এড. মোশাররফ হোসেন।
সম্মেলনের প্রধান অতিথি হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন তার বক্তব্যে বলেন, কৃষকেরা জোটবদ্ধ হলে ও তাদেরকে সু-সংগঠিত করা হলে কৃষক লীগই হবে দেশের সব চাইতে বড় সংগঠন। কারণ দেশের শতকরা ৭৫% মানুষ কৃষক। কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্যেশ্যে হুইপ ছেলুন বলেন, ঢাকায় বসে থাকলে চলবে না-মফস্বলে আসুন, নেতাকর্মীদের সাথে গ্রাম-গঞ্জে ঘুরে সংগঠনকে গড়ে তুলুন। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এ সংগঠনকে গতিশীল করে তুলতে শুধু সম্মেলন করে চলে গেলেই হবে না। নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আ.লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করে তুলতে হবে। দলছুট নেতা-কর্মীদের উদ্যেশ্যে প্রধান অতিথি বলেন, দলে আর হাইব্রিড বাঁড়িয়ে লাভ নেই, এমনিতেই প্রচুর নেতা-কর্মী আছে। যারা সারা বছর খোঁজ রাখেনা শুধু সম্মেলন আর কেন্দ্রীয় নেতাদের মিটিংয়ে এসে হাজিরাদেন। এ সমস্ত কাউয়া আর বসন্তের কোকিলদের দলে কোনো স্থান নাই। তিনি আরো বলেন, দলের কেন্দ্রীয় এক তালিকায় দেখা গেছে, পিঠ বাঁচানোর জন্য জামাত-শিবির ও বিএনপি থেকে প্রায় ৩০ হাজার নেতা-কর্মী আ.লীগে অনুপ্রবেশ করেছে, এদের থেকে সতর্ক থাকুন। সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি আবু সূফীয়ান বিল্লাল, দামুড়হুদা উপজেলা শাখার সভাপতি মোহাম্মদ রফিক প্রমূখ। প্রথম অধিবেশনের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত করেন জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি মো. মাসুদুজ্জামান লিটু, গীতা পাঠ করেন সনাতন ধর্ম “স্কন” সংগঠনের অন্যতম সদস্য শ্রী অশিত কুমার সাহা (অকুল চৈতন্য দাস), পবিত্র বাইবেল থেকে পাঠ করেন জেলা কৃষক লীগের প্রচার সম্পাদক জেমস নিমু ম-ল। আয়োজিত সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন পাঠ করেন জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. তছিরুল আলম মালিক ডিউক। সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী আশাদুল হক বিশ্বাস, সহ-সভাপতি খুস্তার জামিল, আওরঙ্গজেব মোল্লা টিপু, সহ-সভাপতি ও জজ কোর্টের জিপি এড. মোল্লা আব্দুর রশিদ, মোশাররফ হোসেন মিয়া ও নাসির উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সী আলমগীর হান্নান, সাংগঠনিক সম্পাদক ও জজ কোর্টের পিপি এড. শামসুজ্জোহা বিশ্বাস ও এড. আব্দুল মালেক, দপ্তর সম্পাদক এড. আবু তালেব বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক ফেরদৌস ওয়ারা সুন্না, সহ প্রচার সম্পাদক শওকত আলী বিশ্বাস, দামুড়হুদা থানা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মনজু, জেলা মহিলা আ.লীগের সভানেত্রী ও সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কোহিনুর বেগম, জেলা আ.লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বারের সভাপতি এড. নুরুল ইসলাম, পৌর আ.লীগের সভাপতি হাজী জহুরুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, সাধারণ সম্পাদক হাজী আশাবুল হক মালিক লন্টু, সদর উপজেলা আ.লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান নান্নু, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি আফজালুল হক, জেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক আরেফিন আলম রঞ্জু, যুবলীগ নেতা আব্দুল কাদের, সিরাজুল ইসলাম আসমান, নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার, আব্দুর রশিদ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিকসহ আওয়ামী লীগ’র অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সম্মেলনের ২য় অধিবেশনে কৃষক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব মোহা: মোতাহার হোসেন মোল্লার সভাপতিত্বে কাউন্সিল অধিবেশনের শুরুতেই জেলা কৃষক লীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। পরে চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নাম প্রস্তাব করা হয়। এ সময় পদপ্রার্থীর পক্ষে প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীরা সভাপতি পদে জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি হাজী আজিজুল হক ও গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দারের নাম প্রস্তাব করেন। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে আব্দুর রশিদ, মো. রফিকুল ইসলাম ও আসাদুজ্জামান কবিরের নাম প্রস্তাব করেন। তবে তাৎক্ষণিক কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি নির্বাচন বোর্ডের সদস্যরা। নাম প্রস্তাবের সময় উভয় পক্ষ একে অন্যকে কটূক্তি করলে উত্তেজনা দেখা দেয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় নেতারা আধঘণ্টা পর কমিটি ঘোষণা দেওয়ার কথা বলে মঞ্চ ছাড়েন। তাঁরা সার্কিট হাউসে চলে যান। কিন্তু বিকেল চারটা পেরোলেও ফেরেননি। ফলে একে একে সবাই সম্মেলনস্থান ছেড়ে চলে যান। দলের একটি বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জানা যায়, নাম প্রস্তাবকারীরা তাদের পছন্দের প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করেছেন। তারা সভাপতি পদে ২জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৩জনের নাম হাতে পেয়েছেন। যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত নেতাদেরকেই নির্বাচিত করে কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে।